ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

করোনাসৃষ্ট মহামারির কালে সাংবাদিকতা

ডা. আর. এন. সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১  
করোনাসৃষ্ট মহামারির কালে সাংবাদিকতা

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে করোনাভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয়। চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে।

চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের ১১ মার্চ বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে। বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু ১১ মার্চ। এরপর থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৬ হাজার ১৯৫ জন মারা গেছেন। এবং এখন করোনা শনাক্তের গড় হার ১৬.৮১ শতাংশ। করোনায় মৃত্যু হার ১.৭৫ শতাংশ।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর থেকে এর ভয়াবহতা অনুধাবন করে যারা সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে জনসতেনতা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। নানা কারনে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিল বিষয়টি। ফলে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সাংবাদিকরাই নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

দেশে ২০২০ সালে এক হাজার ১০৬ জন সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪০ জন সংবাদকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।  সুস্থ হয়েছেন ১০১৮ জন। সরাসরি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮ জন সংবাদকর্মী মারা গেছেন।  এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১২ জন সংবাদকর্মী।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো সংবাদমাধ্যমেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সাংবাদিকতা একটি শিল্প। সাংবাদিকরা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছেন ভাইরাস সম্পর্কে, সচেতনতার নিয়ম সম্পর্কে, পাশাপাশি আপডেট করেছে প্রতিবেলার সব খবর। মৃত মানুষের দাফন-সৎকার ব্যবস্থা, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা, রোগীর ভোগান্তি, নকল এন-৯৫ মাক্স, নকল পিপিই হাসপাতালে সরবরাহ, ডাক্তারের জীবনবাজি রেখে চিকিৎসা দেয়া, প্রণোদনা নিয়ে নাটক, সেনা-পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের সর্বাত্মক লকডাউন সফল করার চেষ্টা, আর্ত মানবতার জন্য যারা মনুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের নিয়ে প্রতিবেদন ইত্যাদি।

ফলে জনগণ করোনার প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। মহামারি পরিস্থিতি এবং নীতি-নির্ধারকরা সমস্যা সমাধানের একটি নির্দেশনাও পেয়েছেন। কোভিড সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এই সংকটের সময় প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন সাংবাদিকরা। অথচ করোনা মহামারির কারণে অনেক সংবাদপত্র বন্ধ করতে অথবা ডাউন পাবলিশিং করতে বাধ্য হয়েছে। এতে অনিশ্চয়তা বেড়েছে এই পেশার লোকজনের। ছাঁটাই, অনিয়মিত বেতন, বকেয়া বেতন, সাংবাদিক মৃত্যু, সাংবাদিক নির্যাতন, বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান- এগুলোও হয়েছে। করোনাভাইরাসের ফলে বিজ্ঞাপন আয় ক্ষতির কারণে স্থানীয় পত্রিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়া ভিউয়ারশিপ বৃদ্ধির পরেও বিজ্ঞাপন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে গেছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন মফস্বল শহরের সাংবাদিকরা। সংবাদ, ছবি সংগ্রহ এবং তা পরিবেশনের পাশাপাশি তাদেরকে বিজ্ঞাপনও সংগ্রহ করতে হয়। বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যমের মফস্বল সাংবাদিকরা করোনাকালে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নগদ সহায়তা দিয়েছেন। এরপরও দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের এই ত্যাগ জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ


 

হাসনাত/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়