ঢাকা     বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

কপ-২৮: ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের ট্রানজিশনাল কমিটির সভা ঘিরে হতাশা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ৬ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:৫১, ৬ নভেম্বর ২০২৩
কপ-২৮: ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের ট্রানজিশনাল কমিটির সভা ঘিরে হতাশা

ছবি: সংগৃহীত

তিন দশক পর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন। গত এক বছরে এ তহবিল ঘিরে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। এমনকি আসন্ন কপ-২৮ ঘিরে অনুষ্ঠিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল সংক্রান্ত ট্রানজিশনাল কমিটির সভাটিও শেষ হয়েছে আপসের চেষ্টা ও হতাশার মধ্য দিয়ে। 

লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের লক্ষ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য ঝুঁকি থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক পরিণতিগুলো মোকাবিলা করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। যেমন- ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, চরম তাপপ্রবাহ, মরুকরণ, বনের আগুন, ফসল অনুৎপাদন প্রভৃতি। 

আসন্ন কপ-২৮ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যালোচনামূলক ও প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হবে পুরো নভেম্বর মাসজুড়ে। রোববার (৫ নভেম্বর) আবুধাবিতে ট্রানজিশনাল কমিটির পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই সভায়ও তহবিলটির প্রয়োজনীয়তা ও উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব পালন নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে দেখা গেছে। আলোচনায় উপস্থিত সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়ায় উঠে এসেছে হতাশার সুর। 

ওয়াশিংটনের হেনরিক বোল ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক লিয়ান শালাটেক এই তহবিলের বিষয়ে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য যে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের কথা বলা হয়েছিল, এটি তা হয়নি। এতে মানবাধিকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতির অভাব রয়েছে এবং প্রভাবিত সম্প্রদায়গুলোর সরাসরি উপকৃত হওয়ার ও তহবিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রকাশের বিষয়টিকে নিশ্চয়তা দেয় না। 

তিনি আরও বলেন, এ চুক্তিতে মাত্রার কোনও ইঙ্গিত নেই, যার মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো কোনও ঐতিহাসিক দায়িত্ব অস্বীকার করলে স্বেচ্ছাসেবীর বাধ্যবাধকতা থেকে জলবায়ু অর্থের বিধানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। কিংবা নতুন চিন্তাভাবনা এবং নতুন কাঠামো প্রদানের পরিবর্তে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধায়নে স্বতন্ত্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল গঠন করা যায়। 

লিয়ান শালাটেকের মতে, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ চুক্তিতে জলবায়ুর ন্যায়বিচার ছিল না বরং উন্নত দেশগুলোর নগ্ন ক্ষমতার রাজনীতি ছিল। এখন আসল কাজ শুরু করার সময় এসেছে, যাতে তহবিলটি একটি খালি শেল না হয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও পুঁজিতে পূর্ণ না হয়।

ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজির প্রধান হারজিত সিং বলেন, এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য একটি দুঃখজনক দিন, কারণ ধনী দেশগুলো দুর্বল সম্প্রদায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ঐতিহাসিক বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও ধনী দেশগুলোর আর্থিক দায়িত্ব পালনে অনীহা তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের দুর্দশার প্রতি তাদের উদাসীনতা প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, যাদের সবচেয়ে বেশি সমর্থনের প্রয়োজন ছিল সেই ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংককে শুধুমাত্র ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের আয়োজকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি বরং জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করতে ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্বও এড়িয়ে গেছে।  

ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্টের ক্লাইমেট অ্যান্ড এনার্জি প্রোগ্রামের পলিসি ডিরেক্টর রাচেল ক্লিটাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী আক্রমণের সম্মুখীন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য গঠিত এই তহবিলে অবদান রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলো তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছে। এটি একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ।

প্রসঙ্গত, মিশরে অনুষ্ঠিত কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনে একটি ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠনে সম্মত হয় বিশ্বনেতারা। বাংলাদেশের মতো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা বা নদী-ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য এটিকে একটি বড় সুখবর হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল পুরোপুরি চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। গত ২৯ অক্টোবর প্রকল্প পরিষেবার জন্য জাতিসংঘের অফিসের (ইউএনওপিএস) আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জর্জ মরিয়েরা দা সিলভা গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পালন না করায় প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর প্রতিটি দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ভেতর বাংলাদেশ রয়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র শত শত কোটি ডলার খরচ করলেও লাগামহীন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটির মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হুমকির মুখে পড়বে। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐতিহাসিক হারে কার্বন নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ কয়েকটি অর্থনৈতিক খাতে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ শত শত কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। এই ক্ষতির পরিমাণ বহু রাজ্যের জিডিপির চেয়েও বেশি। ক্ষতির প্রকারে পার্থক্য থাকলেও বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোও রয়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। 

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়