মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
নাগ || রাইজিংবিডি.কম
প্রকল্প মনিটরিং কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি : নিউজরুম ফটো)
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকারভিত্তিক ৯টি মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত ও যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নয়টি মেগা প্রকল্প হচ্ছে পদ্মাসেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল), রাজধানীর মেট্রোরেল, এলএমজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প, আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট এবং পায়রা গভীর বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
বুধবার সরকারের দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প মনিটরিং কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মনিটরিং কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহি, পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ সংশ্লিষ্ট সচিবগণ।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, আজকের বৈঠকে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফার্য়াড পাওয়ার প্রজেক্ট ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পকে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করেছে মনিটরিং কমিটি।
বৈঠকে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
সরকারের দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প মনিটরিং কমিটির বৈঠকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে। এ প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৩০ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ২২ শতাংশ, সার্ভিস এরিয়া (২) ১৫ শতাংশ, মূল সেতু নির্মাণ ১.৫ শতাংশ, ভূমি অধিগ্রহণ ৯৯ শতাংশ এবং পুনবার্সন কার্যক্রমের ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তাছাড়া মূল সেতু ও নদীশাসন নির্মাণ কাজের তদারকি চলমান রয়েছে বলে জানানো হয় বৈঠকে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সঙ্গে রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম চুক্তির আওতায় ফিজিবিলিটি ইভালিউশন এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রবাবিলিস্টিক সেফটি অ্যানালাইসিস রির্পোর্টের কাজের ১০০ শতাংশ, দ্বিতীয় চুক্তির আওতায় সার্ভে/স্টাডি, ডিজাইনের কাজের ৭০ শতাংশ এবং তৃতীয় চুক্তির আওতায় প্রায়োরিটি কনস্ট্রাকশন পাইওনিয়ার বেজ, ইরেকশন বেজের কাজের ১০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চতুর্থ চুক্তির কাজ শুরু হয়েছে।
তৃতীয় প্রকল্প মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেন্সিল কাজ শুরু হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ শেষ হয়েছে। ফাইনানসিয়াল অ্যাডভাইজার ও এইচআর কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের জন্য টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পশুর নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ডিপিপি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের ব্যয় ১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ঋণ ৭০ শতাংশ ও ইক্যুইটি ৩০ শতাংশ। ইপিসি প্যাকেজ দরপত্র আহবান করা হবে চলতি মাসেই। দরপত্র দাখিলের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে আগামী এপ্রিল মাসে।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এমআরটি লাইন, ৬টি ডিপো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির বরাদ্দ ও দখল পাওয়া গেছে। প্রকল্পের জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে ডিটেইলড ডিজাইনের কাজ শেষ হবে। তাছাড়া ২০১৫ সালের মধ্যে টেন্ডার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এর প্রত্যাশিত কমিশনিং (আংশিক) ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এ প্রকল্পের ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বাকি টাকা দেবে জাইকা। এর দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এতে স্টেশন থাকবে ১৬টি।
পঞ্চম প্রকল্প এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর অধীনে সিঙ্গাপুরের এক্সট্রা অয়েল অ্যান্ড একসিলারেট এর্নার্জি কনসোর্টিয়াম সঙ্গে গত বছরের ২৬ জুন পেট্রোবাংলা ও পিপিসি (প্রপোজাল প্রসেসিং কমিটি) কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত টার্মসিট এগ্রিমেন্টটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য পুনরায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হবে।
ষষ্ঠ প্রকল্প গভীর সমুন্দ্র বন্দর নির্মাণ। কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে জাপানের প্যাসিফিক কনসালটেন্স ইন্টারন্যাশনাল এ প্রকল্পের টেকনো ইকোনোমিক স্ট্যাডি সম্পন্ন করেছে। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে পিপিপি ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত থাকলেও আগ্রহী বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় সরকার টু সরকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে আগ্রহী দেশ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সপ্তম প্রকল্প মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফার্য়াড পাওয়ার প্রজেক্ট। এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে দু’টি ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন, টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট এবং দক্ষ জনবল তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে ১৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং অধিগ্রহণকৃত জমির চারদিকে সীমানা বেড়া নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা (৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এর মধ্যে সহায়তা হিসেবে থাকবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা (৩.৭২ বিলিয়ন ডলার)। আর স্থানীয়ভাবে ৭ হাজার ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট কমিশনিং এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাইজিংবিডি/ ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৫/নাগ/সন্তোষ
রাইজিংবিডি.কম