সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় মার্কিন হামলা ‘স্বৈরাচারী কাজ’: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মাদক পাচারের অভিযোগে বেসামরিক নৌকাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলাকে ‘স্বৈরাচারী কাজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
পেত্রো বলেন, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় কোনো কলম্বিয়ান নিহত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ফেন্টানিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ রোধ করতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার উপকূলে চলতি মাসে শুরু হওয়া এ ধরনের হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে কি না, তা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ও মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
পেত্রো বলেন, “যেখানে আপনি নৌকা আটকাতে ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করতে পারেন, সেখানে কেন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করবেন? ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া মানে তো খুন করা।”
তিনি বলেন, “সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকা আটকের মাধ্যমে ‘শূন্য মৃত্যু’ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মার্কিন সংস্থা এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে সমুদ্র পথে মাদক আটক করার আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এর আগে কেউ কখনও মারা যায়নি। কাউকে হত্যা করার কোনো প্রয়োজন নেই।”
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আরো যোগ করেন, “যদি পিস্তলের চেয়েও বড় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটি বলপ্রয়োগের ন্যায্যতার নীতি লঙ্ঘন করে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব হামলা মূলত কলম্বিয়ার প্রতিবেশী দেশ ভেনেজুয়েলার নৌযানকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। তবে লক্ষ্যবস্তু ও নিহতদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুব সামান্য তথ্য দিয়েছে। হামলার প্রথম নৌকাটিতে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিল বলে দাবি করলেও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ওয়াশিংটনের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা হোয়াইট হাউজের কাছে এসব হামলার বৈধতা নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন, যেটিকে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবিসিকে হোয়াইট হাউজ জানায়, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের দেশে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে এবং এর জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে আমেরিকার সব ধরনের শক্তি ব্যবহার করতে প্রস্তুত।”
বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেত্রো অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার জনগণকে ‘অপমান’ করেছে। তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশই ‘রাজার (ট্রাম্পের) কাছে মাথা নত করবে না’।
ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ওপর বাণিজ্য নীতি কঠোর করেন এবং অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের নির্বাসন অভিযান শুরু করেন। এছাড়াও তিনি মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য স্থানে বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন এবং অপরাধী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেও মনোনীত করেন।
ট্রেন দে আরাগুয়ার পাশাপাশি ‘কার্টেল অব দ্য সানস’ সংগঠনটিকেও ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের অভিযোগ, মাদক পাচারকারী এই সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এবং দেশটির অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
গত দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবিয়ানে ৭টি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। এতে রয়েছে ৪,৫০০ জনের বেশি নৌসেনা ও মেরিন। জাহাজগুলোতে হেলিকপ্টার ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সুবিধা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পি-এইট গোয়েন্দা বিমান এলাকায় টহল দিচ্ছে ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় নজরদারি চালাচ্ছে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই সামরিক অভিযান মাদকবিরোধী কার্যক্রমের অংশ। তবে তিনি এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি যে, যেসব নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, সেগুলো সত্যিই মাদক পরিবহন করছিল।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো বলেছেন, ট্রাম্পের এমন বৈদিশিক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি আরো জানান, “ট্রাম্প আমাকে এর আগেও অপমান করেছেন। নির্বাচনকালীন প্রচারণায় তিনি আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছিলেন।”
ঢাকা/ফিরোজ