ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মলত্যাগ সম্পর্কিত ৮ অদ্ভুত বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২১:২৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মলত্যাগ সম্পর্কিত ৮ অদ্ভুত বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

মলত্যাগ হলো এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আসলে কেউ আলোচনা করতে চায় না, বিশেষ করে দুইয়ের অধিক লোকের সামনে। আলোচনার জন্য মলত্যাগ জনপ্রিয় বিষয় না হলেও এটা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের অবতারণা অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

মলত্যাগে কোনটা স্বাভাবিক? কোনটা অস্বাভাবিক? কখনো কখনো মল পানিতে ভেসে থাকে কেন? এরকম আরো অনেক প্রশ্ন উঁকি মারতে পারে একজন মানুষের মনে। কারো মনে মল নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন আসবে তা নির্ভর করছে তিনি কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন তার ওপর। মলত্যাগ সম্পর্কিত কিছু অদ্ভুত প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর এখানে তুলে ধরা হলো।

* রাতে প্রস্রাবের প্রয়োজনে ঘুম ভেঙে যায়, অথচ মলত্যাগ করতে নয় কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের অন্ত্রের বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন নিউরনগুলো কোলনের সংকোচন (এই সংকোচনই মলকে শরীরের বাইরে পাঠায়) নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এটি শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা ইন্টারনাল ক্লক দ্বারাও প্রভাবিত হয়। লাইট বন্ধ করে দিলে সার্কাডিয়ান রিদম জেগে ওঠে ও ঘুমে আচ্ছন্ন করে। তাই অধিকাংশ মানুষেরই কোলন খালি করতে ঘুমের মাঝখানে জাগতে হয় না। অন্যদিকে কিডনিতে উৎপন্ন প্রস্রাব ধারণকারী থলে (ব্লাডার) ঘুমের সময়ও সংকুচিত হয়ে থাকে, যেকারণে জেগে ওঠে ব্লাডার খালি করার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত প্রস্রাব না করেই ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো সম্ভব, কিন্তু বিছানায় যাওয়ার আগে প্রচুর পানি পান করলে অথবা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে প্রস্রাবের তাড়নায় ঘুম ভেঙে যেতে পারে।

* সকালে বায়ুত্যাগ হয় কেন?
আমাদের কোলন ঘুমের সময় নিষ্ক্রিয় থাকে। কিন্তু আমরা জেগে ওঠলে এটা ক্রিয়াশীল ও সংকুচিত হয়, যার ফলে রাতে কোলনে জমে থাকা গ্যাস বের হয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সকালে উচ্চ পরিমাণে গ্যাস বের হয়, কারণ এসময় কোলন জেগে ওঠে কাজ শুরু করে।

* কফি পানে মলত্যাগের চাপ পায় কেন?
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, যারা সকালে কফি পান করেন তাদের ৩০ শতাংশেরই পানীয়টি পানের পর মলত্যাগের তাড়না আসে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কফি ডিস্টাল কোলনকে উদ্দীপ্ত করে, যা অন্ত্রের বর্জ্য অপসারণ দ্রুত করে। বর্জ্য অপসারণের তাড়না সৃষ্টিতে কফির অ্যাসিডিটির ভূমিকা থাকতে পারে। কফির ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড পাকস্থলিকে আরো গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড উৎপাদনে প্ররোচিত করে, যার ফলে পাকস্থলি স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত এটির উপাদান বের করে দেয়।

* কখনো কখনো মলত্যাগে শান্তি লাগে কেন?
মলত্যাগের সময় যে সুখানুভূতি পাওয়া যায় তাকে ‘পু-ফোরিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পু-ফোরিয়া তখনই ঘটে যখন ব্রেইনস্টেম থেকে কোলনে বিস্তৃত ভেগাস নার্ভ মলত্যাগের সময় উদ্দীপ্ত হয়। সাধারণত বড় মলত্যাগে ভেগাস নার্ভ উদ্দীপ্ত হয়, তাই প্রত্যেকবার বাথরুমে গেলেই পু-ফোরিয়া হয় না।

* মসলাদার খাবার খেলে মলত্যাগে জ্বালাপোড়া করে কেন?
কখনো কখনো মসলাদার খাবারের কিছু উপাদান পুরোপুরি হজম হয় না, যেমন- ঝাল মরিচের ক্যাপসাইসিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাপসাইসিন আমাদের ত্বক বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির সংস্পর্শে এসে টিআরপিভি১ নামক রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়। আমাদের সারা শরীরে এই রিসেপ্টর রয়েছে, যেমন- ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্টের মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত। মাঝেমধ্যে মসলাদার খাবারের ক্যাপসাইসিন সম্পূর্ণরূপে হজম হয় না বলে এটি ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট দিয়ে অতিক্রমের সময় টিআরপিভি১ রিসেপ্টর উদ্দীপ্ত হতে পারে। শরীর থেকে খাবারের বর্জ্য বের হওয়ার সময় যখন অপাচ্য ক্যাপসাইসিন মলদ্বারে পৌঁছে, তখন এসব রিসেপ্টর উদ্দীপ্ত হয়ে জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।

* ভ্রমণে গেলে মলত্যাগ হয় না কেন?
প্রায় ৪০ শতাংশ লোকেরই ভ্রমণকালে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান কারণ হলো রুটিনের পরিবর্তন। খাবার খাওয়ার সময়সূচিতে পরিবর্তন, ঘুমের শিডিউলে পরিবর্তন ও টাইম জোনের পরিবর্তন আমাদের সার্কাডিয়ান রিদমকে প্রভাবিত করে। এর ফলে ঘুমের সমস্যা হয় ও পরিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পরিণামে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে হয়।

* পিরিয়ডের সময় বেশি মলত্যাগ হয় কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পিরিয়ড শুরু হলে শরীর প্রোস্টাগ্লান্ডিনস নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা জরায়ু সংকোচনে সহায়তা করে। এটা অন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। যার ফলে পিরিয়ডের সময় সচরাচরের চেয়ে বেশি মলত্যাগ হয়ে থাকে।

* মল পানিতে ভাসে কেন?
মল টয়লেটের পানিতে ভাসলে বুঝতে হবে চর্বি রয়েছে। এটা একটি লক্ষণ হতে পারে যে শরীর খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে পারছে না। সেলিয়াক ডিজিজ বা ক্রনিক প্যানক্রিয়েটাইটিস থাকলে শরীর খাবারের পুষ্টি শোষণে ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে টয়লেটের পানিতে মল ভাসলে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়