ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

উৎসবের শহরে ক্রিকেট ঝাঁঝের অপেক্ষা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কলকাতা থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২৭ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ২৩:০০, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
উৎসবের শহরে ক্রিকেট ঝাঁঝের অপেক্ষা

কয়েকজন নেট বোলারের সেলফির আবদার মিটিয়ে সাকিব আল হাসান যখন ড্রেসিংরুমের পথে তখন ইডেন গার্ডেনের গ্যালারিতে শোনা যায়, ‘নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব ভাই।’ পাশের থেকেই আরেকজনের চিৎকার, ‘কাম অন সাকিব ভাই। বাংলাদেশ-বাংলাদেশ।’

বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিতে এই শহর ওই শহর ঘুরে তারা এখন গৌরব, আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের মিশেল ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেনে। বুক ভরা আশা নিয়ে পা রেখেছে দেশের সবচেয়ে নিকটতম ভেন্যুতে। স্রেফ একটা জয়ের আশায়।

আরো পড়ুন:

খেলা যখন বাড়ির পাশের শহরে তখন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি অনেকেই। তাইতো কলকাতার মারকিউস স্ট্রিটে পা রাখলে কাঁধে ধাক্কা মিলবে বাংলাদেশিদের। বা খালেক হোটেলের গরুর গোশত কিংবা আরসালানের বিরিয়ানি খেতে গেলে। একটু বিত্তশালী হলে হার্ডরক ক্যাফে বা ওলিপাবে চিকেন কিয়েবে ছুঁড়ি চালাতে গিয়ে। যেখানে আলোচনার বিষয়বস্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট।

ইডেন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের মোহামেডান ক্লাবের টিকিট সংগ্রহশালায় দেখা হয়ে যাবে পরিচিত-অপরিচিত নানা মুখ, যাদের গায়ে হয় বাংলাদেশের জার্সি না হয় শরীরের গড়নে কথা-বার্তায় শতভাগ বাংলাদেশি।

তাদের কথায় একটু বিড়ম্বনার চিত্রও ফুটে এল, ‘অনলাইনে টিকিট কিনে কেন আবার কাগজের টিকিট কালেক্ট করতে হবে? এখন আধুনিক যুগ একটা মেশিন রাখলেই তো পাঞ্চ করা যায়। অযথা একদিন আগে এসে টিকিট সংগ্রহ করা লাগছে।’

তবে এই সুযোগে কলকাতাকে এক ভিন্নরূপে আবিস্কৃত করছেন অনেকেই। ভারতীয়রা বলে, ক্রিকেট এ দেশে এক ধর্ম। কিন্তু ২০-২৪ অক্টোবর ভারত যতই ক্রিকেটে মেতে থাকুক, বাংলা কিন্তু মেতেছিল দুর্গাপূজার ঘোরে। যে রেশ এখনও চলছে। দুর্গাপূজার মেগা কার্নিভালের জন্য সেজেছে ইডেনের লাগোয়া রেড রোড। শহর ও শহরতলির প্রায় একশোটি পূজা কমিটির অংশগ্রহণে রেড রোড দুর্গাপূজার কার্নিভালে মাতোয়ারা।

রাস্তার দু'ধারে প্রায় ১৮ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চালু করেন এই বিসর্জনক্রিয়া। নানা ব্যস্ততায় যারা একাধিক প্যান্ডেলে যেতে পারেননি তাদের সবার একনজরে দেখা হয়ে যায় বিখ্যাত সব মণ্ডপের সেরা সব প্রতিমার। তুলির আঁচড় আর নানা কারুকার্যের সেসব প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের নিঁপুণ হাতের ছোঁয়া আর অক্লান্ত পরিশ্রমের চিত্র ফুটে উঠে। মাটি, খড়, বাঁশ, ব্যাড়াসহ নানা অনুষঙ্গ দিয়ে বানানো সেই শিল্পকর্ম মু্গ্ধতা ও চোখ ধাঁধিয়ে দিতে ছড়াতে বাধ্য। এই কার্নিভালে ভালোবাসার জায়গায় স্থান পেয়েছেন বাংলার দুই প্রবাদপ্রতীম কবি-সাহিত্যিক জীবনানন্দ দাস ও নজরুল ইসলাম।

এই উৎসব শুরুর আগেই বাংলাদেশ দল ইডেন ছেড়েছে। আজকের অনুশীলনের প্রধানতম আকর্ষণ ছিলেন সাকিব আল হাসান। ইডেনে ম্যাচের আগে যে স্ফুলিঙ্গ ধরিয়ে দিয়েছেন তাতে ক্রিকেটের ক্যানভাসে বাড়তি রঙ ছিটিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ফটোজার্নালিস্টরা অচেনা এক সাকিবকে আবিস্কার করেছেন ইডেনে। একেবারে দেখলেন ভিন্ন চোখে। আইপিএলে কলকাতার জার্সিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করায় সাকিবের আলাদা ফ্যানবেজ আছে। পরিচিত মানুষও আছে। তারাই আজ ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে বারবার ডেকেও সাড়া পাননি সাকিবের। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব এক হয়ে যখন আলোচনায় ছিলেন বারবার সাকিবকে একটা ছাপানোর মতো ফ্রেমের জন্য ধর্না তুলে যাচ্ছিলেন। সাড়া মেলেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন তাদের একজন, ‘ওর কলকাতার জার্সিতে হাজারটা ছবি এখনও আছে। ও-ই সময় তো এমন করেনি। আজ কেন?’

সেই উত্তরটা হয়তো কারো কাছেই নেই। হয়তো নেই সাকিবের কাছেও। কেননা বিরুদ্ধ সময়ে স্রোতের বিপরীতে চলতে হচ্ছে তাকেও। একদিকে দল টানা হেরে চলছে। অন্যদিকে তার পারফরম্যান্সও সাদামাটা। বিশ্বকাপের আগে যে আগুনে সাকিবের দেখা মিলেছিল, মাঝপথে সেই রেশ মিলছে না। তাইতো ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে অনুশীলন করতে গিয়েও বিদ্বেষের শিকার বাংলাদেশের সুপারস্টার। আজ তাই নিজেকে ফুরফুরে রাখতে সতীর্থদের অনুশীলনে কেবল হাঁটাচলা করেই কাটিয়েছেন। তানজিদের নেটের পেছনে শ্যাডো করেছেন ব্যাট নিয়ে। ওইটুকুই তার প্রস্তুতি।

এই উৎসবের শহরে কেবল ভয়ে আছে বাংলাদেশ দলই। রাত পোহালে দুপুরে সাকিব অ্যান্ড কোংদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। যারা এবারের বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে। ডাচরা ভয় দেখিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকেও। তাই তাদের হাল্কা করে নেওয়ার সুযোগ নেই। সঙ্গে শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি জয়ের ম্যাচে এখনো ধুলো পড়েনি। যে ম্যাচে নায়ক হয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ।

‘তারা কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছে। ক্রিকেট খেলায় আসলে বলে জেতা কঠিন। এরকম ম্যাচে আরও চাপ থাকে কারণ, এখানে প্রত্যাশা বেশি থাকে সবার। জিততে চাই সব ম্যাচই। বলে কয়ে হয়তোবা জিততে পারব না। প্রক্রিয়া মেনে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে জিতব।’

‘সিটি অব জয়’ -কলকাতায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয়ের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। যদি না পারে তাহলে ইডেনেই সব শেষ। যদি পারে ইডেন থেকেই পুনর্জন্ম। এই পারা না পারার পার্থক্য কতটুকু তাসকিন বোঝাতে চাইলেন হাসিমুখে, ‘যখন খারাপ হয় তখন আমাদের ১৫ জনেরই সব নিতে হয়, সেটা আমরা নিচ্ছি চাপ সমস্যা নাই। ভালো হলে সবাই মিলে উদযাপন করব।’

কলকাতা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়