বিএনপির হরতাল: সারা দিনে যা ঘটল

রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশে ‘পুলিশি আক্রমণ, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের’ প্রতিবাদে দলটির ডাকা রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যার হরতাল শেষ হয়েছে। হরতালে রাজধানীতে কয়েকটি ঝটিকা মিছিল ছাড়া কার্যত বিএনপির তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। পুলিশি বাধা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে নয়া পল্টনসহ রাজধানীর কোথাও রাস্তায় নেতাকর্মীদের তেমন কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে দিনভর উত্তাপ ও উৎকণ্ঠা ছিল।

রোববার সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌ পথে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। একই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মলনে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ে সারা দেশে আগামী তিন দিন (৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

রোববার (২৯ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গুলশানের বাসা ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে বাসা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। 

সকাল ৯টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদের বনানীর বাসা ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে, আমির খসরুকে বাসায় না পেয়ে ফিরে যায় তারা।

শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসভবনে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় ইশরাক হোসেনকে বাসায় না পেয়ে তার ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালককে আটক করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হরতালের সমর্থনে মিছিল করে ফেরার পথে মোহাম্মদপুর এলাকায় আদাবর থানার অন্তর্ভুক্ত ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুর রশিদ সর্দারকে পিটিয়ে এবং ৫ তলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয় বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হযেছে।

বিএনপির পক্ষে দাবি করা হয়, হরতালের শুরুতে বেলা ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি মগবাজার এলাকায়, যুবদল নর্দা এলাকায় মিছিল করে। এছাড়া, ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয় হরতালের সমর্থনে। এর বাইরে হরতালের সমর্থনে গণতন্ত্রমঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ (নুরুল হক নুর), লেবার পার্টি (মোস্তাফিজুর রহমান ইরান) রাজধানীর পল্টন, প্রেস ক্লাব, মালিবাগ এবং আবুল হোটেল এলাকায় মিছিল করে।

অন্যদিকে, গতকাল শনিবার রাত থেকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ‘ক্রাইম জোন’ ঘোষণা দিয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। রোববার বেলা ১২টায় সিআইডির একটি টিম বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালেয়র সামনের রাস্তা থেকে অন্তত ১০ রকমের আলামত সংগ্রহ করে।

গতকাল শনিবার বিকালে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ফলে, রোববার সারা দিন দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারেননি বিএনপির কোনো নেতাকর্মী।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সারা দিন ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পল্টন থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাত ৮টার পর তাকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাকে সিএমএম কোর্ট হাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।