‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কাদেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। ফাইল ফটো
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে এখন আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন চলছে। আমাদের রাজনীতি করতে দেবে কি না, তা নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা যেহেতু এ প্রেক্ষাপটে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করা যাচ্ছে না, সে কারণে জি এম কাদেরবিহীন জাতীয় পার্টি গঠনের চেষ্টা চলছে।’’
সোমবার (২৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরাই বলছে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয় বলে মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, ‘‘যখন আমাদের মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতাকর্মীদের আটক, অফিস-বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তখন সরকার উৎকণ্ঠিত হয়নি, এমনকি দুঃখ প্রকাশও করেনি।’’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘যেদিন থেকে আমি সরকারের সমালোচনা করা শুরু করেছি, সেদিন থেকে আমার নামে মামলা দেওয়া শুরু করেছে। আমার নামে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। আমার পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডর মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন সরকারের ঘনিষ্ঠরাই বলছেন, এই সরকারের মধ্যেই আরেকটা সরকার আছে। সরকার ঘনিষ্ঠরাই বলছে, এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তারাই বলছে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয়।’’
জিএম কাদের বলেন, ‘‘কোটা বিরোধী আন্দোলনই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। কিন্তু, দুঃখের বিষয় কোটা তো এখন আরো বেড়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার পর দেশে এখন আবার বৈষম্য বেড়ে গেছে। চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশের অন্যায়ের মাত্রা আরো বেড়েছে।’’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এখন যারা সরকার চালাচ্ছে, তাদের চেয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা অনেক বেশি সক্রিয় ছিলাম। আমরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী নেতৃত্ব দেওয়ায় রংপুরে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছিল। অন্তত চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমাদের দুই জন নেতা শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।’’
তিনি বলেন, ‘‘শহীদ আবু সাঈদের কবর রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সবার আগে আমি জিয়ারত করেছি। জাতীয় পার্টি আবু সাঈদের পরিবারকে সান্ত্বনা ও সহায়তা দিয়েছে।’’
বিবৃতিতে জিএম কাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘দেশে বেকারের সংখ্যা চরম আকার ধারণ করেছে। দোসর আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন কলকারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে, গোডাউনে আগুন দেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলোর শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। দেশে কেউ নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের বিদেশি আয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে রেমিটেন্স আর অন্যটি তৈরি পোশাক রপ্তানি। গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেলে শুধু রেমিটেন্স দিয়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব হবে না। বিজিএমইএ সূত্র বলছে, আগামী এক-দেড় মাসে নতুন করে আরো অন্তত ১০ লাখ শ্রমিক বেকার হবেন। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো চলছে তা বিল না পেয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে।’’
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, ‘‘বাংলাদেশে দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু, দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় মানুষের যে দুর্ভোগ হয় তা কয়েকগুণ বেড়ে যায় দুঃশাসনের কারণে। যখন রাষ্ট্রে সঠিকভাবে কাজ হয় না, দুর্নীতির হার আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়ায় তখন যেকোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় মানুষের দুর্ভোগের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘মাইলস্টোন স্কুল দুর্ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জনরোষের শিকার হয়ে ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। গণ-মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার চেষ্টা করেও তাদের উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছিল। অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা উদ্ধারের পর সরকার একটি জরুরি সভা ডাকলেন। দেশের মানুষ ভেবেছিল, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সরকার গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। কিন্তু, দেশবাসীকে হতাশ করে নিজেদের রক্ষায় সমমনাদের দিয়ে একটি জোট গঠন করা হলো। যখন শিশু হারিয়ে মা-বাবার হাহাকার চলছে, আহত শিশুর চিকিৎসা ও বেঁচে থাকা নিয়ে অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে আছে, তখন সরকার নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে জোট গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।’’
দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা রোধে বা মোকাবিলার জন্য সরকার জোট গঠন করেনি অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, ‘‘জোট গঠন করা হয়েছে, স্বজনহারা অভিভাবক ও সাধারণ সচেতন মানুষের আক্রোশের হাত থেকে বাঁচতে। সরকারের কথা হচ্ছে, যারা প্রতিবাদ করেছে তারা হচ্ছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসর। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করলেই তারা আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে যাচ্ছে।’’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, মাইলস্টোন স্কুলের সামনে যারা সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা কি সবাই আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ?
তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা সাধারণ ছাত্র ও জনগণ। বর্তমান সরকার দেশকে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার দেশে পরিণত করেছে। কে কাকে মারবে, কে কাকে নির্যাতন করবে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে এতদিন যে মব ভায়োলেন্স মানুষকে পিটিয়ে মেরেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে, আমাদের অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে, আমাদের ইফতার পার্টিতে দফায় দফায় হামলা হয়েছে, তখন সরকারের নিন্দা জানানো বা উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখিনি। যখন সরকারের মানুষেরা নিজেরাই মবতন্ত্রের শিকার হয়েছেন, তখন তাদের উপলব্ধি হয়েছে এটা ভালো নয়। নিন্দা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করছি। তারা আত্মরক্ষার কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। দেশের অধিকাংশ মানুষকে ফ্যাসিবাদের দোসর বানিয়ে সরকার বিপদে পড়েছে।’’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাজীব