ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

আজ হেমন্ত দিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১৬ জুন ২০২৩   আপডেট: ১১:৪৭, ১৬ জুন ২০২৩
আজ হেমন্ত দিন

‘আমি দূর হতে তোমাকেই দেখেছি’, ‘পাল্কি চলরে’, ‘রানার রানার’, ‘আজ দু’জনার দুটি পথ’, ‘এই বালুকা বেলায়’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, ‘এই রাত তোমার আমার’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ এসব গান আজও আকুল করে সংগীত শ্রোতাদের মন।

হৃদয় ছোঁয়া এমন অসংখ্য গানের জন্য হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এখনও সংগীত শ্রোতা মনে জীবন্ত। হেমন্তের ১০৪তম জন্মদিন আজ। ১৯২০ সালের ১৬ জুন তিনি ভারতের বারাণসীতে জন্মেছিলেন। 

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গানের ছন্দে মাতিয়ে রেখেছিলেন কালজয়ী এই শিল্পী। তার সুরের ঢেউ এসে আঘাত হানে লাগে এই বাংলায়। সেই থেকে হেমন্ত যেন এখনো বাংলার। এখনো বাংলার নদী জলে ভাসে তার সুর।

পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকেই হেমন্ত নিজেকে সম্ভাবনাময় শিল্পী এবং কম্পোজার হিসেবে সবার নজর কাড়েন। সেসময় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছিলেন।

তিনি উত্তম কুমারের বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকেই যেন উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। পরবর্তী সময়ে এই জুটি পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা। তার প্লে-ব্যাক সংগীত জীবন শুরু হয় ১৯৪১ সালে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর থেকেই তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার একজন অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হন। ফলে দর্শক-শ্রোতা একের পর এক কালজয়ী বাংলা গান উপহার পেয়েছেন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবির মধ্যে রয়েছে হারানো সুর, দ্বীপ জ্বেলে যাই, নীল আকাশের নীচে, স্বরলিপি, শেষ পর্যন্ত, কুহক, দুই ভাই, সপ্তপদী, রাগ অনুরাগ, ফুলেশ্বরী এবং দাদার কীর্তি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় হেমন্ত আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে গান করেছিলেন। তিনি সেসময় বিভিন্ন ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়াতেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, তিনি চ্যারিটি শো করে এর অর্থ তুলে দিয়েছিলেন উদ্বাস্তু শিবিরের সাহায্যার্থে। তার গাওয়া ‘মা গো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে’ গানটি দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের।

‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে এই গানটি শুনিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আর যেন গানের কথাকে সত্যি প্রমাণ করেই ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জীবনাবসান ঘটে এই মহান শিল্পীর। 

হেমন্ত গেয়েছিলেন ‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো, আমিও নদীর মতো আসবো না ফিরে আর আসবো না ফিরে কোনোদিন’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’, ‘তোমাদের আসরে আজ’, ‘তোমার ভুবনে মাগো এত পাপ’, ‘বন্ধু তোমার পথের সাথীকে’, ‘মুছে যাওয়া দিনগুলো আমায় যে পিছু ডাকে’, ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’, ‘মনে রবে কিনা রবে আমারে’, ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরিষ শাখায়’, ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে’, ‘শুধু তোমার বাণী’, ‘আমার রাত ফুরালো’, ‘সুরের আকাশে’, ‘কোনো এক গায়ের বধূর কাহিনী’- এমন অনেক গান।  জনপ্রিয় গানগুলো তাকে আমাদের মনে করিয়ে যাবে বারবার।

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়