ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিশ্ব পানি দিবস: সংকট বাড়ছে সমাধান কোন পথে  

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২২ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১১:৫২, ২২ মার্চ ২০২৩
বিশ্ব পানি দিবস: সংকট বাড়ছে সমাধান কোন পথে  

কয়রা উপজেলার তাহমিনা বেগমকে এখন আর পানির জন্য দূরের পথ পাড়ি দিতে হয় না

বাংলাদেশের উপকূলে পানি সংকট ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের সুন্দরবন লাগোয়া উপকূলে ঘন ঘন সাইক্লোনের কারণে বেড়েছে পানির সংকট। ওই অঞ্চলে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে পানি সংকট বাড়তে থাকে। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক বিপদ বৃদ্ধির সঙ্গে জীবন যাপনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পানির অভাব ওই অঞ্চলের পরিবারগুলোর সংকট বাড়িয়ে তুলেছে।  

তবে এই সংকট এখন আর দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সীমাবদ্ধ নেই। গত কয়েক বছরে এই সংকট ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলজুড়ে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বরগুনার সদর উপজেলা, পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি সংকটের খবর পাওয়া যায়। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা; আর শুকনো মৌসুমে এক কলসি পানির জন্য ছুটতে হয় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পথ। অধিকাংশ পরিবারে পানি সংগ্রহের দায়িত্ব থাকে নারীর কাঁধে। সংসারের সব কাজ শেষ করে নারীকে ছুটতে হয় পানি সংগ্রহে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপদের পাশাপাশি উপকূল অঞ্চলের অনেক স্থানে পানির স্তুর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে বহু গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। 

বাংলাদেশের উপকূলের পানি সংকটের এই চিত্র সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ২২ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। এ বছর দিবসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতিসংঘের তিনদিনব্যাপী ওয়াটার কনফারেন্স। আজ এ বিশ্ব আয়োজনের সূচনা হচ্ছে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে। ২৪ মার্চ ওয়াটার কনফারেন্সের সমাপনী ঘটবে। টানা ৪৬ বছর পর অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলন থেকে শক্তিশালী ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা প্রণীত হওয়া কথা। এ কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। 

বরগুনা শহরের গৃহিণী শাহনাজ বেগম ঘরে সংরক্ষিত পানি ব্যবহার করছেন। তার পরিবারে পানি সংকট দিন দিন বাড়ছে

সংকট যুগের পর যুগ

উপকূলের জেলা বরগুনা শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা শাহনাজ বেগমের ছোট-বড় সব পাত্রে পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে। শহরের পুকুর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এই পানি। ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজে ব্যবহৃত হয় এই পানি। বরগুনা শহরের যে গুটিকয়েক পুকুর অবশিষ্ট আছে; সেগুলোর পানি শুকনো মৌসুমে প্রায় তলানিতে ঠেকে। ফলে মাত্র দশ বছর আগেও যেখানে পানির অভাব ছিল না; সেখানে এখন শুকনো মৌসুমে মানুষের মনে পানির জন্য চিন্তা বাড়ে। শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বরগুনা জেলা শহরে বসবাসের ক্ষেত্রে আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা পানি। নিকটবর্তী নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। পানি সংগ্রহ করতে হয় অনেক দূর থেকে। উন্নয়ন কাজ এবং বাড়িঘর নির্মাণের কারণে অনেক পুকুর ভরাট হয়ে গেছে।’

শাহনাজ বেগমের ঘরে পানি সংরক্ষণের ছবিটা যেন দক্ষিণ পশ্চিম সুন্দরবন লাগোয়া কোনো বাড়ির ছবি। খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর কিংবা আশাশুনি এলাকায় পরিবারভিত্তিক পানি সংরক্ষণের এমন চিত্র দেখা গেছে অনেক আগে থেকেই। শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী, নীলডুমুর, আটুলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের লড়াই করতে দেখা যায়। শুকনো মৌসুমে নারীদের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যায়। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে কোনো পরিবারে অতিথিকে একবেলা ভাত খাওয়ানো যতটা সহজ, অতিথির জন্য এক জগ পানি ব্যয় করা ততটাই কঠিন। বর্ষাকালে যে পানি সংরক্ষণ করা হয়; শুকনো এলে সেই পানি ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু বর্ষায় সংরক্ষণ করা পানি ২-১ মাসেই শেষ হয়ে যায়। 

দাকোপের কালাবগি গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, ‘পানির জন্য আমরা লড়াই করছি যুগের পর যুগ। দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এই এলাকার অনেক মানুষ বিশ কিলোমিটার দূরের চালনা উপজেলা সদর থেকে পানি সংগ্রহ করে। পানির ড্রাম মাটিতে পুঁতে রাখি চুরি হওয়ার ভয়ে। শুকনো মৌসুমে ওই পানি আমাদের ভরসা। কিন্তু পাত্রের অভাবে আমরা বেশি পানি সংরক্ষণ করতে পারি না। শুকনো মৌসুম আসতে না আসতে খুব দ্রুত পানি ফুরিয়ে যায়। পানিকষ্টের কথা আমরা কাকে বলব।’
দশ-বারো বছর আগে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে পানি সংকটের চিত্র দেখা গেছে। ওই এলাকায় পানি সংকটের কারণ ছিল ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদ। কিন্তু উপকূলের অন্যান্য এলাকায়ও এখন পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। মধ্য উপকূলের বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, পূর্ব উপকূলের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, এমনটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট ক্রমেই তীব্র রূপ নিচ্ছে। 

সেভ দ্য ন্যাচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘পাহাড় এলাকায় প্রায় সারা বছরই পানির সংকট থাকে। পাহাড় এবং পাহাড়ের গাছগুলো আগে পানি ধরে রাখতে পারতো। পাহাড়গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে; এর সাথে সাথে পানির অভাব তীব্র রূপ নিচ্ছে। কক্সবাজার অঞ্চলে আমরা আগে পানির অভাব অনুভব করিনি। এখন পানিই মানুষের বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সমীক্ষা কি বলছে?  

সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ পানীয় জল পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়; যেখানে ৫১ শতাংশ জনসংখ্যার জন্য সংকট ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, আশাশুনি এবং শ্যামনগর উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ১০১টি ওয়ার্ডের ৬৬,২৩৪টি পরিবারের (মোট জনসংখ্যা ২৭১,৪৬৪) পানীয় জলের পরিস্থিতির উপর পরিমাণগত এবং গুণগত সমীক্ষা করে এ ফল পাওয়া গেছে। 

জেন্ডার-রেসপনসিভ কোস্টাল অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) প্রকল্প ২০২১ সালে এ সমীক্ষাটি করেছে। সমীক্ষার আলোকে পানি সমস্যা সমাধানে উদ্যোগও গ্রহণ করেছে এই প্রকল্প। প্রকল্পটি যৌথভাবে অর্থায়ন করছে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং বাংলাদেশ সরকার (জিওবি)। ইউএনডিপি এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

নিজ এলাকায় রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম সচল রাখতে কাজ করছেন একজন ‘পানি আপা’

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ পরিবার বলেছে, তারা হস্তচালিত নলকূপ থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করেন। ৭৫ শতাংশের বেশি পরিবার হস্তচালিত নলকূপ বা পুকুরের পানির উপর নির্ভর করে। সমীক্ষায় পানীয় জলের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত সমস্ত সম্প্রদায়ের হস্তচালিত নলকূপ বা পুকুরের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ৬৬৬টি কমিউনিটি হস্তচালিত নলকূপের মধ্যে, লবণাক্ততা মাত্র ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড (১০০০এমজি/এল) সীমার মধ্যে পাওয়া গেছে। উপলব্ধ পানীয় জলের পুকুরগুলির মধ্যে ৪৮ শতাংশ পুকুরের লবণাক্ততা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডের সীমা পূরণ করে।

পানির গুণমান পরীক্ষার ফল থেকে জানা যায়, ৭৩ শতাংশ পরিবার, যারা তাদের পানীয় জলের উৎস হিসাবে হস্তচালিত নলকূপ ব্যবহার করে, তারা উচ্চ লবণাক্ততার সঙ্গে অনিরাপদ পানি পান করে। মিঠা পানির হস্তচালিত নলকূপ খুলনা জেলার (২৫%) চেয়ে সাতক্ষীরায় (৩১%) বেশি। সমীক্ষার আওতাধীন ৬৬,২৩৪টি পরিবারের মধ্যে, ২১ শতাংশ কোনো ধরনের পরিস্রাবণ ব্যবস্থা ছাড়াই সরাসরি পুকুর থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে; যেখানে মাত্র ১২ শতাংশ পুকুরের স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) থেকে একই রকম পান৷

সমীক্ষা বলছে, শুধুমাত্র ১৬ শতাংশ পরিবারের পানীয় জলের জন্য তাদের নিজস্ব সুবিধা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পরিবার (৫১%) অন্যান্য পরিবার-ভিত্তিক সুবিধার উপর নির্ভরশীল। সরকারি সুবিধাগুলি মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ পরিবারকে পানীয় জল সরবরাহ করে। ৬৬,২৩৪টি পরিবারের ৭৪ শতাংশ নারীরা পানীয় জল সংগ্রহের  দায়িত্ব পালন করে৷ মাত্র ১৬ শতাংশ পরিবারে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও পানি সংগ্রহ করে। সমীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয়, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পানি সংকট তীব্র এবং অধিকাংশ পরিবারে পানি সংগ্রহের দায়িত্ব নারীদের। 

সংকট উত্তরণের চেষ্টা

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পানি সংকট উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইএনডিপি’র জেন্ডার-রেসপনসিভ কোস্টাল অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে নারীদের উপর চাপ কমছে। পরিবারের পানি সংগ্রহের দায়িত্ব নিচ্ছে পুরুষেরাও। বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য উপকূলীয় জনগণের দুর্ভোগ সকলেরই জানা এবং মহিলারাই এর সবচেয়ে বেশি ভার বহন করে৷ সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)-৬ এর লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এই সংকট উত্তরণ জরুরি। জিসিএ প্রকল্পের আওতায় সংকটাপন্ন এলাকায় পানি সংকটের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে পরিবার-ভিত্তিক পানি সরবরাহের উদ্যোগ। পানি সরবরাহের সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন ‘পানি আপা’। 

গ্রামের নারীদের মধ্যেই একজন হচ্ছেন ‘পানি আপা’। তিনি গ্রামের অন্য নারীদের পানি সরবরাহের সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য জিসিএ প্রকল্প থেকে পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে পানির ট্যাংক সরবরাহ করা হয়েছে। পরিচালিত হচ্ছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

সাতক্ষীরার শ্যমনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ‘পানি আপা’ মনজুআরা বেগম (৩৬)। তিনি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান দেন। কোন সমস্যা দেখা দিলে ঘরে ঘরে যান। তিনি ফিল্টার, পানির পাইপও পরিষ্কার করেন। পানি আপা বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব এবং পানির ট্যাংক পরিষ্কার করার বিষয়ে সকলকে সচেতন করেন। প্রকল্প পানি আপা পেয়েছেন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং এই পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। 

‘পানি আপা’ মনজুআরা বেগম বলেন, ‘গ্রামের পরিবারগুলোতে আমার সাথে যোগাযোগের নম্বর রয়েছে; যাতে জলের ট্যাঙ্ক সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার খবর আমি পাই। আমি বর্তমানে ৪৫টি পরিবারকে ‘পানি আপা’ হিসেবে সেবা করি। আমি তাদের কাছ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ পরিষেবার জন্য কিছু টাকা পাই। আমার মাসিক আয় গড়ে প্রায় ২৫০০ টাকা। আমার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি এখন আর্থিক এবং সামাজিক উভয়ভাবে ক্ষমতায়িত।’ 

সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার খাজরা গ্রামের ললিতা রানী সানা (২৮)। এক সময় পানির জন্য এই নারী অনেক কষ্ট করেছেন। পানি সংগ্রহ করতে হতো অনেক দূর থেকে। এতে তার অনেক সময় নষ্ট হতো। পরিবারের অনেক কাজই পড়ে থাকতো। সন্তান লালন পালন এবং অন্যান্য কাজে সময় দিতে পারতেন খুব কম। কিন্তু এখন পানি সংগ্রহ তার জন্য সহজ হয়েছে। পরিবারের অন্যান্য কাজের জন্য সময় বেড়েছে। 

ললিতা রানী সানা বলেন, ‘সুপেয় পানির জন্য অনেক কষ্ট করেছি। পানি আনতে আমাকে প্রতিদিন ৩ কিমি হাঁটতে হতো ২ ঘণ্টার জন্য। ঝড়ের সময় এটি সত্যিই কঠিন ছিল, রাস্তাগুলি পিচ্ছিল হয়ে যেত। বজ্রপাত আরো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। শুষ্ক মৌসুমে ভোগান্তি তিনগুণ বেড়ে যায়। আমি গৃহস্থালির কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারতাম না। কারণ আমাকে পানি আনতে বেশি সময় দিতে হয়েছিল। আমি জিসিএ প্রকল্পের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা পেয়েছি। ২০০০ লিটার ট্যাঙ্ক আমার জীবন বাঁচিয়েছে।’

খুলনা জেলার পাইকগাছার গড়ইখালীর প্রমিলা মৃধা (৪২) বলেন, ‘জিসিএ প্রকল্প থেকে পানির ট্যাংক পেয়ে আমার অসুস্থতাসহ কষ্ট কমেছে এবং পানি আনার সময়ও বাঁচছে। এখন আমার বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে এবং উঠানে সবজি বাগান পরিচর্যা করা। আমি সবজি চাষের জন্য জিসিএ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেয়েছি। আমি এখন অনেক ভালো আছি।’

বাড়ির নিকটের পানি সরবরাহ কেন্দ্র থেকেই এখন নারীরা পানি সংগ্রহ করতে পারছেন

ইউএনডিপি’র জেন্ডার-রেসপনসিভ কোস্টাল অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) প্রকল্পের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেশন স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘জিসিএ প্রকল্পটি প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার উপকূলীয় মানুষের জন্য সারা বছর ধরে নিরাপদ পানীয় জল নিশ্চিত করছে। খুলনা ও সাতক্ষীরায় উপকূলীয় নারীদের এখন পানি আনতে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হাঁটতে হবে না। কারণ আমাদের প্রকল্পে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে নিরাপদ পানীয় জল দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। সিষ্টেমের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে, জিসিএ প্রকল্প ‘পানি আপা’ নামে একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতির সূচনা করেছে। উপকূলীয় নারী সম্প্রদায় থেকে ‘পানি আপা’ নির্বাচিত হয়েছে, যারা এখন উপকূলীয় সম্প্রদায়ের ‘চেঞ্জ মেকার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এই উদ্যোগ অন্যান্য উপকূলীয় নারীদেরও অনুপ্রাণিত করছে।’

জাতিসংঘের পানি সম্মেলন

আজ ২২ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘ পানি সম্মেলন। এই সম্মেলন একটি শক্তিশালী ‘ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা’ তৈরি করবে। যা জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও স্টেকহোল্ডারদের প্রতিশ্রুতি উপস্থাপন করবে। সম্মেলনে বৈশ্বিক পানি সংকট নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং পানি সম্পর্কিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘জাতিসংঘের পানি সম্মেলন ২০২৩’ এ অবশ্যই জোরালো ‘ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা’ গ্রহণ করতে হবে। যা আমাদের বিশ্বের অস্তিত্বের প্রাপ্য প্রতিশ্রুতি দেবে।
এবারের সম্মেলনে ৬টি প্রধান থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—
১) ওয়াটার ফর হেলথ
২) ওয়াটার ফর ডেভেলপমেন্ট
৩) ওয়াটার ফর ক্লাইমেট
৪) রেজিলেন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট
৫) ওয়াটার ফর কো-অপারেশন
৬) ওয়াটার অ্যাকশন

সম্মেলনে একটি উদ্বোধনী ও সমাপনী সেশনের পাশাপাশি ছয়টি পূর্ণাঙ্গ সেমিনার, পাঁচটি অংশগ্রহণমূলক সভা হবে। এরপর সম্মেলনের অনুমোদিত ডকুমেন্টের ভিত্তিতে একটি সারাংশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হবে।

৪৬ বছর পর অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাতায় হয়েছিল সর্বশেষ পানি সম্মেলন। 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়