ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন: কেন দুটি মাস্ক পরবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৩ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০৯:২০, ১৩ এপ্রিল ২০২১
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন: কেন দুটি মাস্ক পরবেন?

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনাভাইরাসের তিনটি নতুন ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ধরনগুলোর জিনগত পরিবর্তন বেশি ঘটেছে। যে কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ পূর্বের চেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এ সময় সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ডাবল মাস্ক পরা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুটি মাস্কের ব্যবহার একটি মাস্কের তুলনায় অধিক কার্যকর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের ডিরেক্টর, হোয়াইট হাউজের চিফ মেডিক্যাল অ্যাডভাইজার ও ইমিউনোলজিস্ট ডা. অ্যান্থনি ফসি একই ধরনের মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলছেন, একটি কাপড়ের মাস্কের নিচে একটি মেডিক্যাল গ্রেড মাস্ক পরলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

যেহেতু বারবার বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনগুলো মূল ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রামক, তাই এসময় একসঙ্গে দুটি মাস্ক পরার গুরুত্ব যে আরো বেশি তা সহজেই অনুমেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনগুলো মানুষের কোষে সহজেই সংযুক্ত হতে পারে। তাই এসময় বেশি লেয়ার দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে নিলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। দুটি মাস্ক নাক-মুখ ও ভাইরাসের মধ্যে মজবুত ঢাল হিসেবে কাজ করে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত রিচার্ড এম. ফেয়ারব্যাংকস স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি এডুকেশনের পরিচালক থমাস ডুসাইনস্কি বলেন, ‘যত বেশি লেয়ার ব্যবহার করবেন, আপনার ও ভাইরাসের মধ্যে তত বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে, ফলে সুরক্ষার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।’

দুটি মাস্ক ব্যবহার করবেন কীভাবে?

সুরক্ষার ক্ষেত্রে এন৯৫ ফেস মাস্ক হলো গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের। যদি আপনি এই মাস্কের সঙ্গে একটি সার্জিক্যাল মাস্ক পরেন তাহলে ভাইরাস কণার বিরুদ্ধে কার্যকরী ঢাল তৈরি হবে। কিন্তু এন৯৫ ফেস মাস্ক সবসময় পাওয়া যায় না বলে এর বিকল্প কোন মাস্ক সবচেয়ে বেশি ভালো হবে বিবেচনা করতে হবে। ইয়েল মেডিসিনের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক এবং ইয়েল'স ফাইজার কোভিড-১৯ ট্রায়ালের প্রধান পর্যবেক্ষক ওনায়েমা ওগেবোয়াগুর মতে, মাস্ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভাইরাস পরিস্রাবণের সক্ষমতা ও বায়ু চলাচলের সহজবোধ্যতা আছে কিনা দেখতে হবে। হাসপাতালের বাইরে ব্যবহারের জন্য কেএন৯৫ মাস্ক এন৯৫ মাস্কের চেয়ে ভালো বিকল্প বিবেচনা করা হয়।

যে মাস্কের বাতাস বা ভাইরাস পরিস্রাবণের ক্ষমতা বেশি সেই মাস্ক প্রথমে পরুন। টাইট করে মাস্ক পরুন, অন্যথায় ফাঁক দিয়ে দূষিত বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এবার এর ওপর একটি কাপড়ের মাস্ক বা সার্জিক্যাল মাস্ক পরুন। অর্থাৎ আপনি এন৯৫, কেএন৯৫ এবং সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর কাপড়ের মাস্ক বা সার্জিক্যাল মাস্ক পরতে পারেন। প্রয়োজনে একটি সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর আরেকটি সার্জিক্যাল মাস্ক পরুন।

মাস্কে যত বেশি লেয়ার থাকবে তত বেশি নিরাপদ থাকবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, মাল্টিপল লেয়ারের মাস্ক ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ছোট তরলকণা (যা কাশির সময় বের হয়) ব্লক করতে পারে। কাপড়ের মাস্ক তিন লেয়ারের হলে ভালো হয়।

দুটি মাস্ক ব্যবহারে ঝুঁকি

মাস্কের কিছু উপাদান শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধায় ভোগাতে পারে। বিশেষ করে যারা শ্বাসকষ্টের রোগী। ডা. ওগেবোয়াগু বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে আপনি ১০ লেয়ারের মাস্ক পরতে পারেন, কিন্তু এতে সমস্যা হলো বাতাস সহজে চলাচল করতে পারবে না। ফলে শ্বাসক্রিয়া কঠিন হবে। তাই বিপদ এড়াতে যত ইচ্ছে তত লেয়ারের মাস্ক ব্যবহার করা যাবে না।’

যদি দুটি মাস্ক ব্যবহারে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় (শ্বাসকষ্টের রোগী হলে), তাহলে আপনাকে সবচেয়ে কার্যকর মাস্ক বেছে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে এন৯৫-এর বিকল্প নেই।

ফিরোজ/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়