হার্টের জন্য কোন তেল নিরাপদ?
দেহঘড়ি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: প্রতীকী
হার্টের স্বাস্থের জন্য ‘আনরিফাইন্ড’ তেল সবচেয়ে ভালো। সেই বিচারে কোন তেল হার্টের জন্য কতটা ভালো- এই প্রশ্নটা করা যেতে পারে। টেলিভিশনে তেলের বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে মনে হবে, এই তেলটাই বুঝি সবচেয়ে ভাল। তবে বিজ্ঞাপনগুলোর ফাঁদে না পড়ে চিকিৎসকেরা কী বলছেন, সে কথায় গুরুত্ব দিতে হবে।
ইদানীং হার্টের সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের অনেকেই কমবয়সি। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘অনেকে জিনগত কারণে বা জন্মগতভাবে হার্টের অসুখে ভুগে থাকেন। আবার অনেকেই খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকেন না বলে, এই রোগে ভুগতে থাকেন।’’
পুষ্টিবিদেরা কিন্তু বার বার বলেছেন, খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সতর্ক না হলে এই রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়। ডায়েট থেকে একেবারে বাদ দিতে হবে বাইরের ভাজাভুজি, তেলমশলাদার খাবার, প্যাকেটজাত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। আবার বড়ির খাবার হলেও, কোন তেলে রান্না হচ্ছে সেটাও এ ক্ষেত্রে বিচার্য।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এমন তেল প্রতিদিনকার ডায়েটে রাখতে পারেন। যা যা ‘আনরিফাইন্ড’ এবং যাতে স্যাচুরেটেড আর ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা কম-এমন তেল খাওয়া ভালো। স্বাস্থ্যকর তেল হলো যে তেলে মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকে।’’
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল হৃদ্রোগীরা খেতে পারেন। এই তেলে ভালো মাত্রায় রয়েছে মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। অলিভ অয়েলে ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে দেয় না। আর কোলেস্টেরল বশে থাকলে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমে।
বাদাম তেল
চিনাবাদামের তেলে স্যাচুরেটেড তেলের মাত্রা কম থাকে। তবে মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে এই তেল শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা আর প্রদাহ কমাতে সহায়ক। তা ছাড়া বাদামের তেল শরীরে রক্তের প্রবাহমাত্রা সচল রাখতেও উপকারী। সেজন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে, তারাও এই তেল প্রতিদিনকার ডায়েটে রাখতে পারেন। তবে বাদামে অ্যালার্জি থাকলে এই তেল খাবেন না।
সরিষার তেল
শোনা যায়,হার্টের সমস্যা থাকলে সর্ষের তেল খাওয়া যায় না! কিন্তু এই ধারণা ভ্রান্ত বলে মনে করেন বহু চিকিৎসক। বরং তারা বলেন, হার্টের রোগীদের জন্য সরিষার তেল উপকারী। এই তেলেও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা কম থাকে। আর মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকে। সরিষার তেল রক্তচাপ বাড়তে দেয় না। শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। সরিষার তেলে থাকা উপাদান ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।
এই তিন প্রকার তেল রোজের ডায়েটে রাখলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল, বিএলডিএল) মাত্রা কমবে আর ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বাড়বে। এসব তেল শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে উপকারী বলেই এই তেলে ভাজাভুজি খাওয়া শুরু করলে কিন্তু ভালোর চেয়ে মন্দ বেশি হবে।
পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে তিলের তেল কিংবা রাইস ব্র্যায়ান অয়েল দিয়ে প্রতিদিনকার রান্না করা যেতে পারে। তবে পরিমাণের বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’’
প্রতিদিনকার ডায়েটে তেলের পরিমাণের বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। পরিমাণ বাড়লেই কিন্তু হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়তে সময় লাগবে না।
ঢাকা/লিপি