ফ্লাইট বিজি ২০২: আবাহনে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’
ইতিহাস খুব কম ক্ষেত্রেই সরলরেখায় এগোয়। রাষ্ট্রের সংকট, ক্ষমতার পালাবদল ও জনআকাঙ্ক্ষার সংঘাতে বারবার এমন মুহূর্ত আসে, যখন কোনো ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন কেবল ব্যক্তিগত ঘটনা থাকে না— তা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক সময়ের প্রতীক্ষিত প্রতীক। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা তেমনই এক মুহূর্ত। ফলে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নীতির প্রবর্তক হিসেবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিজি ২০২ ফ্লাইটটি শুধু একটি ফ্লাইট নয়; এটি ঝঞ্ঝামুখর বাংলাদেশের জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আবাহন।
১৭ বছর আগে সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারামুক্ত হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। সামনে তখন ছিল একটি নির্বাচন, জরুরি অবস্থার মধ্যে গণতন্ত্রে ফেরার আকাঙ্ক্ষা। প্রায় দেড় যুগ পর তিনি যখন দেশে ফিরছেন, তখনো ক্ষমতায় রয়েছে একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার, আর গণতন্ত্রে উত্তরণে ভোটের অপেক্ষায় রয়েছে পুরো বাংলাদেশ।
তারেক রহমানের নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তনের মধ্যবর্তী এই সময়ে বদলে গেছে বাংলাদেশ। বদলেছে রাজনীতির চরিত্র, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা, বিরোধী রাজনীতির পরিসর এবং নাগরিক প্রত্যাশার ভাষা। ফলে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়; এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক গতিপথের সঙ্গে যুক্ত। সুদূর লন্ডন থেকে সেই বার্তা তিনি বারবার শুনিয়েছেন দেশবাসীকে।
নির্বাসনের শুরু ও রাজনৈতিক দূরত্ব
২০০৭ সালের ৭ মার্চ জরুরি অবস্থার মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাসা থেকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করে তারেক রহমানকে। তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়, যৌথ বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে জামিনে মুক্তি পেয়ে সেদিন রাতেই স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে চলে যান তিনি। শুরু হয় নির্বাসনের জীবন। মা ও ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে থাকার অমিত্র দিনরাত কাটতে থাকে তার।এরপর দেশে বিএনপির জন্য শুরু হয় কঠিন সময়। দলটি সংসদের বাইরে চলে যায়, রাজপথই হয়ে ওঠে প্রধান ভরসা। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেও আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। এই সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরো ডজন ডজন মামলা হয়। নির্বাসনেই একাধিক মামলার সাজা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্ট তার বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
আইনি ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশে ফেরা কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে তারেক রহমানের জন্য। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়, নবায়নও আর করা হয়নি। এক পর্যায়ে আলোচনায় আসে যুক্তরাজ্যে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টিও। সেদেশে তার আশ্রয় পাওয়া নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি করা হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।
দূরে থেকেও দলের কেন্দ্রে
তবে নির্বাসন তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর প্রায় সাত বছর লন্ডন থেকেই তিনি দল পরিচালনা করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক, লিখিত নির্দেশনা, সাংগঠনিক পুনর্গঠন— সবকিছুই হয়েছে দূর লন্ডন থেকে। এই সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক ভাষায় যুক্ত হয় ‘রাষ্ট্র মেরামত’ ধারণা। দলের ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি শুধু দলীয় ইশতেহারের খসড়া নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের একটি কাঠামো হিসেবে আলোচিত হয়। বিএনপির ভাষায়, এই ৩১ দফার কারিগর তারেক রহমান।
বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাসিত এই সময় তারেক রহমানের রাজনৈতিক চিন্তাকে গভীর করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, প্রশাসনিক একমুখীনতা ও বিরোধী রাজনীতির সংকট— সবকিছু তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন দূর থেকে; তবে অনুধান করেছেন প্রগাঢ় বুদ্ধি দিয়ে।
ক্ষমতার পালাবদল ও ফেরার পথ তৈরি
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারায়, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়, পরে আদালতেও তিনি খালাস পান। একই ধারাবাহিকতায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার রায় বাতিল হয়; অব্যাহতি পান সাজার আদেশ থেকে।
এরপরই আলোচনায় আসে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি। যদিও বাস্তবে ফেরার সময় নির্ধারণে ছিল নানা অনিশ্চয়তা। যেমন- পাসপোর্ট, ট্রাভেল পাস ও আন্তর্জাতিক আইনি অবস্থান নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। বিরোধীদের মধ্যে জোরেশোরে বলাবলি হতো, তিনি হয়তো ফিরতেই চান না। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে তার স্বদেশে ফেরার যাবতীয় প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলার অপচেষ্টা দৃশ্যমান ছিল ফ্লাইটি বিজি ২০২ লন্ডন থেকে ছাড়ার আগ মুহূর্তেও। অবশেষে গুজবকে নির্বাসনে রেখে প্রত্যাবর্তন এখন বাস্তবতা।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেখা করেন তারেক রহমানের সঙ্গে। তাদের মধ্যকার বৈঠকটি ‘বাংলাদেশ পরিস্থিতি’কে নতুন দিশা দেয়। বিএনপি সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একমত হন দুই নেতা।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর আলোচনার কেন্দ্রে ছিল তারেক রহমানের দেশের ফেরার দিনক্ষণ। ওই বৈঠকের ১০ মাস পর ডিসেম্বরে এসে ঠিক হয় তার ফেরার সিদ্ধান্ত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান।
এমন দিনে তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা দেওয়া হয়, যেদিন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ঘিরে দেশে অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তবে ক্ষোভের আগুনে শেষ হয় সেই রাত-দিন। এমন সব অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ বারবার বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে খাদের কিনারে ঠেলে দিলেও ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ রূপরেখা নিয়ে দেশে আসছেন তারেক রহমান।
প্রত্যাবর্তনের আয়োজন ও রাজনৈতিক বার্তা
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে ব্যাপক আয়োজন করেছে বিএনপি। লন্ডন থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে তিনি যাবেন পূর্বাচলের তিনশ ফিট সড়কে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। সেখানে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চে একাই বক্তৃতা করবেন তিনি।
লন্ডন থেকে তারেক রহমান যখন উড়াল দিয়েছেন, তখন সারা দেশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও তার অনুরাগীরা ছুটেছেন ঢাকার পথে। সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এই আয়োজন করেছে বিএনপি। প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে দলটি প্রত্যাশা করছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলে ৩০০ ফিটে সংবর্ধনাস্থলের দিকে যাওয়ার পথে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন।
অবশ্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তারেক রহমানের গণসংবর্ধনায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দিকে নজর রয়েছে বিরোধী দলগুলোর, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর। তারা এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে, আচরণবিধি প্রতিপালন হচ্ছে কিনা, সেদিকে দৃষ্টি দিতে। যে কারণে বিএনপি তার নেতাকর্মীদের নির্বাচনি প্রতীক ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে।
নতুন বাস্তবতায় পুরোনো চ্যালেঞ্জ
১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা যতটা আনন্দের, তার সামনে চ্যালেঞ্জও তত বড়। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, জামায়াতে ইসলামী নতুন শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে, তরুণদের একটি অংশ রাজনীতিতে ভিন্ন ধরনের ভাষা ও নেতৃত্ব খুঁজছে।
তারেক রহমানের বড় পরীক্ষা হবে— তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি করবেন নাকি পুনর্মিলনের পথে হাঁটবেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমনটি করেছিলেন, সেই উদাহরণ টেনে বলা যায়, নিপীড়ন ও বঞ্চনার দীর্ঘপথ পার হয়েও প্রতিহিংসা পরিহার করে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমেই ইতিহাসে স্থায়ী আসন করে নেওয়া যায়।
এই সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ কংগ্রেসম্যানের চিঠি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা ওই চিঠিতে তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে ব্যক্তির দায় দলের ওপর না চাপানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। এই গুরুতর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু অন্তর্বর্তী সরকার নয়; বর্তমানে বৃহত্তম দল বিএনপির নেতা হিসেবে তারেক রহমানকেও মোকাবিলা করতে হবে।
ভোটের রাজনীতি ও নেতৃত্বের পরীক্ষা
বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান পৈত্রিক জেলা বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দেশে ফিরে তিনি নিয়মিত বসবেন গুলশানের কার্যালয়ে এবং নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তবে নির্বাচনই শেষ কথা নয়। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সংস্কার, প্রশাসনিক জবাবদিহি, সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি— এসব প্রশ্নের উত্তরও দিতে হবে তারেক রহমানকে। দেশে কট্টর ডানপন্থি রাজনীতির উত্থানও মোকাবিলা করতে হবে তাকে।
নির্বাসন থেকে ফেরা মানেই রাজনীতির শেষ অধ্যায় নয়— বরং সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়ের শুরু। নির্বাসনে নেতা প্রতীকে পরিণত হন; প্রত্যাবর্তনের পর তাকে প্রমাণ দিতে হয় বাস্তবে।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে রাষ্ট্রকে— তিনি কি কেবল ক্ষমতার দাবিদার হবেন নাকি সময়ের দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনো লেখা হয়নি। তবে ইতিহাস বলে, যে প্রত্যাবর্তন সময়ের দাবিতে ঘটে, তা কখনোই গুরুত্বহীন থাকে না। কেননা, ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে, দীর্ঘ নির্বাসনের পর কোনো রাজনৈতিক নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুধু ব্যক্তিগত মুক্তির গল্প নয়, বরং একটি জাতির রাজনৈতিক বাঁকবদলের সূচনা করেছে। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে বোঝার জন্য বিশ্ব রাজনীতির তিনটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
নেলসন ম্যান্ডেলা
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবন্দি থাকার পর ১৯৯০ সালে মুক্তি পান। তার মুক্তি ও পরবর্তী রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে। প্রতিশোধের বদলে জাতীয় পুনর্মিলনের পথ বেছে নিয়ে তিনি কেবল রাষ্ট্রপ্রধানই হননি, বরং বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতীকে পরিণত হন। ম্যান্ডেলার প্রত্যাবর্তন দেখিয়েছে, সংযমী নেতৃত্ব রাজনৈতিক ক্ষত সারাতে পারে।
বেনজির ভুট্টো
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো দীর্ঘনির্বাসন শেষে ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন। করাচিতে তার প্রত্যাবর্তনের দিনই ভয়াবহ হামলায় বহু মানুষ নিহত হন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সহিংসতার মধ্যেও তার ফেরা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন গতি আনে। যদিও তার জীবনাবসান ঘটে অল্পসময়ের মধ্যেই। তবু নির্বাসন থেকে ফেরা নেতার রাজনীতি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিবর্তনমুখী হতে পারে, বেনজির ভুট্টো তার বড় উদাহরণ।
আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি
১৯৭৯ সালে দীর্ঘনির্বাসনের পর ফ্রান্স থেকে ইরানে ফেরেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। তার প্রত্যাবর্তন মুহূর্তেই ইরানের রাজনীতির মানচিত্র পাল্টে দেয়। রাজতন্ত্রের পতন ঘটে, প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা। খোমেনির উদাহরণ থেকে বলা যায়, কোনো নেতার প্রত্যাবর্তন কখনো কখনো শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, পুরো রাষ্ট্রকাঠামোর রূপান্তর ঘটাতে পারে।
এই তিনটি প্রত্যাবর্তনের মধ্যে একটিই মিল রয়েছে, সেটি হলো, নির্বাসন শেষে প্রত্যাবর্তন নেতাকে নতুন দায়িত্বের মুখোমুখি দাঁড় করায়। প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কেমন রাজনীতি করবেন, সেটাই নির্ধারণ করে ইতিহাসে তার অবস্থান।
তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন সামনে এসেছে। তিনি কি ম্যান্ডেলার মতো পুনর্মিলনের পথে হাঁটবেন, বেনজির ভুট্টোর মতো অস্থির রাজনৈতিক বাস্তবতায় লড়াই করবেন, নাকি খোমেনির মতো পুরো রাজনৈতিক কাঠামো বদলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সামনে আনবেন— এই প্রশ্নের উত্তর দেবে সময় ও তার সিদ্ধান্ত।
একটি বিষয় নিশ্চিত যে, বিশ্ব রাজনীতির অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাসন শেষে প্রত্যাবর্তন কখনোই কেবল একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরা নয়; এটি একটি জাতির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সঙ্গে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ঘটনা।
লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও অধিকারকর্মী
ঢাকা/ইভা/তারা