জাতিসংঘ কর্মীসহ ২৬৫ বিদেশি নাগরিকের ঢাকা ত্যাগ
শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম
একাত্তরে বাংলাদেশের জন্য নিউইয়র্কে মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের কনসার্ট
একাত্তরের ১৩ মার্চ ছিল শনিবার। দিনটি ছিল অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ষষ্ঠ দিবস।
আজো বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সরকারি, আধাসরকারি অফিস-আদালত কর্মচারীদের অনুপস্থিতির জন্য বন্ধ থাকে। বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যায়। স্বাধিকার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শোক এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে আজও সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান, বাসভবন এবং যানবাহনে কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে।
এদিন সিএ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, নৌ-পরিবহন, ডক, পাটকল এবং সুতাকলের শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) প্রাঙ্গণে পরিষদের সকল আঞ্চলিক শাখার আহ্বায়ক, সম্পাদক ও সদস্যদের সভা আহ্বান করে।
উত্তাল পরিস্থিতিতে শঙ্কিত হয়ে আজ ৪৫ জাতিসংঘ কর্মীসহ ২৬৫ বিদেশি নাগরিক ঢাকা ত্যাগ করেন। ক্রমান্বয়ে বিদেশিদের দেশত্যাগ ছিল ঢাকায় আসন্ন গণহত্যার ইঙ্গিতবহ।
অপরদিকে সমগ্র পাকিস্তানে ভুট্টোর পিপলস পার্টি এবং কাইয়ুম মুসলিম লীগ ব্যতীত অন্য সব রাজনৈতিক দল এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যালঘু দলগুলোর এক যৌথ সভা আজ লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যালঘু দলসমূহের সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, ‘বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে পারস্পরিক অবিশ্বাস। আমরা মনে করি যে, অবিলম্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় গিয়ে দ্রুত সকল প্রকার অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও মতদ্বৈততা দূর করে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে এনে, আন্তরিকভাবে ও মুক্ত মনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে ৪টি শর্ত মেনে নিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আলোচনা শুরু করবে। অবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করার যথাযথ পরিবেশ তৈরি করবে।’
সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে বসতে বাধ্য করেছিলেন এ সভায় গৃহীত প্রস্তাবটি এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
দৃশ্যত, সমগ্র পাকিস্তানে মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর একচ্ছত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাকিস্তানের সংহতি রক্ষাকল্পে খোদ পশ্চিম পাকিস্তানে দাবি ওঠে প্রেসিডেন্ট যেন অবিলম্বে ঢাকা যান। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সব দাবি নিঃশর্তভাবে মেনে নেন।
এসব সত্ত্বেও সামরিক সরকার গণমতকে উপেক্ষা করে নয়া এক সামরিক ফরমান জারি করে। ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দপ্তর হতে ১১৫নং সামরিক আদেশে বলা হয়, ‘প্রতিরক্ষা খাতের বেতনভুক বেসামরিক কর্মচারীদের আগামী ১৫ মার্চ সকালের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। যারা উক্ত তারিখের মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হবেন, তাদের ছাঁটাই করা হবে এবং পলাতক হিসেবে তাদেরকে সামরিক আদালতে বিচার করাও হতে পারে।’
দেশরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- এমইএস, কম্বাইন্ড ওয়ার্কশপ, অস্ত্রাগার, সিএমএ, এলএও, সিএসডি, বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার সকল বেসামরিক কর্মচারী, যারা প্রতিরক্ষা খাত হতে বেতন পেয়ে থাকেন তাদের ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে স্ব স্ব বিভাগের নিকট কাজে যোগদানের ব্যাপারে রিপোর্ট করতে হবে। যদি কেউ এ সময়ের মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হন তবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে এবং পলাতক হিসেবে সামরিক আদালতে বিচার করে সামরিক আইনের ২৫নং বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হবে।’
জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক কর্তৃক জারি করা এ ফরমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় গর্জে উঠে বলেন, ‘সামরিক আইনের আর একটি অধ্যাদেশ জারি হয়েছে জানতে পেরে আমি বিস্মিত হয়েছি। আজ যখন সামরিক আইন প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলার সমগ্র গণমানুষের প্রচন্ড দাবির কথা আমরা ঘোষণা করেছি, তখন নতুন করে এরূপ আদেশ জারি করা জনসাধারণকে উস্কানিদানেরই শামিল। এ ধরনের আদেশ যারা জারি করছেন তাদের এ সত্যটি উপলব্ধি করা উচিত যে, আজ জনসাধারণ তাদের ইস্পাত কঠিন সঙ্কল্পে ঐক্যবদ্ধ। এ ধরনের ভীতি প্রদর্শনের মুখে তারা কিছুতেই নতি স্বীকার করবে না। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি এ ধরনের তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’
ঢাকা/টিপু
- ৯ মাস আগে লটারির টিকিট নিয়ে বিরোধে যুবক খুন
- ৩ বছর আগে যেমন ছিল একাত্তরের ২৬ মার্চ
- ৩ বছর আগে ২৫ মার্চ : সেই ভয়াল দিনের ঘটনাক্রম
- ৩ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্রের বিশাল চালান নিয়ে সোয়াত জাহাজ
- ৩ বছর আগে ঢাকা হয়ে ওঠে পতাকার নগরী
- ৩ বছর আগে প্রাক্তন সৈনিকদের রক্তশপথ
- ৩ বছর আগে ঢাকায় ভুট্টো-ইয়াহিয়ার গোপন বৈঠক
- ৩ বছর আগে বিভিন্ন স্থানে বিহারিদের সঙ্গে বাঙালীর তুমুল সংঘর্ষ
- ৩ বছর আগে প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ
- ৩ বছর আগে ৩২ নম্বরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল
- ৩ বছর আগে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক
- ৩ বছর আগে নতুন সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে উত্তাল সারাদেশ
- ৩ বছর আগে একগুচ্ছ নাটক নির্মাণ করবে বিটিভি
- ৩ বছর আগে ঢাকা নগরী যেন কালো পতাকার শহর
- ৩ বছর আগে ঢাকাসহ সারাদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু
- ৩ বছর আগে যেমন ছিল ৭ মার্চের দৃশ্যপট
- ৩ বছর আগে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি ইয়াহিয়ার
- ৩ বছর আগে উত্তাল মার্চ: টঙ্গীর বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলি
- ৩ বছর আগে ৪ মার্চ ছিল লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন
- ৩ বছর আগে পতাকা মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহঙ্কার
- ৩ বছর আগে স্মৃতিতে অগ্নিঝরা মার্চ: আজ পতাকা দিবস
- ৩ বছর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বার্তা নিয়ে এলো আগুন ঝরা মার্চ
আরো পড়ুন