ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসূরি যে লিপি

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১২:৫৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসূরি যে লিপি

দেওপাড়া প্রশস্তি। এটি প্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ণ লিপিতাত্ত্বিক উৎস। এ লিপিটিতে রয়েছে অতিপ্রশংসাসূচক কিছু শ্লোক। এগুলো সেন রাজবংশ বিশেষত বিজয়সেনের ইতিহাসের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করে। এ প্রশস্তিলিপি রচনা করেছেন সেন যুগের বিখ্যাত সংস্কৃত কবি এবং লক্ষ্মণসেন এর মন্ত্রী উমাপতিধর।

দেওপাড়া প্রশস্তিলিপিকে বলা হয় আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসূরি। একটি প্রস্তর খন্ডের উপর খোদিত এ লিপি রাজশাহী জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে গোদাগাড়ি পুলিশ স্টেশনের অধীন দেওপাড়া গ্রাম থেকে ১৮৬৫ সালে সি.টি মেটকাফ আবিষ্কার করেন। 

বর্তমান লিপিটি পদুশ্বর নামে পরিচিত একটি বড় দিঘির পাড়ে দেখা যায়। ধোয়ীর পবনদূত কাব্যে সেন রাজাদের রাজধানী হিসেবে উল্লিখিত বিজয়পুরকে দেওপাড়া গ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত বিজয়নগর গ্রামের সঙ্গে পন্ডিতগণ অভিন্ন বলে শনাক্ত করেন।

জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল (সংখ্যা-৩৪, পার্ট-১) পত্রিকায় মেটকাফ সর্বপ্রথম শিলালিপিটি প্রকাশ করেন। এরপরে ইপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকার প্রথম খন্ডে প্রফেসর কীলহর্ণ লিপিটি সমালোচনার দৃষ্টিতে সম্পাদনা করেন।

লিপিটিতে সমান দৈর্ঘ্যের ৩২টি লাইন আছে। যে পাথরের উপর লিপিটি খোদিত সেটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ০.৯৭ মি/ ০.৬ মি কিন্তু খোদিত অংশের পরিমাণ ০.৮২ মি / ০.৪৫ মি। অক্ষরের আয়তন মোটামুটিভাবে ৩/৮´´। অপূর্ব দক্ষতা ও গভীর যত্নের সঙ্গে খোদাইকারী এটির কাজ সম্পন্ন করেন।

শিলালিপিটিতে রাজা বিজয়সেনের রাজত্বকাল এবং বাংলার সেন রাজাদের বংশতালিকার উল্লেখ পাওয়া যায়। ৫-৯ নং শ্লোকে সেন রাজারা দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট হতে উদ্ভূত এবং ব্রহ্মক্ষত্রিয় হিসেবে বর্ণিত হয়েছেন। 

শিলালিপিতে ১৪-২২ নং শ্লোক বিজয়সেন চিত্রিত হয়েছেন প্রাচীন যুগের একজন মহান রাজা বা বিখ্যাত রাজা হিসেবে। এ সকল শ্লোক বলা হয়েছে, বিজয়সেন নান্য, বীর, রাঘব, বর্ধন রাজাদেরকে বন্দি এবং গৌড়, কামরূপ ও কলিঙ্গরাজকে পরাজিত করেছেন। পশ্চিমের (‘পাশ্চাত্য চক্র’) রাজাদেরকে পরাস্ত করার জন্য তিনি গঙ্গার গতিপথ ধরে একটি নৌ অভিযানও প্রেরণ করেছিলেন।

বিজয়সেন অতি উচ্চমানের এবং জাঁকজমকপূর্ণ প্রদ্যুম্নেশ্বরের মন্দির নির্মাণ করেন এবং এর নিকটে খনন করেন একটি দিঘি (শ্লোক নং ২২-২৯)। লিপিতে এরপর বর্ণিত হয়েছে মন্দিরের অভ্যন্তরে স্থাপিত একটি মূর্তির বিষয়ে (শ্লোক নং ৩০-৩১) এবং সবশেষে রয়েছে প্রশস্তিলিপির রচয়িতা উমাপতিধর এবং খোদাইকারীর পরিচয়।

সম্পূর্ণ লিপিটিতে ৩৬টি শ্লোক রয়েছে। এগুলো নানা ধরনের ছন্দে রচিত যেমন বসন্ততিলক, শার্দূলবিক্রীড়িত, স্রগ্ধরা, পৃথ্বী, মন্দাক্রান্তা, মালিনী, শিখরিণী, ইন্দ্রবজ্রা, এবং উপজাতি। 

লিপিটিতে ব্যবহূত অক্ষর আদি বাংলা অক্ষরের সঙ্গে অনেকটাই অভিন্ন। দেওপাড়া প্রশস্তিলিপির অক্ষর নিয়ে গবেষণাকারী রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন যে, এ সময়ে বলতে গেলে বাংলা বর্ণমালার প্রায় ২২টির ক্ষেত্রেই আকৃতিগত উন্নয়ন সম্পূর্ণ হয়েছিল। এ কারণে, দেওপাড়া প্রশস্তিলিপিটিকে আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসূরি বলা যেতে পারে।

একথা সত্য যে, দেওপাড়া প্রশস্তিতে সেন রাজা, বিশেষ করে বিজয়সেন সম্পর্কে অতিপ্রশংসামূলক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু অতি প্রশংসার এ সুর নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে, বাংলা বিজয়সেনের অধীনে ইতিহাসে এক গৌরবময় স্থান অর্জন করেছিল। 

তথ্যসূত্র: আকসাদুল আলম, গ্রন্থপঞ্জি  NG Majumdar, Inscription of Bengal, Vol III, Rajshahi, 1929; AM Chowdhury, Dynastic History of Bengal, Dhaka, 1967; RC Majumdar, History of Ancient Bengal, Calcutta, 1971. 

/লিপি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়