ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঢাকাসহ সারাদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ৮ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৫:২৪, ৮ মার্চ ২০২১
ঢাকাসহ সারাদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু

একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের শপথের একটি দৃশ্য (সংগৃহীত)

একাত্তরের ৮ মার্চ ছিল সোমবার। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ৮ মার্চ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব। 

রেডিও-টেলিভিশনের কর্মীদের দাবির মুখে ৮ তারিখ সকাল ৮টায় রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করতে বাধ্য করা হয়। এরপর রেডিও-টিভির সাধারণ কর্মীরা কাজে যোগ দেয়।

এদিন রাওয়ালপিন্ডিতে ৮ উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার মিটিং করেন ভুট্টো। এ খবরও দ্রুত পেয়ে যান বঙ্গবন্ধু। এ সময় ঢাকায় এবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘কারোরই আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয়।’

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ঘোষণা ও ৮ মার্চে বঙ্গবন্ধুর বিবৃতির পর ইয়াহিয়া খান আলোচনার চেয়ে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেন। এ সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাওয়ালপিন্ডিতে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিংয়ে পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞের প্ল্যান চূড়ান্ত করেন।

এদিকে পল্টনে সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধুকে বিনা শর্তে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন মওলানা ভাসানী।  অপরদিকে নতুন গভর্নর টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের দ্রুত দেশত্যাগের নির্দেশ দেন। এ সময়ে বিদেশি সাংবাদিকরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে থাকতে চাইলে প্রথমে আপত্তি ও পরে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।

কার্যত তখন নীলনকশার জাল সব ঠিকঠাক, বাকি শুধু গণহত্যার অভিযান। আর এ খবরও দ্রুত পেয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু। পরিস্থিতি বিবেচনায়, এইদিন বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশনা দেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সকল কার্যাবলীর ওপর বিশেষ নজর রাখা শুরু হয়।

অপরদিকে ৭ মার্চের ভাষণে সংগ্রামী জনতার উদ্দেশে দেওয়া নির্দেশ ১০টি নির্দেশ আজ থেকে হুবহু অনুসৃত হতে থাকে। মার্চের ৮ তারিখ থেকে একটানা ২৫ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে বাংলাদেশ।

এইদিন বৃটেনে প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনের পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

৮ মার্চ সম্পর্কে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে লিখেন- ‘কাল রাতে রেডিও বন্ধ থাকার পর আজ সকাল থেকে আবার চালু হয়েছে। সকাল সাড়ে আটটায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা প্রচারিত হল।’

অন্যদিকে সেদিন ছিল পবিত্র আশুরার দিন। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বলা হয়- ‘আজ আশুরা। হোসেনী দালান থেকে মহররমের মিছিল বেরিয়ে এতক্ষণে আজিমপুর গোরস্থানের রাস্তায় গিয়ে উঠেছে মনে হয়। আজিমপুর কলোনির এক নম্বর বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে মহররমের মিছিল গোরস্থানে যায়, এই রাস্তার ওপরই মহররমের মেলা বসে। প্রতি বছর আমরা মেলায় যাই বাচ্চাদের নিয়ে।  বাচ্চারা তাদের মনমতো খেলনা কেনে, আমরা বটি, দা, বেলুনপিড়ি ইত্যাদি গেরস্থালির জিনিস কিনি।

কিন্তু এ বছর ছেলেদেরও মিছিল বা মেলা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই, আমাদের তো নেই-ই। গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলার ঘরে ঘরেই কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কত মা ফাতেমার বুকের মানিক, কত বিবি সখিনার নওজোয়ান স্বামী পথে-প্রান্তরে গুলি খেয়ে ঢলে পড়ছে-বাংলার ঘরে ঘরে এখন প্রতিদিনই আশুরার হাহাকার, মর্সিয়ার মাতম। কিন্তু কবি যে বলেছেন, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া, ক্রন্দন চাহি না’, তাই বুঝি বাংলার দুর্দান্ত দামাল ছেলেরা ‘ত্যাগ চাই’ বলে ঘরের নিশ্চিন্ত আরাম ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়েছে।’

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়