ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফারদিন হত্যার রহস্য এখনও অধরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ১৪ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:২২, ১৪ নভেম্বর ২০২২
ফারদিন হত্যার রহস্য এখনও অধরা

ফারদিন নূর পরশের ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় একমাত্র গ্রেপ্তার ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে গোয়েন্দারা বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। বুশরা ঘটনার আগে রামপুরা এলাকায় ফারদিনের সঙ্গে রিকশায় থাকলেও নেমে যাওয়ার কথা বলছেন। এরপর কী হয়েছে তিনি জানেন না বলে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে জানিয়েছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে এমন কোনও তথ্য-প্রমাণ সোমবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আসামি রিমান্ডে আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেই তার ব্যাপারে পাওয়া তথ্য গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।

এদিকে, ঘটনার পর থানা পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ফারদিন হত্যার তদন্তে মাঠে কাজ করছে। নিজস্ব সোর্স, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ঘটনার বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছে। তারই অংশ হিসেবে ফারদিন মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। 

ওই সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া এলাকায় যায় ফারদিন। সেখানে গিয়ে মাদকের কেনাকাটা নিয়ে কারবারিদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাকে কয়েকজন মাদক কারবারি মিলে হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ওই নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল বলে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফারদিনের সঙ্গে বুশরা ছাড়া অন্য কোনও মেয়ের সম্পর্ক আছে কিনা বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ফারদিনের সম্প্রতি ডিবেটিংয়ের জন্য স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে যাওয়ার কথা ছিল। ডিবেটিং নিয়ে কারও বিরাগভাজন হয়েছিলেন কিনা, তারও তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়াও পারিবারিক কোনও সমস্যা কিংবা কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল কিনা- এ বিষয়টিও সন্দেহে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এসব বিষয় নিশ্চিত হতে নিহতের পরিবারের আরও সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে ফারদিনের বাবা নুরউদ্দিন রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি চাই তদন্তে ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসুক। কেননা আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সে কোনোদিন মাদক সেবন করেনি। পাশাপাশি মাদকের যে অভিযোগ উঠছে, তা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমার ছেলে বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। সে হলে থাকতো না। এ কারণে সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা খোঁজখবরও রাখা আমাদের জন্য খুব সহজ ছিল। বাবা-মা এবং ছোট ভাই বোনদের নিয়ে হাসিখুশিতে থাকতো। তার মুখে আমি সিগারেটও দেখিনি। তাহলে কীভাবে সে মাদক সেবন করে, কোন উদ্দেশে এ ধরনের তথ্য ছড়ানো হচ্ছে?

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এ খবরে তার পরিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারদিনকে শনাক্ত করে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার শরীরে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনার তিন দিন পর ফারদিনের বাবা রানা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নিহতের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

ইতোমধ্যে মামলাটি সুষ্ঠু ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে বুশরাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দারা।

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়