ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

 করোনায় বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ৩১ অক্টোবর ২০২০  
 করোনায় বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা

চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্বব‌্যাপী হানা দেওয়া করোনার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও।  প্রাণহানির মতো ঘটনার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আর্থিক খাতে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) ভাটা পড়েছে।  ইতোমধ্যে ২০২০ সালের (কিউ-১)-এর এফডিআই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, দেশে এফডিআইয়ের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে  ৫৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যেখানে  ‍২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ১০৩ কোটি ৫৫  লাখ ৬০ হাজার ডলার। এই হিসাবে  এক বছরে এফডিআই কমেছে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

সম্প্রতি জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলন (ইউএনসিটিএডি)-এর সর্বশেষ গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ডস মনিটরের পরিসংখ্যান  প্রতিবেদনেও করোনায় বিশ্বব্যাপী এফডিআই কমে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ  লকডাউন ঘোষণা করায় চলমান বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর গতি কমে যায়। এতে বহুজাতিক উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়।

উল্লেখ‌্য, দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ।  সাধারণ ছুটির নামে লকডাউন শুরু হয় ২৬ মার্চ থেকে। এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আগেই বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ৪৪ শতাংশ কম ছিল। আর জানুয়ারির আগে ২০১৯ সালের পুরো সময়ই ২০১৮ সালের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ কম ছিল। ২০১৯ সালে নিট এফডিআই প্রবাহ ২০১৮ সালের তুলনায় ছিল ২০ শতাংশ কম। বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, করোনা দীর্ঘায়িত হলে চলতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমতে পারে।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিনিয়োগ প্রস্তাব আসার পর তা  বাস্তব রূপ পেতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। গত বছর যেসব বিনিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর নিবন্ধন হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তখন নিবন্ধনের পরিমাণ কম ছিল। ২০১৭ সালে দেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরে এর সুফল পাওয়া যাবে। আশা করছি, আগামী বছরগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগে একটি বড় ধরনের সাড়া পাওয়া যাবে।’  

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড.এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘মূলত করোনার কারণে বাংলাদেশে এফডিআই কমেছে। যদিও এর প্রবাহ কিছুটা ধীরগতি ছিল।’ তিনি আরও বলেন,  ‘বিদেশি  বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার বিশ্বব্যাংকের  সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতির পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২১ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯ দেশের মধ্যে কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এ সূচকে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম।’

ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এর মধ্যে সরকারি খাতে ছয়টির কাজ এগোচ্ছে। বেসরকারি খাতে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী বেশ কিছু আইন সংস্কারের কাজ চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, অর্থবিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

ইউএনসিটিএডি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনার ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ প্রায় ১৯ শতাংশ কমে এসেছে। অবশ্য ইউএনসিটিএডি প্রথম ত্রৈমাসিকের  (জানুয়ারি-মার্চ)  প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্ধ-বার্ষিক এফডিআই পরিসংখ্যানটি প্রাক্কলন করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে, ২০২০ সালের জুন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্বব্যাপী এফডিআইয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল।  

ঢাকা/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়