৬৩ গানের সংকলন ‘জুলাইয়ের গান’
বিনোদন প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
এক মলাটে পাওয়া যাবে জুলাইয়ের ৬৩ গান
২০২৪ সালে ছাত্র জনতার আন্দোলনে যেসব গান আন্দোলনকারীদের প্রেরণা জুগিয়েছিল, উদ্বুদ্ধ করেছিল এদেশের সব শ্রেণীর মানুষকে, সেসব গান এবার এক মলাটে পাওয়া যাবে। সৌখিন আলোকচিত্রী ও অ্যাকটিভিস্ট মনজুর হোসেনের উদ্যোগে ‘জুলাইয়ের গান’ শিরোনামে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে।
‘জুলাইয়ের গান’ বইয়ের সংকলক মনজুর হোসেন জানালেন, ‘‘বইটি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের গানের সংকলন। আগামী প্রজন্মের কাছে সময়ের দলিল হিসেবে ধরে রাখতে তিনি বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন।’’
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকার রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায় এ দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। শিক্ষার্থীরা তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। ঠিক সেই সময়ে ‘কথা ক’ শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করেন বাংলাদেশি র্যাপার মোহাম্মদ সেজান। বাংলা ভাষায় গাওয়া এই গান দ্রুত তরুণদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি গান তখন এদেশের মানুষকে সাহস যোগায়। ১৫ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত যেসব গান প্রকাশিত হয়েছে সেখান থেকে ৬৩ গানের সংকলন এই ‘জুলাইয়ের গান’।
মনজুর হোসেন বলেন, ‘‘ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন গণ আন্দোলনে সঙ্গীতের ভূমিকা আছে। উপমহাদেশে তেভাগা আন্দোলনে যেমন হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও সলিল চৌধুরীসহ অনেকের গান কৃষকদেরকে উজ্জীবিত করেছে, তেমনি বঙ্গভঙ্গ, স্বদেশি আন্দোলন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় অনেকের গান প্রতিবাদী জনতাকে আন্দোলনে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রাণিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও অনেক প্রতিবাদী গান মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহস নিয়ে সম্মুখ সমরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও গানের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। স্বৈরচারী শাসক যখন আন্দোলন দমাতে মরিয়া হয়ে উঠে, তখন প্রতিরোধের আগুনে জ্বলে ওঠা ছাত্র-জনতাকে তরুণদের র্যাপ গান ভীষণভাবে আলোড়িত করে। এর বাইরে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, শিল্পী ও এ্যাকটিভিস্ট শায়ানের ‘আমার সূর্য️’, শূন্য ব্যান্ড এর ‘শোনো মহাজন’ ছাড়াও ‘মুক্তির মন্দিরে সোপানতলে’ গানগুলো আন্দোলনকারীদের উজ্জীবিত করে। আন্দোলনের সেসব গান এক মলাটে রাখার চিন্তা থেকে এই বইয়ের উদ্যোগ।’’
মনজুর হোসেন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে রক্তক্ষয়ী জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে র্যাপারদের কণ্ঠে উচ্চারিত অকুতোভয় প্রতিবাদের ভাষা, বলিষ্ঠ সুরেলা আওয়াজ লাখো ছাত্র-জনতাকে প্রেরণা দিয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে এ সব গানে। সাহস জুগিয়েছে দুঃশাসনের লৌহকপাট ভাঙতে। একইসঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা চূড়ান্ত জয়ের লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার শপথ, সাহস ও শক্তি অর্জ️ন করেছে। র্যাপাররা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীদেরকে প্রেরণা জুগিয়েছে। এক কথায় জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের র্যাপ গায়কদের অবদান ছিল শ্রদ্ধা করার মতো। জুলাই আন্দোলনে চল্লিশটির অধিক বাংলা র্যাপ গান আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ️ ভূমিকা রেখেছে। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে কেবল স্বৈরশাসকের পতন হয়নি। আমাদের আক্ষেপ ছিল রাজনীতিবিমুখ নতুন প্রজন্ম নিয়ে। চব্বিশে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর আর প্রত্যয় আমাদের সকল ধারণাকে ভেঙে দিয়ে একটা সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছে। সেই সময়কে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দলিল হিসেবে তুলে রাখতে এই বইয়ের প্রয়াস। এই সংকলনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্য️ন্ত সময়ে রচিত বা প্রকাশিত গানগুলো বেছে নিয়েছি।’
গয়রহ প্রকাশনী বইটি বাজারে আনছে।
মনজুর হোসেন এর আগে জুলাই আন্দোলনের দেয়ালচিত্র নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। সেই বই প্রকাশ উপলক্ষে তিনি ঢাকা শহরের দেয়ালজুড়ে ছড়িয়ে থাকা গ্রাফিতির মধ্য থেকে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি গ্রাফিতি ফ্রেমবন্দী করেন। সেখান থেকে বাছাই করা ৪৫০ টির বেশি দেয়ালচিত্র তুলে আনেন ‘জুলাইয়ের দেয়ালচিত্র, দেশ সংস্কারের স্লোগান’ বইয়ে।
ঢাকা/রাহাত/ লিপি