বিজয় সরকারের ১১৪তম জন্মজয়ন্তী আজ
ফরহাদ || রাইজিংবিডি.কম
চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারীর তুলিতে বিজয় সরকার
ফরহাদ খান, নড়াইল : মৃত্যুর কথা স্মরণ করে লিখেছেন -যেমন আছে এই পৃথিবী / তেমনিই ঠিক রবে / সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে / একদিন চলে যেতে হবে...।
আবার তুমি জানো না, জানো নারে প্রিয় / তুমি মোর জীবনের সাধনা / তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি, মনে আপন মেনেছি / তুমি বন্ধু আমার এ মন মানো না...।
এমন আবেগ আপ্লুত, ভালোবাসায় পূর্ণ ও প্রিয়জনকে না পাওয়ার বেদনায় ব্যাথিত চারণকবি, গীতিকবি ও গানের পাখি বিজয় সরকারের ১১৪তম জন্মজয়ন্তী আজ।
১৯০৩ সালের এইদিনে (৭ ফাল্গুন-১৩০৯ বাংলা) নড়াইলের প্রত্যন্ত অঞ্চল ডুমদি গ্রামে তার জন্ম। বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকার নবমশ্রেণি, মতান্তরে মেট্রিক (এসএসসি) পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
দুই স্ত্রী -বীনাপাণি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউই বেঁচে নেই। ছেলে কাজল অধিকারী, বাদল অধিকারী ও মেয়ে বুলবুলি অধিকারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় বসবাস করছেন। পালিত ছেলে জীবন অধিকারীও ডুমদি ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন।
আধ্যত্মিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি বিজয় সরকার গেয়েছেন- নবী নামের নৌকা গড় / আল্লাহ নামের পাল খাটাও / বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন / কূলের তরী খুলে দাও...। কিংবা আল্লাহরসূল বল মোমিন / আল্লাহ রসূল বল / এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা / সোজা পথে চল...।
আবার স্ত্রী বীনাপাণির মৃত্যুর খবরে গানের আসরেই গেয়েছেন -পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী / ওরে একদিন ভাবি নাই মনে / সে আমারে ভুলবে কেমনে...।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এর ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থের নায়ক-নায়িকা ‘রূপাই’ ও ‘সাজু’র প্রেমকাহিনী নিয়ে বিজয় সরকার গেয়েছেন-নক্সী কাঁথার মাঠেরে / সাজুর ব্যাথায় আজো রে বাজে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি...। কী সাপে কামড়াইলো আমারে / ওরে ও সাপুড়িয়ারে / আ...জ্বলিয়া পুড়িয়া মলেম বিষে...।
এসব গানসহ প্রায় আঠার শ’ গান লিখেছেন তিনি।
বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। তার প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কীর জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদকও। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কবিয়াল বিজয় সরকারকে মরণোত্তর একুশে পদকে (২০১৩) ভূষিত করা হয়।
বিজয় সরকারের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন, জারিসম্রাট মোসলেম উদ্দীন, মৃদঙ্গবাদক সুরেন্দ্রনাথ অধিকারীসহ অনেক গুণীজন।
বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতায় পরলোকগমন করেন। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় সমাহিত করা হয়।
বিজয় সরকারের জন্মদিন উপলক্ষে কবির জন্মস্থান ডুমদিতে আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) নগর কীর্তন, কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোচনা, বিজয় গীতি ও জারি গানের আয়োজন করা হয়েছে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ ফরহাদ/শাহ মতিন টিপু
রাইজিংবিডি.কম