ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

স্ত্রী-ছেলেকে খুন করে লাশ উদ্ধারে শ্বশুরকে ফোন দেন রুবেল

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ২ এপ্রিল ২০২১  
স্ত্রী-ছেলেকে খুন করে লাশ উদ্ধারে শ্বশুরকে ফোন দেন রুবেল

রাজধানীর কড়াইল বস্তি (ফাইল ফটো)

শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন সহ‌্য করতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন হাসি খাতুন। ছেলেকেও সঙ্গে নিয়ে আসেন। বিশ্বাস ছিল, মা-বাবা, ভাই-বোনের কাছে থাকলে নিরাপদে থাকতে পারবেন। কিন্তু স্বামী রুবেলের কূটকৌশলে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে। একই পরিণতি হয়েছে ছেলে নীরবেরও। স্ত্রী ও ছেলেকে খুন করার পর শ্বশুরকে ফোন করে লাশ উদ্ধার করতে বলেন রুবেল।

এসব অভিযোগ করেছেন নিহত হাসি খাতুনের বাবা রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা মো. হাতেম।

তিনি জানান, হাসি খাতুন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ১৯ মার্চ ঢাকায় বাবার বাড়িতে আসেন। এর তিন দিনের মাথায় ঢাকায় আসেন হাসির স্বামী রুবেল। হাসি ও ছেলেকে কুমিল্লা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। কিন্তু নির্যাতনের ভয়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে রাজি হননি হাসি। এ নিয়ে তাদের মধ‌্যে কলহ শুরু হয়। এর জের ধরে গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে হাসি ও ছেলে নিরবকে হত্যা করে ঝিলে ফেলে দেন রুবেল।

এ ঘটনায় মো. হাতেম রাজধানীর বনানী থানায় রুবেলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে। তবে রুবেলকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। রুবেলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মো. হাতেম বলেন, ‘রুবেল চোর, ডাকাত, খুনি। ও আগেও খুন করছে। আমরা আগে তা জানতাম না। ওর পরিবারের সবাই আমার মেয়ের ওপর অত্যাচার করত। সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা ঢাকায় চলে আসে। তারপরও ও আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিলো না। রুবেলের বাবা-মা হাসিকে খুন করার ইন্ধন দিয়েছে। সে ওর বাবা-মায়ের কথামতো খুন করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে আমি বাসায় ছিলাম না। হাসির আম্মাও অসুস্থ। সেই সুযোগে ও আমার মেয়ে আর নাতিটাকে খুন করছে। সকাল ৯টায় ফোন দিয়ে বলে, আব্বা, আপনার মেয়ে আর নাতিকে খুন করছি। ঝিলে গেলে লাশ পাবেন। পরে আমরা দুজনের লাশ দেখতে পাই। আমি ওর ফাঁসি চাই। পুলিশ যেন ওকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই শাহ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আসামিকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। তাকে ধরতে কুমিল্লাতেও গিয়েছি। সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারবো।’

হাসি খাতুনের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, সাত বছর আগে হাসির সঙ্গে বিয়ে হয় রুবেলের। ৫ বছর বয়সী ছেলে নিরবকে নিয়ে রুবেল ও হাসি কড়াইল বস্তিতে বাস করতেন। ৫ মাস আগে তারা ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লার বাড়িতে চলে যান। শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছেলে নিরবকে নিয়ে ১৯ মার্চ ঢাকায় চলে আসেন হাসি। ২২ মার্চ রুবেলও ঢাকায় আসেন স্ত্রী ও ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে। এ কথা শুনে হাসি ছেলেকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যান। হাসির মা ও ভাই-বোন তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন। ২৩ মার্চ রাত ২টা পর্যন্ত হাসি ও রুবেলের মধ‌্যে সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলে। হাসির বোন বৈশাখীর সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নিরব। ভোর ৪টার দিকে রুবেল বড় শ্যালিকা বৈশাখীকে ডেকে জানান, হাসি অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। এরপর নিরবকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যান রুবেল। রুবেল বৈশাখীকে জানান, তিনি হাসিকে খুঁজতে যাচ্ছেন। আধা ঘণ্টা পর রুবেল বাসায় এসে বৈশাখীর কাছে ২০০ টাকা চান। নিরবকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে যাবেন বলে জানান রুবেল। নিরব কোথায়, বেশাখী তা জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘ওকে চায়ের দোকানে বসিয়ে রেখে এসেছি।’ বৈশাখীর কাছে টাকা না পেয়ে শ্যালক মেহেদীর কাছে ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যান রুবেল।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রুবেল হাতেম এবং বৈশাখীকে ফোন দিয়ে জানতে চান, হাসিকে খুঁজে পাওয়া গেছে কি না? হাসিকে পাওয়া যায়নি বলে জানান হাতেম। তখন রুবেল তাদের বলেন, ‘বাসার পেছনে বিলের মধ্যে খোঁজ করলে হাসির লাশ পেয়ে যাবেন।’ নিরব কোথায় জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘তাকেও মেরে ফেলেছি। মায়ের পাশে ওর লাশ পাবেন।’ হাসির পরিবারের লোকজন ঝিলে হাসি ও তার ছেলের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়