দেশে দেশে বর্ণিল আয়োজনে নতুন বর্ষকে বরণ
|| রাইজিংবিডি.কম
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউসের আলোক ফোয়ারায় ভরে ওঠে ২০২৬ সালের প্রথম প্রহরের আকাশ।
খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া একটি বৈশ্বিক উৎসব। ভৌগোলিক অবস্থান ও সময় অঞ্চলের পার্থক্যের কারণে বিশ্বের একেক দেশে একেক সময়ে শুরু হয় হ্যাপি নিউ ইয়ারের উদযাপন। প্রতিবছরের মতো এবারো একটি খ্রিষ্টীয় বছরকে বিদায় জানিয়ে আতশবাজি, সংগীত ও নানা আয়োজনে নতুন ক্যালেন্ডার বছর ২০২৬-কে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষ।
পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী, সবার আগে নতুন বছর শুরু হয় প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে। আন্তর্জাতিক সময়রেখার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আগেই নতুন বছরকে স্বাগত জানায় কিরিবাতি দ্বীপদেশের কিরিতিমাতি অঞ্চল। এরপর পর্যায়ক্রমে নতুন বছর শুরু হয় টোঙ্গা, নিউজিল্যান্ড ও সামোয়ার মতো দ্বীপ দেশগুলোতে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ২০২৬ বরণ।
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত কিরিবাতি দেশটি অসংখ্য প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গঠিত। হাওয়াইয়ের দক্ষিণে ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই দেশটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত। স্থানীয় বাসিন্দারা দেশটিকে ‘কিরিবাস’ নামে অভিহিত করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করা দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার। আন্তর্জাতিক সময়রেখার কারণে কিরিবাতি হাওয়াইয়ের এক দিন আগেই নতুন বছর উদযাপন করে। ফলে ২০২৬ সালের প্রথম সূর্যোদয়ের সাক্ষী হয়েছে কিরিবাতির কিরিতিমাতি অঞ্চল।
কিরিবাতির পর নতুন বছরকে বরণ করে নেয় পলিনেশীয় দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গা। অস্ট্রেলিয়ার পূর্বে ও নিউজিল্যান্ডের উত্তরে অবস্থিত এই দেশে নতুন বছরকে ঘিরে শান্তি, আশা ও আশীর্বাদের কামনা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিউজিল্যান্ডে মধ্যরাতে আতশবাজি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে নতুন বছর উদযাপন করা হয়। অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ারে বর্ণাঢ্য আতশবাজির প্রদর্শনীতে শহরের প্রায় ১৭ লাখ মানুষ অংশ নেয়। এ ছাড়া চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ৬০০ বাসিন্দা এবং দক্ষিণাঞ্চলের ওয়ানাকা শহরের হাজারো মানুষ সংগীত উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
সামোয়ার রাজধানী আপিয়ায় পরিবারকেন্দ্রিক আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী পানীয় ‘কাভা’ পরিবেশন করে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। স্থানীয় সংস্কৃতিতে নববর্ষ মানে পরিবারকে কেন্দ্র করে এক হওয়া এবং নতুন বছরের জন্য আশীর্বাদ কামনা করা।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় নতুন বছর বরণের উৎসবে একটি পরিবার।
এরপর প্রশান্ত মহাসাগরের আরো কয়েকটি দেশ, যেমন: ফিজি, মার্শাল আইল্যান্ড, টুভালু ও নাউরুতে নতুন বছর শুরু হয়। নিউজিল্যান্ডের দুই ঘণ্টা পর অস্ট্রেলিয়ায় নববর্ষ উদযাপন করা হয়। সিডনিতে ঐতিহ্যবাহী আতশবাজির আয়োজন থাকলেও সাম্প্রতিক এক বন্দুক হামলার কারণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।
এশিয়ায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও ফিলিপিন্সেও নতুন বছরের উৎসব শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশ্বজুড়ে এভাবেই পর্যায়ক্রমে আনন্দ, আশা ও প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০২৬। ভারতেও উৎসবের মধ্য দিয়ে বরণ করা হচ্ছে খ্রিষ্টীয় ২০২৬ সালকে।
নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করে আতশবাজির ফোয়ারায় রঙিন হয়ে উঠেছে ঢাকার আকাশ; হ্যাপি নিউ ইয়ার উদযাপনে যেন কোনো বাধাই কাজ করছে না।
ঢাকা/রাসেল