ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভাত পায়েস পোলাও পান্তা এক চালেই সব

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৩, ১৮ মে ২০২৫   আপডেট: ১১:২০, ১৮ মে ২০২৫
ভাত পায়েস পোলাও পান্তা এক চালেই সব

চিকন চাল। ভাত খেতে সুস্বাদু। একই চাল দিয়ে রান্না করা যায় ভাত, পোলাও, পায়েস, বিরিয়ানি ইত্যাদি। এমনকি এই চালের পান্তা ভাতও ভালো হয়। আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই চাষ করা যায় এই ধান। রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লার নূর মোহাম্মদ তিন বছর আগে এই ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। নিজের নামানুসারে তিনি জাতটির নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান-২’। 

নূর মোহাম্মদ কৃষকপর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। মূলত খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের অভাবে ধানখেত নষ্ট হতে দেখে গবেষণায় আগ্রহী হন তিনি। দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রম এবং একাগ্রতার সঙ্গে গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছেন আউশ, আমন ও বোরো ধানের প্রায় ২০০ কৌলিক সারি। স্বশিক্ষিত এই কৃষিবিজ্ঞানীর দাবি, তার উদ্ভাবিত সারিগুলোর জীবনকাল অন্যান্য জাতের তুলনায় উচ্চফলনশীল, সরু, সুগন্ধিযুক্ত এবং খরাসহিষ্ণু।

আরো পড়ুন:

কৃষিতে এমন অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। গত বছর নভেম্বরে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক আয়োজিত এ সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।

গত ৭ মে নূর মোহাম্মদের জমি থেকে নূর ধান-২ কাটা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  লিয়াকত সালমান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেনসহ এলাকার কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ দিন নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা ফার্মে গবেষণা প্লটের ৩৩টি সারি ও জাতের মধ্যে শুধু নূর ধান-২ কাটা হয়। মাড়াই শেষে বিঘাপ্রতি ২৬ মণ ধান পাওয়া যায়। চালের হিসেবে বিঘাপ্রতি ১৬ দশমিক ৬ মণ। কাটার সময় পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ছিল ১১৩ সেন্টিমিটার। কুশির সংখ্যা ছিল গড়ে ১১টি। ছড়ার গড় দৈর্ঘ্য ২৬ সেন্টিমিটার। এক হাজার পুষ্টদানার ওজন ১২ দশমিক ৭০ গ্রাম। গাছের জীবনকাল ১৪০ দিন। 

নূর মোহাম্মদ জানান, আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই এই ধান চাষ হয়। আমনে বিঘাপ্রতি গড় ফলন পাওয়া যাবে ১৯ মণ। সেই তুলনায় বোরো মৌসুমে ফলন অনেক বেশি। এবার বোরো মৌসুমে রাজশাহীর কিছু চাষী তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে এই ধান চাষ করেছেন। এছাড়া নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মাগুরা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার ও খুলনায় তার বীজে এই ধান চাষ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রসারণের জন্য অল্প মূল্যে তিনি সবাইকে বীজ সরবরাহ করেন। 

নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘গত বছর অনেকে আমার কাছ থেকে বীজ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে এবার কেউ কেউ বীজ নিয়েছেন। এভাবে জাতটি ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। এই চালে ভাত দিয়ে পান্তা ও খিচুড়ি যেমন খাওয়া যায়, তেমনি পায়েস, বিরিয়ানি, তেহারি, পোলাও ভালো হয়।’’

নূর মোহাম্মদের দাবি, নতুন এই ধানের গাছ মজবুত, সহজে হেলে পড়ে না। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য জাতের তুলনায় কম। স্বল্প জীবনকাল, উচ্চ ফলনশীল,  সরু চিকন,  সুগন্ধিযুক্ত ও খরাসহিষ্ণু। ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সেচ বা বৃষ্টি না পেলেও খরা মোকাবিলা করে ভালো ফলন দিতে সক্ষম এই জাত। এক চালেই সব হওয়ায় বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘‘ধান কাটার দিন আমি খেতে ছিলাম। ধানের সব কিছু ভালোই মনে হয়েছে। নূর মোহাম্মদ এক কেজি চাল অফিসে পাঠিয়েছিলেন। চাল খুব সরু। বাজারে যে জিরা ধানের চাল পাওয়া যায়, এটি তার চেয়েও সরু এবং মানের দিক থেকেও ভালো। ফলে এই চাল দিয়ে সব কিছুই খাওয়া যাবে।’’
 

কেয়া//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়