ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘করোনায় শ্রমিক ছাঁটাই অমানবিক, তদন্ত করে ব্যবস্থা’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘করোনায় শ্রমিক ছাঁটাই অমানবিক, তদন্ত করে ব্যবস্থা’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে দেশে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। এই অবস্থায় পোশাক কারখানা থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনাকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমিক নেতারা। আর বিষয়টি আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

রোববার (০৫ এপ্রিল) রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার ‘ইসকেই ক্লথিং লিমিটেড’ নামক কারখানায় ১০৩ জন শ্রমিক ও স্টাফ এবং সাভারের ‘দি ক্লথ অ‌্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড’ নামক কারখানায় ৭০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়।

কর্মদক্ষতার দোহাই দিয়ে এই সময়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টিকে চরম পর্যায়ের অমানবিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এক শ্রেণির মালিকপক্ষ আছে যারা উপলক্ষ এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণ করার জন্য। গাজীপুরের এই দুটি গার্মেন্টসের মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত ঠিক তেমনটি হয়েছে’।

তিনি আরো বলেন, এই আশঙ্কাটা আমরা আগে থেকেই করছিলাম। আমাদের কাছে বেশ কিছু খবর এসেছে যে, অনেক জায়গায় শ্রমিকদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।  ছাঁটাইয়ের কথা বলা হচ্ছে।  আমরা প্রথমে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাবো এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে ছাঁটাইয়ের মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত যেনো না নেওয়া হয়।  যদি ছাঁটাই হয় তাহলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ নেই।  এজন্য যতই বাধা আসুক আমরা কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবো, সব শ্রমিকদের নিয়ে’।

গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা এসব শ্রমিকদের পুনর্বহাল দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণা পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি’।

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ৫ এপ্রিলের গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সারা দেশের গার্মেন্টস কর্মীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও মালিকপক্ষ যেহেতু আশ্বস্ত হতে পারছে না, আমার মতে এই মুহূর্তে সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকশ্রেণি মিলে ত্রিপক্ষীয় সমন্বিত সিদ্ধান্ত দরকার।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন কলকারখানা ও পোশাক কারখানার নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা তদারকি এবং নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করি। তবে শ্রমিক নিয়োগ এবং ছাঁটাইয়ের বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেখা হয়। তবুও এই সময়ে দুটি গার্মেন্টসে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি আমরা শুনেছি।  যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবো। ’

তিনি বলেন,  ‘আমরা আশা করছি এ ধরনের পরিস্থিতিতে এরকম একটি সিদ্ধান্ত অবশ্যই সরকার গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখবে।  কারণ পোশাক খাতকে বর্তমান সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা ঘোষণা তার একটি বড় প্রমাণ।’

এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম অনুবিভাগ) ড. মো. রেজাউল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের কোনো কারখানা থেকে শ্রমিক যেন ছাঁটাই না করা হয় এরকম নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। আমরা বিষয়গুলো কারখানা মালিকপক্ষকে জানিয়েছিলাম।  তবুও এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটলো তার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইসকেই ক্লথিং লিমিটেড কারখানার গেটে টানানো নোটিশে বলা হয়, সন্তোষজনক কাজকর্ম প্রতীয়মান না হওয়ায় অব্যাহতির তালিকায় থাকা শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

একইসঙ্গে অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিক ও স্টাফদের আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যেকোনো কার্যদিবসে কারখানায় এসে পাওনা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যদিও কর্মী ছাঁটাইকে চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয় বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ইসকেই ক্লথিং লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জরুল ইসলাম রোববার গণমাধ্যমে বলেন, কারখানায় চাকরি স্থায়ীকরণের নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে অস্থায়ী যে সব শ্রমিক ও স্টাফরা সন্তোষজনক কাজ করেননি, তাদের স্থায়ী করা হয়নি।

এসব বিষয়ে উভয় কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনোরকম মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।


ঢাকা/হাসান/জেডআর

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়