ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মোটরযানের ট্যাক্স ও ফি জমা দেওয়ার চাপ বেড়েছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ৫ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১২:৪৯, ৫ জানুয়ারি ২০২১
মোটরযানের ট্যাক্স ও ফি জমা দেওয়ার চাপ বেড়েছে

মোটরযানের ট্যাক্স এবং ফি অনলাইন ব্যাংক ব্যবস্থায় পরিশোধের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান মেসার্স কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস-এর মেয়াদ শেষ হয়নি। তবে চুক্তির আওতায় কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে অতিরিক্ত কাজের জন্য চুক্তি মূল্যের ৪৮ কোটি ২ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র জানায়, বিআরটিএর দেওয়া সেবার মধ্যে মোটরযানের কর ও ফি আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং সহজে, দ্রুত ও নিশ্চিতভাবে কর কিংবা ফি জমা দেওয়ার জন্য ডাক বিভাগের পরিবর্তে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ২০১০ সাল থেকে নির্বাচিত সার্ভিস প্রোভাইডার এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে ৫ বছর মেয়াদে বিআরটিএর সঙ্গে মেসার্স কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস (সিএনএস) লিমিটেড এর চুক্তি হয়।  চুক্তি মূল্য ছিল ভ্যাটসহ মোট ১৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।  যার মেয়াদ আগামী ১৬ জুলাই (২০২১) শেষ হবে।

সূত্র জানায়, চুক্তির শর্তানুযায়ী সার্ভিস প্রোভাইডার কর্তৃক অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিভিন্ন কর ও ফিসহ মোট ১৪টি খাতে আদায় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত কোডে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। আদায় হওয়া রাজস্বের বিপরীতে সার্ভিস প্রোভাইডারকে মোটরযান কর ও ফি এর  ট্রানজেকশন সংখ্যার ভিত্তিতে এবং প্রতিটি ট্রানজেকশনের জন্য নির্ধারিত হারে সার্ভিস চার্জ মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা হয়। যে কারণে কোভিড-১৯ মহামারির সময় সার্ভিস প্রোভাইডার কর্তৃক সীমিতসংখ্যক কর ও ফি এর ট্রানজেকশন সম্পন্ন করায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ভ্যাটসহ মাত্র ২ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করা হয়।

পক্ষান্তরে গত মার্চ মাসে ভ্যাটসহ ৩ কোটি ৪ লাখ ১৩ হাজার ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করা হয়।  চুক্তিতে বর্ণিত ৫ বছরের জন্য ১৪ ধরনের মোট সেবার পরিমাণ ছিল প্রক্ষেপিত ট্রানজেকশন সংখ্যা, সার্ভিস চার্জের রেট কিংবা হার ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজারের বিপরীতে সেবা মূল্যের পরিমাণ ছিল ১৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের নভেম্বরে  ৪ বছর ৩ মাস পার হয়েছে।  তবে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর বাস্তবায়ন এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে মোটরযানের বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি এর ওপর বিলম্বজনিত জরিমানা সরকার কর্তৃক ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ পর্যন্ত মওকুফ করায় কর ও ফি এর পরিমাণ বেড়েছে।  এছাড়া রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু হওয়ায় মোটরযানের বিশেষত মোটরসাইকেল এর রেজিস্ট্রেশন দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় কর ও ফি জমার পরিমাণ বেড়েছে।  মোটরসাইকেলের কর ও ফিসহ মোটরযান সংক্রান্ত কর ও ফি এর ১৪টি খাতের মধ্যে অধিকাংশ খাতের ট্রানজেকশন সংখ্যা সার্বিকভাবে বেড়েছে।  

সূত্র জানায়, বিআরটিএর সব সেবা (মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রোড ট্যাক্স, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলি, রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) ইত্যাদির জন্য নির্ধারিত হারে কর ও ফি পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। বিআরটিএর জেলা ও মেট্রো এলাকায় অবস্থিত সার্কেল অফিস  প্রতিদিন সহস্রাধিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন সেবা দেয়।  এছাড়া মোটরযান সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য উক্ত সিস্টেমের সঙ্গে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), পুলিশ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংযুক্ত রয়েছে।  এই সেবা অব্যাহত রাখার জন্য মোটরযানের কর ও ফি পরিশোধ  কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি।

সূত্র জানায়, পরবর্তী মেয়াদে সার্ভিস প্রোভাইডার নির্বাচনের জন্য দরপত্র দলিলাদি প্রস্তুত করা হয়েছে। দরপত্র কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আনুমানিক আরও ৫-৬ মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।  ফলে বর্ণিত সার্ভিসগুলো অব্যাহত রাখার স্বার্থে চলমান চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া চুক্তি মূল্য বাড়ানো প্রয়োজন। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিগত সময়ের মোটরযান কর ও ফি আদায়ের প্রবণতা বিবেচনা করে চুক্তির মেয়াদের মধ্যে চুক্তির অতিরিক্ত ৭৬,৯৭,৫৭৭টি মোটরযান কর ও ফি ট্রানজেকশন হতে পারে, যার মূল্য চুক্তি মূল্যের অতিরিক্ত ভ্যাট ছাড়া ৪১,৭৫,৭৮,০০০ টাকা এবং ভ্যাটসহ (১৫ শতাংশ  ৬,২৬,৩৬,৭০০ টাকা) ৪৮,০২,১৪,৭০০ টাকা।

উল্লেখ্য, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট খাতে মোট ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে-যার মধ্যে ২৯ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮২ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।  এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রক্ষেপণে এ খাতে ৪৬ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অবস্থায় চুক্তির অতিরিক্ত সরবরাহ ও পুনরাবৃত্ত সরবরাহ সংক্রান্ত পিপিআর ২০০৮ এর বিধি শর্তানুযায়ী উক্ত চুক্তির মেয়াদ অপরিবর্তিত রেখে চুক্তিমূল্যের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ভ্যাটসহ ৪৮ কোটি ০২ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে।

হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ