ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া
ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। এরপর অতিরিক্ত সময়ের ১০৫+১ মিনিটে নেইমার গোল করে এগিয়ে নেন দলকে। কিন্তু ১১৭ মিনিটের মাথায় পেটকোভিচ গোল করে সমতা ফেরান। সেই সমতা নিয়ে শেষ হয় অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। তাতে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ব্রাজিলকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে ক্রোয়াটরা।
এ নিয়ে তারা টানা চার-চারটি পেনাল্টি শ্যুটআউট জিতলো। আজ ব্রাজিলকে হারানোর আগে শেষ ষোলোতে জাপানকে হারিয়েছিল টাইব্রেকারে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা। তার আগে ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে ডেনমার্ককে এবং কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়াকে হারিয়েছিল টাইব্রেকারে। সবশেষ ২০১০ বিশ্বকাপে প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ক্রোয়েশিয়া।
ক্রোয়েশিয়ার পেনাল্টি শ্যুট: নিকোলা ভ্লাসিচ গোল, লোভরো মাজের গোল, লুক মদ্রিচ গোল ও মিসলাভ ওরসিক গোল।
ব্রাজিলের পেনাল্টি শ্যুট: রদ্রিগো মিস, কাসেমিরো গোল, পেদ্রো গোল এবং মারকুইনহোস মিস।
টাইব্রেকারে গড়ালো ম্যাচ:
ম্যাচের ৯০ মিনিটে কোনো গোল না হলেও অতিরিক্ত সময়ে হয় দুই গোল। ১০৫+১ মিনিটের মাথায় নেইমার দারুণ এক গোল করে এগিয়ে নেন দলকে। তবে অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে (১১৭ মি.) ব্রুনো পেটকোভিচ গোল করে সমতা ফেরান। এর ফলে ১-১ গোলের সমতা নিয়েই শেষ হয় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা অর্থাৎ ১২০ মিনিট। তাতে ম্যাচের সমতা ভাঙতে টাইব্রেকারে গড়িয়েছে ম্যাচ। এখন দেখার বিষয় টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় কারা উতরে যায়।
পেটকোভিচের গোলে সমতা ফেরালো ক্রোয়েশিয়া:
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের ১১৭ মিনিটে সমতা ফেরায় ক্রোয়েশিয়া। এ সময় বামদিক থেকে আক্রমণে গিয়ে বক্সের মধ্যে বল বাড়িয়ে দেন মিসলাভ ওরসিচ। বক্সের মধ্যে সেটা পেয়েই শট নেন ব্রুনো পেটকোভিচ। বল জালে জড়ায়। তাতে ফেরে সমতা।
নেইমারের গোলে এগিয়ে ব্রাজিল:
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে (১০৫+১) পরিকল্পিত আক্রমণে গোল করেন নেইমার। এ সময় নিজেদের অর্ধ থেকে আক্রমণে ওঠে ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার ডি বক্সের কিছুটা সামনে গিয়ে বামদিকে লুকাস পাকুয়েতাকে বল বাড়িয়ে দেন নেইমার। এরপর দ্রুত ঢুকে পড়েন বক্সের মধ্যে। তাকে আবার বল দেন পাকুয়েতা। এবার বল নিয়ে সামনে আগান। তাকে আসতে দেখে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষকও সামনে এগিয়ে আসেন। নেইমার শট না নিয়ে তাকে পরাস্ত করে ডানদিকে এগিয়ে যান। এরপর কোনাকুনি শট নিয়ে জালে জড়ান বল। সমুদ্রের গর্জনের মতো উল্লাসে মেতে ওঠে এজুকেশন সিটি স্টেডিয়াম।
ব্রোজোভিচের মিস:
১০৩ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার মার্সেলো ব্রোজোভিচ। বামদিক থেকে ব্রুনো পেটকোভিচের বাড়িয়ে দেওয়া বল তিনি বক্সের মধ্যে পেয়ে যান। সামনে ছিলেন কেবল ব্রাজিলের গোলরক্ষক এলিসন। তাকে ফাঁকি দিতে পারলেই গোল হতে পারতো। কিন্তু উড়িয়ে মেরে সুযোগ মিস করেন তিনি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি কোনো দল:
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোলের দেখা পায়নি কেউ। বলের দখল সমান সমান থাকলেও আক্রমণের দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। তারা মোট ১৪টি আক্রমণ শানিয়েছিল। তার মধ্যে ৮টি ছিল অন টার্গেটে। অবশ্য অধিকাংশ ছিল দুর্বল শট। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া ৬টি আক্রমণ শানালেও অন টার্গেটে কোনো শট নিতে পারেনি।
এখন দেখার বিষয় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে ম্যাচের এই অচলবস্থা ভাঙে কিনা।
পাকুয়েতার আরও একটি শট রুখে দিলেন গোলরক্ষক:
৮০ মিনিটে আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন পাকুয়েতা। রদ্রিগের বাড়িয়ে দেওয়া বল বক্সের মধ্যে পেয়ে শট নেন পাকুয়েতা। কিন্তু সেটি ধরে ফেলেন ক্রোশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
পাকুয়েতার শট রুখে দিলেন গোলরক্ষক:
৬৬ মিনিটে লুকাস পাকুয়েতা বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। তার সামনে ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। পাকুয়েতাকে মারতে দেখে সামনে এগিয়ে যান তিনি। পাকুয়েতা বুকে মেরে দিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন।
নেইমারের সুযোগ মিস:
৫৫ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু সেটি ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
পেরিসিচের সুযোগ মিস:
ম্যাচের ৫১ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। লুকা মদ্রিচের বাড়িয়ে দেওয়া বলে লাফিয়ে উঠে হেড নিয়েছিলেন ইভান প্যারিসিচ। কিন্তু সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
সমানে-সমান লড়ে গোল পায়নি ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার কেউ:
সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে প্রথমার্ধে প্রায় সমানে সমান লড়েছে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। বলের দখল ও আক্রমণ প্রায় সমানে সমান। ব্রাজিলের দখলে ছিল ৫১ শতাংশ বল। ক্রোয়েশিয়ার দখলে ছিল ৪৯ শতাং। ক্রোয়েশিয়া তিনটি আক্রমণ শানায়। অন্যদিকে ব্রাজিল শানায় ৫টি। ক্রোয়েশিয়া অন টার্গেটে কোনো শট নিতে না পারলেও ব্রাজিল ৩টি শট নেয় অন টার্গেটে। তবে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগ দারুণ সামলিয়েছে ব্রাজিলের আক্রমণভাগকে। তাদের কারণে ব্রাজিল জোরোসোরে আক্রমণ শানাতে পারছে না।
এছাড়া উভয় দল সমান ১টি করে কর্নার পায়। একটি করে হলুদ কার্ড দেখেন দুই দলের দুইজন খেলোয়াড়।
নেইমারের ফ্রি কিক ধরে ফেললেন গোলরক্ষক:
৪২ মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি কিক পেয়েছিল ব্রাজিল। ফ্রি কিক থেকে নেইমার শট নেন। কিন্তু তার নেওয়া শট সরাসরি ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচের হাতে জমা হয়।
পেরিসিচের সুযোগ মিস:
৩০ মিনিটে সুযোগ মিস করেন ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচ।
ভিনিসিউস ও নেইমারের সুযোগ মিস:
২০ ও ২১ মিনিটে দুটি সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। প্রথমে আক্রমণে যান ভিনিসিউজ। কিন্তু বক্সের মধ্যে ঢুকে শট নিলেও সেটা ব্লক হয়ে যায়। এরপর নেইমার আক্রমণে ওঠেন। তার নেওয়া শট ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক।
দারুণ সুযোগ মিস করলো ক্রোয়েশিয়া:
১৩ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। এ সময় ডানদিক থেকে মারিও প্যাসালিক বাড়িয়ে দেওয়া বল গোলপোস্টের সামনে পেয়েছিলেন জোসিপ জুরানোভিচ ও ইভান পেরিসিক। জুরানোভিচ বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি। তবে পেরিসিক পা ছোঁয়াতে পারলেও জালে জড়াতে পারেননি। বল তার পা ছুঁয়ে চলে যায়।
ভিনিসিউস জুনিয়র শট ধরে ফেললেন গোলরক্ষক:
ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই আক্রমণে উঠেছিল ব্রাজিল। এ সময় বামদিকে বল পেয়ে পোস্টের ডান কোণার উপরের অংশকে টার্গেট করে মেরেছিলেন ভিনিসিউস জুনিয়র। কিন্তু বল ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ।
ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ শুরু:
বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। এজুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হয়েছে ম্যাচটি। এই ম্যাচের জয়ী দল চলে যাবে সেমিফাইনালে। আর পরাজিত দল দেশের বিমান ধরবে।
ব্রাজিলের শুরু একাদশ:
অ্যালিসন, থিয়াগো সিলভা, মারকুইনহোস, দানিলো, এদার মিলিতাও, নেইমার, ক্যাসেমিরো, লুকাস পাকুয়েতা, রিচার্লিসন, ভিনিসিউস জুনিয়র ও রাফিনহা।
ক্রোয়েশিয়ার শুরুর একাদশ:
ডমিনিক লিভাকোভিচ, জোস্কো গভার্দিওল, দেজান লোভরেন, বোর্না সোসা, জোসিপ জুরানোভিচ, মার্সেলো ব্রোজোভিচ, মাতেও কোভাসিক, লুকা মড্রিক, আন্দ্রেজ ক্রামরিক, ইভান পেরিসিক ও মারিও প্যাসালিক।
বিশ্বকাপে অবশ্য এবারই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে না ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। এর আগে ২০০৬ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। দুইবারই জিতেছে ব্রাজিল। ২০০৬ বিশ্বকাপে ১-০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিল সেলেসাঁওরা।
এবার দেখার বিষয় ব্রাজিলকে প্রথমবার বিশ্বকাপে হারাতে পারে কিনা ক্রোয়েশিয়া। নাকি নেইমার-কাসেমিরোদের জয়ের পাল্লা আরও ভারী হয়।
ঢাকা/আমিনুল