ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রূপান্তরিত এক প্রীতির গল্প

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রূপান্তরিত এক প্রীতির গল্প

ডেস্ক রিপোর্ট : পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত এক প্রীতির গল্প। অস্ত্রোপচার করে নিজের শরীরের রূপান্তর করেছেন। কিন্তু তিনি ফেলে আসা স্কুলজীবনের ‘রূপান্তর’ চান না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সে চাওয়া আজ পূর্ণ হতে চলেছে তার।

শৈশবে তিনি ছিলেন কলকাতার টাকি বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্র। আপ্লুত প্রীতি জানিয়েছেন, আজ রবিবার প্রায় বছর কুড়ি পরে শৈশবের স্কুলে আসবেন তিনি। এখন তিনি দিল্লির বাসিন্দা। বয়স সাঁইত্রিশ। সেখান থেকেই ছুটে আসবেন শৈশবের রোমাঞ্চ উপভোগে। অবশ্য স্কুলজীবনে তার এই নাম ছিলনা। রূপান্তরের পর প্রীতি সেনগুপ্ত নামটি ধারণ করেছেন তিনি।

শরীরের রূপান্তরের কারণে প্রীতিকে এই অনুমতি পেতে রীতিমতো যুদ্ধই করতে হয়েছে বলা যায়।

শৈশব বন্ধুদের ফিরে পেতে স্কুলের প্রাক্তনী সংসদের সদস্য হতে চেয়ে যখন আবেদন করেন তখন হুলস্থুল কান্ড ঘটে। তার আবেদন পেয়ে ধন্দে পড়েছিল টাকি বয়েজের প্রাক্তনী সংসদ (টিবাক)। অবশেষে বেশ কয়েক দফা আলোচনার পরে তারা রাজি হন। জয় হয় প্রীতির ইচ্ছের। প্রীতিকে স্বাগত জানানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আর আজই হচ্ছে সেই দিন। প্রীতি বলেন, ‘জানি না, সকলে আমাকে কী ভাবে নেবেন! তবে বন্ধুদের ফিরে পেতে চাই। রবিবার অনেক দিন পরে স্কুলে যাব, এটা ভেবেই আমি ভিতরে ভিতরে উদ্বেল।’

স্কুলের প্রাক্তনী সংসদের সম্পাদক পার্থসারথি সাহা বলেন, ‘প্রাক্তনীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব প্রীতিকে। ওরও যাতে কোনও সঙ্কোচ না হয়, তাই সকলের সামনেই খোলাখুলি কথা বলে পরিস্থিতিটা সহজ করে নেওয়ার কথা ভেবেছি। ওর হাতে সাম্মানিক সদস্যপদও তুলে দেওয়া হবে।’

টাকি বয়েজ থেকে মাধ্যমিক পাশের পরে আমহার্স্ট স্ট্রিটের সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন প্রীতি। পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর। এখন তিনি দিল্লিতে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের একটি স্কুলের স্পেশ্যাল এডুকেটর।

মজার কথা হচ্ছে, প্রীতি বৃদ্ধ বাবা-মাকে এখনও জানাননি তার এই রূপান্তরের কথা। প্রীতি বলেন, ‘ছোট থেকেই আমি অন্য রকমের পুরুষ। লম্বা চুল, পোশাকও মেয়েদের মতো। বাড়িতে বাবা-মায়ের সামনে কুর্তা-পাজামা পরি। ওরা খুবই অসুস্থ। জানলে মানতে পারবেন না।’

রূপান্তরকামী প্রীতিকে স্কুলের প্রাক্তনী সংসদে নেওয়ার এই নজিরকে সাধুবাদ দিচ্ছেন অনেকেই। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ওরা প্রতিনিয়ত দেহ-মন নিয়ে লড়াই করছেন। ওদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে সমাজে-পরিবারে গ্রহণ করতেই হবে। বিচ্ছিন্ন করে রাখলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক।’

প্রীতির মতোই পুরুষ থেকে নারী হওয়া মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভারতের কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ। মানবী বললেন, ‘আমার স্কুলের এ বার ১৫০ বছর। আমাকেও আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে স্কুল। প্রীতির সঙ্গে মিলে গেল বিষয়টা। ভাল লাগছে।’

সূত্র : আনন্দবাজারপত্রিকা



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়