ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইসরায়েল হামলা না করলে ইরানও করবে না: পেজেশকিয়ান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২৪ জুন ২০২৫   আপডেট: ২৩:০৬, ২৪ জুন ২০২৫
ইসরায়েল হামলা না করলে ইরানও করবে না: পেজেশকিয়ান

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানলে ইরানও তা মেনে চলবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেন, ‍“ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে যতক্ষণ ইসরায়েল তা মেনে চলে।” খবর আল-জাজিরার 

তিনি বলেন, “ইরান সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তেহরান আলোচনার টেবিলে বসেই ইরানি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে।”

আরো পড়ুন:

১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের দাবি ছিল, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একাধিকবার স্পষ্ট করেছে, তেমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

তেহরান ইসরায়েলের এ অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা হামলাও চালিয়েছে।

২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মার্কিন বাহিনী বি-টু বোমারু বিমান এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর পাল্টা জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়।

মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পরে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদও এই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে তারা সতর্ক করে জানায়, ‘শত্রুর যেকোনো চুক্তিভঙ্গকারী আচরণের জবাব দিতে ইরান সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

ইরানে সরকার উৎখাতে আগ্রহ নেই: ট্রাম্প: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার উৎখাতে আগ্রহী নন। কারণ তা অস্থিরতা ডেকে আনবে বলে মনে করেন তিনি।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে করা ট্রাম্পের এ মন্তব্য তার আগের সামাজিক মাধ্যমে করা এক পোস্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, গত রবিবার ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘সরকার উৎখাত’ শব্দটি রাজনৈতিকভাবে ঠিক নয়। তবুও যদি বর্তমান ইরান সরকার ‘ইরানকে আবার মহান করে তুলতে না পারে’, তবে সরকার উৎখাত কেন নয়???'

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে ইসরায়েলকে ট্রাম্পের ভর্ৎসনা, দুষলেন ইরানকেও: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় ইসরায়েলকে ভর্ৎসনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ইরানে একদফায় ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। অবশ্য ইসরায়েলও অভিযোগ করেছে, ইরান তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, যা প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের ওপর বিশেষ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ তিনি যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছিলেন, তা আরো ভঙ্গুর হয়ে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প দুই পক্ষেরই সমালোচনা করেন। তবে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানান ইসরায়েলের, যাদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, “চুক্তি হতেই ইরানের ওপর বোমাবর্ষণ শুরু করে দেয় ইসরায়েল।”

ইসরায়েল ও ইরানের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের সামনে এখন দুটি দেশ, যারা এতদিন ধরে এত তীব্রভাবে লড়াই করে আসছে যে, তারা নিজেরাই জানে না কী করছে।” 

ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেঙে গেছে- এমনটি তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে তিনি বিশেষভাবে ইসরায়েলের আচরণে অসন্তুষ্ট।

ইসরায়েলকে দোষারোপ করে ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েল, আমরা চুক্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বেরিয়ে এসে এমনভাবে বোমা ফেলেছে, যেটা আমি আগে কখনো দেখিনি। এটা ছিল সবচেয়ে বড় ধ্বংসাত্মক বোমাবর্ষণ।”

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নেদারল্যান্ডসের গেডে অনুষ্ঠেয় ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা হওয়ার সময় ট্রাম্প এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, “আমি ইসরায়েলের ওপর খুশি না। যখন আমি বলি, ‘ঠিক আছে, এখন তোমাদের হাতে ১২ ঘণ্টা আছে,’ তখন তোমরা প্রথম ঘণ্টাতেই সব ঝেড়ে ফেলে দেবে; এটা ঠিক না। আমি ইরানের ওপরও খুশি না।”

ওয়াশিংটন থেকে মেরিন ওয়ানে করে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পর ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে তার সমালোচনার ধারা চালিয়ে যান।

ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, “ইসরায়েল। ওই বোমাগুলো ফেলো না। যদি ফেলো, এটা হবে একটি বড় ধরনের লঙ্ঘন। তোমাদের পাইলটদের ফিরিয়ে আনো, এখনই!”

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলো ইরান

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি ও সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ’র খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ইসরায়েলি দাবি প্রত্যাখ্যান করছে ইরান।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তেহরানের উপর ‘তীব্র হামলার’ নির্দেশ দেওয়ার পর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। খবর আল জাজিরার।

এর আগে, ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, সামরিক বাহিনী ইরান থেকে ছোড়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় ইরানে তীব্র হামলার নির্দেশ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফকে ‘জোরদারভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর’ নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি আইডিএফকে ‘তেহরানের কেন্দ্রস্থলে শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে তীব্র হামলা চালিয়ে ইরানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে’ নির্দেশ দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ইরান থেকে ইসরায়েলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ।

ইরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করার পর তারা উত্তর ইসরায়েলে সাইরেন সক্রিয় করেছে। খবর আলজাজিরার।

আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, কিছুক্ষণ আগে ইরানের ভূখণ্ডের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি শনাক্ত করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং এটি প্রতিহত করতে কাজ করছে তারা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই এই হামলার খবর এলো। 

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি বিবৃতি জারি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে গ্রহণ করেছেন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত রাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও মোসাদ প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করার পর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, “ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর সব উদ্দেশ্য এবং আরো অনেক কিছু অর্জন করেছে।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে এই অভিযানের মাধ্যমে একটি দ্বৈত তাৎক্ষণিক অস্তিত্বগত হুমকি দূর করেছে- পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই।”

এতে আরো বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানের আকাশের ওপর পূর্ণ বিমান নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে, সামরিক নেতৃত্বের ওপর ব্যাপক আঘাত করেছে এবং কয়েক ডজন কেন্দ্রীয় ইরানি সরকারের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “অভিযানের লক্ষ্য অর্জনের আলোকে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ের ভিত্তিতে, ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধবিরতির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির যেকোনো লঙ্ঘনের কঠোর জবাব দেবে ইসরায়েল।”

ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৯, আহত ৩৩

ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমে গিলান প্রদেশে চারটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

আঞ্চলিক গভর্নরের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে এই হামলায় আশেপাশের অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৩ জন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুসারে, হতাহতদের মধ্যে ১৬ জন নারী ও শিশু রয়েছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ৪

টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকালে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের বীরশেবা শহরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪ জন হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২২ জন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ঠিক আগে এই হামলা হয়েছে।  

ইসরায়েল পুলিশ জানিয়েছে, বীরশেবা শহরে অন্তত তিনটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক ভবন ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের ভেতরে এখনো বেশ কয়েকজন আটকা পড়ে আছেন।

ইসরায়েল পুলিশ মতে, আঘাতের প্রভাব এতটাই তীব্র ছিল যে প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টে শক্তিশালী নিরাপদ আশ্রয় রুমের ভেতরে থাকা সত্ত্বেও কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। নিরাপদ আশ্রয় রুমগুলো রকেট ও শার্পনেলের আঘাত সহ্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাতের জন্য নয়।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করছে এবং সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছে।

যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, এটি লঙ্ঘন করবেন না: ট্রাম্প

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‍কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একটি পোস্টে বলেন, “যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, “দয়া করে এটি লঙ্ঘন করবেন না!

তবে ইরান বা ইসরায়েল কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

মার্কিন নেতা বলেছিলেন, “যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া শুরু হবে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময়) এবং তা ২৪ ঘণ্টায় ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে। প্রথমে ইরান একতরফাভাবে সব সামরিক অভিযান বন্ধ করবে, ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েলও একই পথে হাঁটবে।”

ট্রাম্প আরো বলেন, “২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার পর, বিশ্বের সামনে ১২ দিনের যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি উদ্‌যাপন করা হবে।”

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ইরান

মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে কয়েক দফা হামলার চালানোর পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইরান।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল পৌনে ১১টার দিকে কাতারভিত্তিত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। 

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পর্দায় একটি গ্রাফিকের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।

তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।

সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দিলেও, মঙ্গলবার ভোরে তেহরানে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিহত করা হয়েছে, তবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিয়ারশেবা শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে কমপক্ষে চারজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। 

ইসরায়েলে দফায় দফায় চলছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেওয়ার পরেও ইসরায়েলে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইরান।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ১০ টার দিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্রের ঝাঁক ছুড়েছে ইরান। সকাল থেকে এ নিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাইরেন বাজছে ইসরায়েলজুড়ে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের ঢেউ শনাক্ত করেছে এবং জনসাধারণকে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি বিজ্ঞানী নিহত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্যেই ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরের দিকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। 

ইরানের প্রেস টিভির খবর অনুসারে, তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় পারমাণবিক বিজ্ঞানী সেদিঘি সাবের নিহত হয়েছেন। 

সংবাদমাধ্যটি জানিয়েছে, সাবেরের ওপর হামলাটি ইরানের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ফেরদৌসি ও ভালি আসরের প্রধান রাস্তার কাছে করা হয়েছিল।

এদিকে, ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সকাল ইসরায়েলজুড়ে তিন দফা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল তিনি এই ঘোষণা দেন।

তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি বলেন, ‘তবে ইসরায়েল যদি তেহরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ৪টার মধ্যে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ হামলা বন্ধ করে, তাহলে আমরা আর পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা রাখি না।’

দক্ষিণ ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

মঙ্গলবার সকালে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরে। খবর আল জাজিরার।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বিয়ারশেবা শহরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ১০ জন।

আল জাজিরার সানাদ সংস্থা কর্তৃক যাচাইকৃত ঘটনাস্থলের ফুটেজে একটি বহুতল ভবন ও পার্ক করা গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। দূর থেকে তোলা অন্যান্য ফুটেজে আকাশে বিশাল ধোঁয়ার মেঘ দেখা গেছে।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তিন দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।

ইরাকে তিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা

ইরাকের ইমাম আলী, বালাদ ও তাজি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। পাশাপাশি বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে ঘটল, যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-ইসরায়েল বিরোধ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

একজন সামরিক কর্মকর্তার বরাতে ইরাকের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইএনএর খবর বলছে, রাজধানী বাগদাদের উত্তরে তাজি সামরিক ঘাঁটিতে অজ্ঞাত ড্রোনের হামলা হয়েছে। তবে সেখানে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কুর্দিস্তান২৪ চ্যানেল জানিয়েছে, বাগদাদের উত্তরে সালাহউদ্দিন প্রদেশের বালাদ সামরিক ঘাঁটিতেও বিস্ফোরণ হয়েছে। এই ঘাঁটি একসময় মার্কিন বাহিনীর জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম জানায়, ঘাঁটির অভ্যন্তরে দুটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘাঁটিতেও হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা নেই। বাগদাদ থেকে ১০০ কিলোমিটার (প্রায় ৬২ মাইল) উত্তরে দেশটির সালাহউদ্দিন প্রদেশে এ সামরিক ঘাঁটির অবস্থান।

হামলা হয়েছে ইরাকের ইমাম আলি সামরিক ঘাঁটিতেও। বাগদাদভিত্তিক আল–সুমাইরা টিভি নেটওয়ার্কের খবর, এই সামরিক ঘাঁটির রাডার লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। 

ইরানের তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত ভিক্টরি বেজ কমপ্লেক্সে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখানে একসময় মার্কিন সেনারা ঘাঁটি স্থাপন করেছিল।

এসব হামলার ফলে ইরাকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখনো কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউজের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইরানিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

হোয়াইট হাউজ বলেছে, গত শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমা হামলা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে সাহায্য করেছে এবং কাতার সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি মধ্যস্থতা করতে সহায়তা করছে।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।

এখনো যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়নি: ইরান

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।

তিনি বলেন, ‘তবে ইসরায়েল যদি তেহরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ৪টার মধ্যে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে আমরা আর পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা রাখি না।’

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানালেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। 

তেহরানের স্থানীয় সময় ভোর রাত সোয়া চারটার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স দেয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধে কোনো চুক্তি হয়নি। তারপরও ইসরায়ের যদি তেহরানের স্থানীয় সময় ভোর রাত ৪টার মধ্যে অবৈধ হামলা বন্ধ না করে তাহলে আমরাও হামলা অব্যাহত রাখব।” 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভিযান বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েল ও ইরান সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধাপে ধাপে কার্যকর হবে এবং এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।

রয়টার্স ও আল জাজিরা ট্রাম্পের ট্রুথ সোশালে করা পোস্টের বরাতে এ খবর দিয়েছে। তবে ইরান বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, “ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরের চলমান সামরিক অভিযান শেষ করে আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতে যাবে। এই যুদ্ধবিরতি প্রথমে ১২ ঘণ্টার জন্য কার্যকর হবে। এরপর ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইরান প্রথমে যুদ্ধবিরতি শুরু করবে এবং ১২ ঘণ্টা পরে ইসরায়েলও তাদের অভিযান বন্ধ করবে। একে একে দুই দেশই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করবে।”

ট্রাম্প এই সমঝোতাকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই ১২ দিনের যুদ্ধ কয়েক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং আর কখনোই হবে না।”

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, “এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং অবশেষে দুই পক্ষকে একটি সমঝোতায় আনতে পেরেছে।”

ঢাকা/ফিরোজ/সাইফ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়