ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খ্রিষ্টাব্দ না ইংরেজি বর্ষ!

ইমাম মেহেদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খ্রিষ্টাব্দ না ইংরেজি বর্ষ!

প্রতিদিন আমরা ভুলভাবে খ্রিষ্টীয় সাল ব্যবহার করছি ইংরেজি সাল হিসেবে। এমনকি আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষও ভুলভাবে ইংরেজি সাল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন! কেউ জেনে আবার কেউ না-জেনে ব্যবহার করছেন প্রতিনিয়ত। এমনকি জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন আমাদের দেশে খুব জাঁকজমকভাবে ইংরেজি নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বহুবছর ধরে এই দিনকে ঘিরে উৎসবও হচ্ছে। বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ার কারণে এর প্রচার-প্রসার এবং ব্যবহার এখন বহুমুখী। 

এমনকি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নথিপত্রে, পত্র-পত্রিকায়, অফিস-আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, গণমাধ্যমে, দৈনন্দিন কাজে, দিনলিপিতে খ্রিষ্টাব্দকে ইংরেজি বছর হিসেবে চিহ্নিত ও ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ‘২০১৯ ইং অথবা ০১/০১/২০২০ ইং’। আসলে ইং এর স্থলে হবে খ্রিষ্টাব্দ, সংক্ষেপে খ্রি.। জানুয়ারির প্রথম দিনকে অনেকে বলেন ‘ইংরেজি’ বছরের প্রথম দিন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই পৃথিবীতে ইংরেজি বছর বা সাল বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। আসলে ইংরেজদের নিজস্ব কোনো সাল নেই। আমরা খ্রিষ্টীয় সালকে ইংরেজি মনে করি।

ইংরেজদের চেয়ে আমরা এগিয়ে আছি সালের দিক থেকে- সেকথা ভাবলে বা বললে ভুল হবে না। কারণ আমাদের নিজস্ব বাংলা সাল আছে। আমাদের দেশে আমরা সাধারণত হিজরি, বাংলা এবং খ্রিষ্টীয় সাল ব্যবহার করে থাকি। প্রকৃতপক্ষে সঠিকটা জেনে বুঝে ব্যবহার ও প্রয়োগ করাই একজন সচেতন ব্যক্তির কাজ। ইতিহাস বিকৃত করে বা ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল ব্যবহার বা শব্দের ভুল প্রয়োগ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাঙালি হিসেবে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী গৌরব রয়েছে। সেক্ষেত্রে সঠিকটা জেনেশুনে ব্যবহার করা সমীচীন। আমাদের দায়িত্বশীল কাজ হলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষা দেয়া। তাদের বিভ্রান্ত না করা। তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া। তাহলে একটা জাতি ভুল ও বিকৃত শিক্ষা থেকে যেমন দূরে থাকবে ঠিক একইভাবে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হবে।

এবার আসি খ্রিষ্টীয় সালের শুরুর ইতিহাসের দিকে। ‘খ্রিষ্টাব্দ’ শব্দটির শুরুর ইতিহাস আমরা অনেকেই জানতে চাই। মূলত এর উৎপত্তির একটু ধারণা দেয়ার জন্যই আজকে এই লেখা। আসলে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টের জন্মের বছর থেকে যে বছর গণনা করা হয়, তাকেই খ্রিষ্টাব্দ বলে। যিশুখ্রিষ্টের জন্ম, জীবন, সেবা কাজ, মৃত্যুকে অবিস্মরণীয় করে রাখার জন্য পোপ গ্রেগরি নতুন এই বছরের গণনা শুরু করেন। বর্তমান পৃথিবীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই সবচেয়ে  বেশি ব্যবহৃত ও প্রচলিত।

বছর গণনায় আমাদের দেশে ইংরেজিতে BC ও AD দুটি শব্দ প্রচলিত। BC শব্দের অর্থ হলো Before Christ. বঙ্গানুবাদ হলো খ্রিষ্টপূর্ব বা খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আর AD এসেছে লাতিন শব্দ Anno Domini Nostri Jesu Christi থেকে। যার ইংরেজি অনুবাদ হলো The year of our Lord. বা বাংলায় খ্রিষ্টাব্দ। সহজভাবে বলা যায়, যিশুখ্রিষ্টের জন্মবছর থেকে যে বছরের গণনা শুরু করা হয়েছে, তা হলো খ্রিষ্টাব্দ। আর যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগ থেকে যে বছর গণনা করা হয়, তা হলো খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই গণনার রীতি অনুযায়ী কোনো শূন্য বছর নেই। অর্থাৎ যিশুখ্রিষ্টের জন্মবছরই হলো খ্রিষ্টপূর্ব (BC) আর তাঁর জন্মের পরের বছর থেকে খ্রিষ্টাব্দের (AD) প্রথম বছর।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়