ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কাগজের নোটে করোনা ঝুঁকি, শঙ্কায় ব্যাংকাররা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাগজের নোটে করোনা ঝুঁকি, শঙ্কায় ব্যাংকাররা

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে চলছে সাধারণ ছুটি। ছুটি হলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমদানি-রপ্তানিকারকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরুরি ব্যাংকিং সেবা দিতে খোলা রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অনেক শাখা।

তবে ব্যাংকিং কার‌্যক্রম চললেও উদ্বেগের প্রধান জায়গা হচ্ছে কাগুজে নোট।   বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞরা টাকার মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকির কথা বলেছেন। কারণ টাকার অবিরাম হাত বদলই জীবাণু আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর এই মারাত্মক ছোঁয়াচে চরিত্র কাগুজের নোট ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাস জড় বস্তুতে নিষ্ক্রিয় হলেও মানুষের সংষ্পর্শে সক্রিয় হয়।  সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা রোগের সৃষ্টির ক্ষেত্রে টাকায় ঝুঁকি অনেক বেশি।  সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, ব্যাংকগুলো ক্যাশ কাউন্টারে কাজ করা ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এহেতাশামুল হক এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, যারা এক্সপার্ট আছেন, তারা মোটামুটি নিশ্চিত করেছেন যে, টাকা লেনদেনের সঙ্গে করোনার ঝুঁকির সম্পৃক্ততা আছে। এজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে টাকার লেনদেন করতে হবে। করণীয় বলতে ক্যাশে যিনি কাজ করবেন, তিনি যতটুকু সম্ভব মেশিনে টাকা গুনবেন ও  গ্রাহককে যতটুকু সম্ভব ডিজিটাল সেবা দিবেন। এছাড়া ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, সেটা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিষয়।

একটি সরকারি ব্যাংকের ক্যাশে কাজ করেন নাম প্রকাশ না করা শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন, নিয়মিত ক্যাশে কাজ করায় সব সময় শঙ্কায় থাকতে হয়। মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লোবস পড়ে কাজ করি।  এতো টাকা হাতে নিতে হয় যে, সতর্ক থাকা মুশকিল। কিন্তু টাকার সাথে থাকা জীবাণু থেকে কতটুকু মুক্ত থাকতে পারব, আল্লাহই ভালো জানেন। 

কাগজের নোট হাতবদলের করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই বিভিন্ন উদ্যাগ নিয়েছে। ১৪ দিন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাংক নোট কোয়ারেন্টাইন করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অনেক দেশ অতিবেগুনী রশ্মি এবং উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে নোটগুলো জীবাণুমুক্ত করেছে।  এমনকি অনেক দেশ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যাংক নোট পুড়িয়েও ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশে নগদ টাকার মাধ্যমেই অধিকাংশ আর্থিক লেনদেন হয়। তবে সব সময়ে অভিযোগ, দেশের কাগুজে নোট অন্যান্য দেশের নোটের তুলনায় ময়লা ও অপরিষ্কার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে বাজার থেকে নোংরা ও ব্যবহার অযোগ্য নোট সরিয়ে নেয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।  পরিস্থিতি বুঝে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নিবে।

২০১৫ সালে ভারতের দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন - যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে সক্ষম। তাই স্পর্শবিহীন লেনদেন যেমন- কার্ড, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ, যেমন বিকাশ বা নগদ অথবা অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের উপর জোড় দিয়েছিলেন তারা।  এজন্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ব্যাংক নোট ব্যবহারের বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- টাকা গোনার সময় অবশ্যই হাত দিয়ে মুখের লালা না দেওয়া, ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, ব্যাংক কর্মী বা মানি এক্সচেঞ্জের মতো অত্যধিক মুদ্রা নাড়াচাড়া যারা করেন, তাদেরকে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকা, টাকা ধরা বা ব্যবহারের পরপরই চোখ, নাক বা মুখে হাত না দেওয়া এবং এটিএম বুথের বাটন বা টাকা থেকেও সংক্রমণ প্রতিরোধে টাকা তোলার পর সতর্কতা হিসেবে হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।

অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে সামাজিক দূরত্ব (৩ মিটার) বজায় রাখতে নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্বব্যাংকের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা অনুসরণ করতে জোড় দিয়েছে ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংকেই গ্রাহক লেনদেনের সময় নিয়ম অনুসরণ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।  তবে করোনার মতো ভাইরাস রোধে কাগুজে নোট লেনদেনের বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।  শাখা পর্যায়ে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নিরাপত্তাই কার‌্যকর আছে এখন।

কাগুজে নোট লেনদেন ব্যতিত এ মুহূর্তে কি করণীয় আছে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, অর্থের লেনদেন পুরো বিশ্বজুড়েই চলমান। যতই আমরা ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কথা বলি না কেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত টাকার লেনদেনের সাথে সবাই জড়িত।  প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো বটেই। এ কারণে ব্যাংকগুলো সীমিত হলেও খোলা রাখতেই হবে।  তাছাড়া অর্থনীতি সচল রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে টাকার করোনাভাইরাস ঝুঁকি থাকলেও ঝুঁকি যতটা পরিমাণ কমিয়ে লেনদেন অব্যাহত রাখা জরুরি।  করণীয় বলতে প্রত্যেক শাখাকে করোণার ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়