ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আবাসন ব‌্যবসা নিষ্কণ্টক করতে সন্ত্রাসী পুষতেন আউয়াল

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৯ মে ২০২১  
আবাসন ব‌্যবসা নিষ্কণ্টক করতে সন্ত্রাসী পুষতেন আউয়াল

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস‌্য এম এ আউয়াল (ফাইল ফটো)

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস‌্য এম এ আউয়াল রাজধানীতে আবাসন ব‌্যবসা করেন। ব‌্যবসা নিষ্কণ্টক করতে গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এ বাহিনীর সদস‌্যদের দিয়ে জমি দখল, খুন, গুমসহ নানা অপরাধ করাতেন তিনি। রিমান্ডে তার কাছে এসব বিষয়ে তথ‌্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

পল্লবী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘চার দিনের রিমান্ডে আউয়াল বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ‌্য দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাহিনউদ্দিন খুনের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু বলতে পারি, তার দেওয়া তথ্যের মাধ‌্যমে ওই খুনের বিষয়ে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের পর থেকে আবাসন ব‌্যবসা করছেন এম এ আউয়াল। হ্যাভেলি প্রপার্টিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে তিনি জমির ব্যবসা শুরু করেন। তার নজরে পড়ে পল্লবী এলাকা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুমনের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। ওই বাহিনীতে আরও আছে মুরাদ, ইমরান, সজল, মানিক, মনির, হাসানসহ ২০-২৫ জন। তাদের দিয়ে জমি দখল শুরু করেন। জমি দখল করতে জমির মালিকদের মারধর ও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হতো। তাতে কাজ না হলে শুরু করতেন খুনের মিশন। দখল করা জমিতেই আলীনগর আবাসিক এলাকা গড়ে তোলেন এম এ আউয়াল।

সরেজমিনে পল্লবী এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, মিরপুর-১২ এর বুড়িরটেক, টেকেরবাড়ি, বাউনিয়া বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় একটি আবাসিক এলাকা করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এর পাশেই এম এ আউয়ালের গড়া আবাসিক এলাকা। ওই আবাসিক এলাকার আশপাশের অনেক জমি আউয়ালের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দখল করে। পল্লবীর ১২ নম্বরের ডি ব্লকের একটি জমি নিয়ে এম এ আউয়ালের সঙ্গে সাহিনউদ্দিন নামের এক ব‌্যক্তির দ্বন্দ্ব ছিল। এর জের ধরে সন্তানের সামনে সাহিনউদ্দিনকে হত‌্যা করে এম এ আউয়ালের সন্ত্রাসী বাহিনী।

গত ১৫ বছরে আউয়ালের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আরও কয়েকটি হত‌্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু সব সময় তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, জমি নিয়ে বিরোধে ২০১৫ সালে বুড়িরটেকে বঙ্গবন্ধু কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র চঞ্চলকে কুপিয়ে খুন করা হয়। একই বছরের ৮ জুলাই মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে পল্লবীতে তুলে এনে সামাদ বক্সের ছেলে মোমিন বক্সকে খুন করা হয়। চার দিন পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১৪ সালে মুসা নামের আরেক ব‌্যক্তি খুন হন। এর আগে ডিওএইচএসে খুন হন পাকিস্তানি মোহাম্মদ আলী। ২০০৪ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি আব্বাস নামে আরেক যুবক খুন হয়। এসব হত‌্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে  হয়েছে। এসব খুনের সঙ্গে সাবেক এমপি আউয়াল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ আছে। এসব মামলার তদন্তকাজেও এখন গতি পেয়েছে। এসব মামলাতেও এম এ আউয়াল ও তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, এম এ আউয়াল তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস‌্যদের মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন দিতেন। কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত অর্থও দিতেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মে বিকেলে নিজ বাসার সামনের একটি গ্যারেজে সাহিনউদ্দিনকে সন্তানের সামনে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত‌্যা করে ফেলা যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে তদন্তে নামে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এ মামলায় এম এ আউয়ালসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে দুজন র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আউয়ালকে হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ডে আউয়ালের অপরাধজগতের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

ঢাকা/মাকসুদ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়