ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে হারের শঙ্কা

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ২ মে ২০২১   আপডেট: ২০:৫৬, ২ মে ২০২১
দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে হারের শঙ্কা

এ যেন প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি। ভুলগুলো যেন বারবার হচ্ছে। ঘুরে ফিরে সেই একই ভুলের খেসারত। লড়াইয়ের কোনও ছাপ নেই। মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকার মানসিকতা নেই। হযবরল পরিকল্পনা ও তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে আরেকটি টেস্ট হারের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৪৩৭ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৭৭। উইকেটে আছেন লিটন দাশ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের হাতে ম্যাচের ভাগ্য। নয়তো দেশের বাইরে আরেকটি সিরিজ হার। জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার দরকার ৫ উইকেট। বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬০ রান।

রোববার বাংলাদেশকে চারশর বেশি রান লক্ষ্য দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল লঙ্কানদের। নিজেদের পরিকল্পনাতে শুরু থেকে এগিয়ে যায় তারা। প্রথম সেশনে ৩২ ওভারে তুলে নেয় ১৫৫ রান। এ সময়ে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেটও হারায় স্বাগতিকরা। তাতে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। তাইজুল ইসলামকে মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকানো অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ তার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন। লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে আউট হন সাইফ হাসানের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে। দুটি ক্যাচেই নেন বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলী চৌধুরী। করুণারত্নের ইনিংসটি থামে ৬৬ রানে। সিরিজে ৩ ইনিংসে তার রান ৪২৮। অধিনায়কের পর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও বিদায় নেন দ্রুত। মিরাজের বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে কাচ দেন।

এরপর পাথুম নিশানকা ও নিরোশান ডিকবেলা দ্রুত রান তোলার তাড়ায় উইকেট হারান। মধ্যাহ্ন বিরতির পর রামেশ মেন্ডিস ও সুরাঙ্গা লাকমালের উইকেট নিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন টেস্টে তার অষ্টম ৫ উইকেট। অভিষেক টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ৫ উইকেট পাওয়ার পর এবার আবার এমন কীর্তি গড়লেন তাইজুল।

টেস্ট ইতিহাসেই ৪৩৭ রান তাড়া করে জয়ের কোনও নজির নেই। বাংলাদেশকে জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হবে। আবার দেশের বাইরে বাংলাদেশ কখনও রান তাড়ায় ২৮২ রানের বেশি করেনি। অনেক কিছুর হাতছানি দিচ্ছিল। কিন্তু সেসব পথে এগিয়ে যাওয়া স্রেফ বোকামি। বাংলাদেশ সেদিকে আগায়নি।

তামিম ইকবাল ও সাইফের শুরুটা ছিল সতর্ক। পেস বোলারদের দেখেশুনে সামলে নেন। কিন্তু স্পিন আসতেই সব গরবর। শুরুটা তামিমকে দিয়ে। আগের তিন ইনিংসে তিন হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো বাঁহাতি ওপেনার এবার ২৪ রানের বেশি করতে পারলেন না। আত্মবিশ্বাসী শুরুর পর অফস্পিনার রামেশের দারুণ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।

থিতু হয়ে সাইফ এলোমেলো শট খেলছিলেন। বারবার দুই স্পিনার প্রবীণ জয়াবিক্রমা ও রামেশকে এগিয়ে এসে শট খেলতে থাকেন। হাওয়া ভাসানো কয়েকটি শট গিয়েছিল সীমানায়। রামেশকে এগিয়ে এসে স্পিনের বিপক্ষে ছক্কায় উড়িয়েছিলেন লং অফ দিয়ে। কিন্তু সেই আগ্রাসনই তার বিপদ ডেকে আনেন। প্রবীণের ঘূর্ণি বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কাভার পয়েন্টে। এবার তার ব্যাট থেকে ৫ চার ও ১ ছক্কায় আসে ৩৪ রান।

চা-বিরতির ঠিক আগে শান্তকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে তৃতীয় আঘাত করেন প্রবীণ। বাঁহাতি স্পিনারের বিশাল টার্ন নিয়ে শান্তর ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে। এরপর মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম দলের হাল ধরেন। চা-বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে তাদের ৫৫ বলে ৩০ রানের জুটি লড়াইয়ে রেখেছিল বাংলাদেশকে।কিন্তু অধিনায়ক হাল ছেড়ে দেন উইকেট উপহার দিয়ে। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বোলিং করা রামেশের বল কাট করতে গিয়ে মুমিনুল বোল্ড হন ৩২ রানে।

সঙ্গী হারানোর পর মুশফিক টিকতে পারেননি। সেই রামেশের একটু লাফিয়ে উঠা বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন ৪০ রানে। শেষ বিকেলে লিটন ও মিরাজের ব্যাটে খানিকটা প্রতিরোধ আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে বল যেভাবে ঘুরছে এবং স্বাগতিক স্পিনাররা যে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন তাতে তীব্র লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষা না থাকলে ম্যাচ বাঁচানো কঠিন। চতুর্থ দিন আলোর স্বল্পতায় ১২ ওভার খেলা হয়নি। উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরছে। তাতে প্রকৃতিই কেবল বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচাতে পারে।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়