ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আহলান, সাহলান ‘মাহে রমজান’

নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ৬ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আহলান, সাহলান ‘মাহে রমজান’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : আহলান ওয়া সাহলান ... খোশ আমদেদ মাহে রমজান।

 

আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার বার্তা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের কাছে ফিরে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান মাস।

 

সোমবার সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে মাহে রমজান।

 

ইসলামী রীতি অনুযায়ী হিজরী সনের নবম মাস হলো মাহে রমজান। ইসলামের মূল স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। এর মধ্যে অন্যতম এই ‘মাহে রমজান’ তথা সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল করীমে এরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা ‘পরহেজগার’ হতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

 

আর তাকওয়া কিংবা পরহেজগারিতাই হচ্ছে রমজানের মূল আধ্যাত্মিক শিক্ষা। রমজানের এই আধ্যাত্মিক শিক্ষার মূল্যও অপরিসীম। মূলত ‘মুত্তাকি’ বানানোই হচ্ছে রোজার কিংবা সিয়াম সাধনার আসল উদ্দেশ্য।

 

বিশ্ব মুসলিমের কাছে মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই রমজানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রতিটি মুসলিমের অফুরন্ত আবেগ ও নিখাদ শ্রদ্ধা।

 

মাহে রমজানের কতখানি গুরুত্ব ও তাৎপর্য তা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সূতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার (রোজাদার) সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি সাওম পালন করছি, তথা আমি রোজাদার। ওই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই রোজা পালনকারির মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট ...।’ (বুখারী)

 

মূলত পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই রমজান মাসকে মহানবী (সা.) নিজেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।

 

রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার মতো আল্লাহর আশিসধারা রোজাদারদের অন্তররাজ্যে লোকদৃষ্টির অলক্ষ্যে বর্ষিত হতে থাকে। প্রথম ১০ দিন রহমতে পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত।

 

এই রমজান মাসে আল্লাহ পাক এতো বেশি রহমত-বরকত নাজিল করেন যাতে বান্দাহর কৃতগুনাহ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তার বান্দাহর জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন, জান্নাতের দরজা খুলে দেন, বন্ধ করে দেন জাহান্নামের সবদরজা। এমাসেই বড় বড় শয়তানকে আটকে রাখা হয়। এমাসে শুধু মুসলমানগণ নয়, সবসৃষ্টিই আল্লাহর খাস রহমত লাভ করে। এমাসেই মানবজাতির একমাত্র দিক নিদর্শন কুরআন করীম অবর্তীর্ণ করেন। এমাসে বান্দাহর জন্য এমন একটি রাত উপহার দিয়েছেন যা এবাদত- বন্দেগীর জন্য হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।

 

সিয়াম তথা সউম এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। আর শরয়ী অর্থ বর্ণনা করে ফতোয়া আলমগীরিতে বলা হয়েছে, ‘মুসলিম নর নারীগণ সোবেহ সাদেক থেকে সুর্য্যাস্ত পর্যন্ত এবাদতের নিয়তে পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে রোজা।

 

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, মাস উনত্রিশ দিনেও হয় বিধায় চাঁদ দেখে রোজা শুরু কর এবং চাঁদ দেখে রোজা বন্ধ কর। যদি উনত্রিশে রমজান চাঁদ দেখা যায় তাহলে রোজা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।’

 

‘রমজান’ শব্দটির মধ্যে এ মাসের মহান তাতপর্য লুকায়িত। চমৎকারভাবে সকল মহত্বকেই যেন এ পরিপূর্ণ শব্দটি ধারণ করে রেখেছে। রমজান শব্দটি এসেছে ‘রমজ’ থেকে। রমজের দুটি অর্থ- একটি জ্বালিয়ে ফেলা, পুড়িয়ে ফেলা, অন্যটি হলো মরুদ্যানের আকস্মিক বৃষ্টি।

 

রমজ শব্দের প্রথম অর্থ যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে এভাবে বলা যায়, রমজানের সিয়াম সাধনা, এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মুমিন বান্দাহ তার চরিত্রের অবাঞ্ছিত দিককে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একেবারে ছাই করে ফেলে এবং খাঁটি বান্দাহ হিসেবে পরিগণিত হন।

 

একইভাবে মরুদ্যানের আকস্মিক বৃষ্টি যেমন মরুভুমির মানুষদের দেহ মন আত্মা ও সার্বিক পরিবেশকে সজীব করে তুলে ঠিক তেমনি রমজানও পাপ-পন্কিলতায় নিমজ্জিত বান্দাহর জীবনে রহমতের বৃষ্টি বয়ে আনে। বিশুদ্ধ ও স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

 

রোজা –মূলত আল্লাহ এবং তার বান্দাহর মধ্যে মিলনসেতু রচনা করে বান্দাহকে মুত্তাকির সর্বোচ্চ আসনে আসীন করে। আর এটি রোজার আধ্যাত্মিক শিক্ষার মূল তাৎপর্য। এই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারলে মুসলমানগণ নিশ্চয়ই ইহকালে কল্যাণ ও পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারবেন।

 

মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজানে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে রহমত কামনার জন্য উত্তম।

 

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাহে রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করে, ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকবেন; এমন ব্যক্তিরাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। প্রকৃত ও খাঁটি রোজাদাররা এতে অবগাহন করে ১১ মাসের পুঞ্জীভূত পাপ-পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা থেকে পরিশুদ্ধ ও পূতপবিত্র হয়ে যান।

 

যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করে থাকেন।

 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং তিনি কিছু রুদ্ধ করতে চাইলে এরপর কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই।’ (সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ২)

 

আসুন, আমরা যারা মুমিন মুসলমান দাবিদার তারা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলি। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দিয়েছেন তা যেন একাগ্র এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাজে লাগাই।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুন ২০১৬/নঈমুদ্দীন/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়