লোহিত সাগরে আরো একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ডুবিয়ে দিল হুতিরা
লোহিত সাগরে আরো একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ক্ষেপণাস্ত্র ও চালকবিহীন নৌকা দিয়ে জাহাজটিতে হামলা চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া জাহাজটি থেকে ১০ জন ক্রুকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) সংস্থার তথ্য অনুসারে, সোমবার গ্রিস পরিচালিত, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইটারর্নিটি সি’ ২৫ জন ক্রু সহ হামলার শিকার হয়। মঙ্গলবারও আক্রমণ অব্যাহত ছিল। হামলার দুদিন পর বুধবার (৯ জুলাই) জাহাজটি ডুবে যায়।
ইরান-সমর্থিত হুতিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল বলেই তারা ইটারর্নিটি সি জাহাজে আক্রমণ করেছে। এই অভিযানের লক্ষ্য- গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ এবং সামরিক আগ্রাসন বন্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
হুতি গোষ্ঠী এ ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে ইটার্নিটি-সি জাহাজে হামলার পুরো দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে নাবিকদের সরে যাওয়ার জন্য টেলিফোন কল এবং জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগে বিস্ফোরণের দৃশ্যও দেখানো হয়েছে।
এদিকে ইয়েমেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস হুতিদের বিরুদ্ধে ইটার্নিটি-সি থেকে বহু সংখ্যক নাবিককে অপহরণের অভিযোগ এনেছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটির ক্রুদের মধ্যে ২১ জন তাদের নাগরিক ছিলেন। এছাড়া বাকিদের মধ্যে একজন রাশিয়ান নাগরিক যিনি আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন এবং একটি পা হারিয়েছেন।
এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী, গ্রীক-পরিচালিত আরেকটি পণ্যবাহী জাহাজ, ‘ম্যাজিক সিজে’তে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুতিরা। গত এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জাহাজ ডোবালো হুতিরা।
আল মাসিরা টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুতি মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি ঘোষণা করেন, ম্যাজিক সিজ জাহাজটি সম্পূর্ণরূপে সমুদ্রের গভীরে ডুবে গেছে।
মঙ্গলবার হুতিদের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সশস্ত্র ব্যক্তিরা জাহাজটিতে উঠে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন এবং এর ফলে জাহাজটি ডুবে গেছে।
ম্যাজিক সিজের ২২ জন ক্রুকে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বাণিজ্যিক জাহাজ নিরাপদে উদ্ধার করেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগর ও আদেন উপসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও ছোট নৌকা দিয়ে প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত চারটি জাহাজ ডুবিয়েছে ও একটি জাহাজ জব্দ করেছে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলছে, তারা গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কাজ করছে। আর এ কারণেই ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। জবাবে এসব দেশ ইয়েমেনে হুতিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে নিয়মিত বিমান হামলা চালাচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ম্যাজিক সিজ ও ইটারর্নিটি-সি জাহাজে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই ঘটনা ‘নৌ চলাচলের স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের চলমান হুমকি প্রদর্শন করে’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে বলেছে, “হুতি সন্ত্রাসী হামলা থেকে নৌ চলাচল এবং বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখব, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের এই ঘটনার নিন্দা জানানো উচিত।”
মে মাসে, আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনে সাত সপ্তাহের তীব্র মার্কিন হামলার পর হুতিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়। তবে হুতিদের দাবি, ওই চুক্তিতে ইসরায়েলের ওপর হামলা বন্ধ করার কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
ঢাকা/ফিরোজ