ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে বিরাট প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২১  
ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে বিরাট প্রশ্ন

‘আপনারাই বলেন অমুককে কেন নিলেন না, তমুককে কেন নেওয়া হচ্ছে না। দেখলেন তো দলে সুযোগ দিলে কী হয়! অথচ তারাই তো ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফর্মার। তাদের দিয়েই এখন হচ্ছে না।’ – ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে এমন মন্তব্য করেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন।

শুধু ব্যাটসম্যানদের নিয়েই নিজের ক্ষোভ ঝারেননি। পেসারদের বোলিং, সামর্থ্য নিয়ে বিরাট প্রশ্নও তুলেছিলেন। ভালো পেসার পাওয়ার প্রশ্নে সুজন বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন দেন।’ মোদ্দাকথা ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে বিরাট প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় দলের বর্তমান পারফরম্যান্সের পর। যেকোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে রান ও উইকেটের বন্যা বইয়ে দেন ব্যাটসম্যান ও বোলাররা। অনেক সময় পারফরম্যান্স এতটাই ভালো হয় যে সর্বোচ্চ রান স্কোরার বা উইকেট শিকারিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় অতি দ্রুত। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামলেই সামর্থ্য নিয়ে বিরাট প্রশ্ন উঠে।

ওপেনার সাইফ হাসান কিংবা মাহমুদুল হাসান জয় এর সেরা উদাহরণ। মাত্র এক টেস্ট খেলা জয়কে নিয়ে মন্তব্য করা বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু সাইফ দিনের পর দিন সুযোগ পেয়েও মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরির মিছিল। ডাবল সেঞ্চুরিও আছে দুটি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, স্রেফ জায়গাটাই নষ্ট করছেন তিনি। ব্যাটিংয়ের বেসিকগুলো যেন শিখে আসেননি। আউট হচ্ছেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মতো।

প্রায় সব পেসারদের অবস্থা এক। লাইন লেন্থ হারাচ্ছেন নিয়মিত। বৈচিত্র্য নেই। উইকেট অনুকূলে না হলে বিশেষ কিছু করার ক্ষমতা নেই। ফলে আলগা বলে প্রতিপক্ষ রান পায় অনায়াসে। ব্যাটসম্যান ও বোলারদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে দলগত ফলে বিরাট প্রভাব ফেলে। যেমন, পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটিং গড় মাত্র ৭। পরিসংখ্যানই বলে দেয় পারফরম্যান্স কতটা হতশ্রী ছিল। আবার বোলিংয়ে পেসাররা একবারও পারেননি নতুন বলে উইকেট আদায় করতে।

চট্টগ্রামে দুই ইনিংসে পাকিস্তানের দলীয় রান শতরান পেরিয়ে যায়। ঢাকায় স্পিনার তাইজুল ভাঙেন জুটি। পেসাররা ছিলেন নিষ্প্রভ। জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের কারণেই প্রশ্ন উঠছে, ঘরোয়া ক্রিকেট কি আসলেই মানসম্মত? নিউ জিল্যান্ড সফরে সাকিবের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া ফজলে মাহমুদ রাব্বী এবার লিগে ৬ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬০৩ রান করেছেন। তার দাবি, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটের মান অবশ্যই আগের থেকে অনেক বেড়েছে। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। রান করতে আমাদের কষ্ট করতে হয়। আমরা জানি যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কিন্তু এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠা উচিত নয়। সেখানে সবাই নিজেদের শতভাগ দিয়েই খেলে।’

লিগে সর্বোচ্চ ৩৩ উইকেট পাওয়া হাসান মুরাদ বিসিএল খেলার অপেক্ষায়। তার কণ্ঠেও শোনা গেল একই কথা, ‘লিগে আমরা প্রত্যেকেই ভালো করার চেষ্টা করি। সবার একটাই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলা। এজন্য সেভাবেই নিজেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে মেলে ধরতে হয়। এটা এমন না আমি উইকেট চাইলাম, ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিয়ে দিলো। উইকেটের জন্য আমাকে খাটতে হয়েছে। সুযোগ তৈরি করতে হয়।’

তাহলে সমস্যা কোথায়? প্রসিদ্ধ কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম দিলেন উত্তর, ‘আমি বলব মানসিকতায় এবং পরিকল্পনায়। খেলোয়াড়দের বড় মঞ্চে পারফর্ম করার মানসিকতায় ঘাটতি দেখছি। সাহস নিয়ে খেলতে পারছে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে তারা কিন্তু জানে যে কে কোন বলটা করতে পারে, কে ইনসুইং, কে আউটসুইং করতে পারে বা কে বাউন্স দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে তারা কিন্তু সেই একই পরীক্ষা পাচ্ছে না। ধরে নেন, তারা বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গেছে কিন্তু গিয়ে দেখল অঙ্ক বা ইংরেজি প্রশ্ন। তাহলে পারবে কিভাবে? এ জায়গায় আমি পরিকল্পনার ঘাটতি দেখছি। তবে হ্যাঁ এটা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আগের থেকে ভালো হয়েছে।’

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়