ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউরোপিয়ান ফুটবলে রিয়ালময় একটি বছর

নেছার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইউরোপিয়ান ফুটবলে রিয়ালময় একটি বছর

চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা নিয়ে উল্লসিত রিয়াল মাদ্রিদ

নেছার উদ্দিন : সাফল্য ও ব্যর্থতা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০১৪ সাল কালের গর্ভে বিলিন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এ বছরে ক্লাব ফুটবলে যেমন ছিল না পাওয়ার বেদনা, তেমনি সাফল্যও কম নয়। তাই বলা চলে, এই অঙ্গনে সাফল্য-ব্যর্থতা দেখা দিয়েছিল সমান্তরালভাবেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের ঝুলিতে উঠেছে চার-চারটি মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালটি ছিল রিয়ালময়। এবার দেখে নেওয়া যাক সেই উত্থান-পতনের আমলনামা:

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল : দীর্ঘ এক যুগ কেটে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতা হয়নি রিয়াল মাদ্রিদের। তাদের এই ট্রফি ঘরে তুলতে চাই এক দল সাহসী সৈনিক। যাদের হাত ধরে দীর্ঘদিনের হতাশা ঘুঁচবে ইউরোপের সবচেয়ে সেরা দলটির। স্বর্ণালী সময় কাটানো রিয়ালের জন্য সেরা সময় এবারই।
 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ও বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার গ্যারেথ বেলের মতো তারকা ফুটবলাররা দলে থাকায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন রিয়ালের সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত সে আশা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
 

ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৪-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল। অবিস্মরণীয় এক জয়। ‘লা ডেসিমা’ কী চমৎকারভাবেই না ধরা দিল কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের হাতে!

 

এদিকে, চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালটি ছিল ফাইনালের মতোই। চরম নাটকীয়ও বটে। দিয়েগো গোডিনের গোলে প্রথমার্ধ ও নির্ধারিত সময় এগিয়ে থাকে অ্যাটলেটিকো। এতে কোচ দিয়েগো সিমেয়োনের চোখে-মুখে রাঙিয়ে ওঠে শিরোপার স্বপ্ন। কিন্তু ম্যাচের ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে রামোসের হেড কেড়ে নিয়েছে সিমেয়োনের স্বপ্ন। তখন ম্যাচের ফল ১-১।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ বলে কথা। ড্র করলে চলবে না। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এবার অ্যাটলেটিকোকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন গ্যারেথ বেল, মার্সেলো আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। একে একে অ্যাটলেটিকোর জালে বল জড়ান রিয়ালের এই তারকারা।

এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৭ গোল করার মাধ্যমে ইতিহাস গড়েন রোনালদো।


ইউরোপা লিগ সেভিয়ার : জুভেন্টাস স্টেডিয়ামের উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে পর্তুগালের ক্লাব বেনফিকাকে টাইব্রেকারে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইউরোপা লিগ জিতেছে সেভিয়া। এর আগে সবশেষ ২০০৬-০৭ মৌসুমে উয়েফা ইউরোপা লিগ শিরোপা জিতেছিল সেভিয়া।

 

 

নির্ধারিত সময়ে সমানে-সমান লড়েছিল বেনফিকা ও সেভিয়া। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও পেরিয়ে যায় গোলশূন্য অবস্থায়। টাইব্রেকারে দুইটি শট ঠেকিয়ে সেভিয়ার নায়ক পর্তুগিজ গোলরক্ষক বেতো।

কোপা দেল রের শিরোপাও রিয়ালের : কোপা দেল রে। স্প্যানিশ ফুটবলের অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট। এই বছর টুর্নামেন্টটির ফাইনালে খেলতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদের প্রাণভোমরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ইনজুরির কারণে দলে ছিলেন না তিনি। মৌসুমের একটি বড় শিরোপা ঘরে তোলার সুবর্ণ সুযোগ বার্সেলোনার সামনে।

 



রোনালদো না থাকায় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়াইটা হয় ডি মারিয়া-বেল বনাম মেসি-নেইমারের। এই লড়াইয়ে সফল রিয়ালের ফুটবলাররা। ব্যর্থতার পরিচয় দেন মেসি-নেইমাররা।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল মাদ্রিদ। ফাইনালে রিয়ালের পক্ষে গোলদাতা অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ও গ্যারেথ বেল। বার্সার পক্ষে সান্ত¦নার গোলটি আসে মার্ক বারতার নৈপুণ্যে।

এফএ কাপ চ্যাম্পিয়ন আর্সেনাল : ৯ বছর আগে শেষবারের মতো এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল আর্সেনাল। এরপর শুধু এফএ কাপই নয়; অন্য যে কোনো শিরোপাই মুখ ঘুরিয়ে নিল আর্সেনালের দিক থেকে। তবে ২০১৪ সালে তাদের দিকে ভাগ্যদেবী হাত বাড়িয়েছেন। প্রায় এক দশক পর শিরোপা বন্ধ্যাত্বের গ্লানি ঘোঁচালেন গানার্সরা। লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হালসিটিকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে এফএ কাপের শিরোপা ঘরে তোলে আর্সেনাল। এর মধ্য দিয়ে `ব্যর্থ বিশেষজ্ঞ` কোচ খেতাবের কিছুটা হলেও জবাব দেন কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার।

 

ক্লাবটির সঙ্গে ওয়েঙ্গারের পথচলা ১৯৯৬ সাল থেকে। এর আগে তার অধীনে এফএ কাপে গানাররা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারবার (১৯৯৮, ২০০২, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে)।
 

ম্যানচেস্টার সিটির ঘরে ক্যাপিটাল ওয়ান কাপ : ১৯৭৬ সালের পর প্রথমবারের মতো ক্যাপিটাল ওয়ান কাপের ট্রফি ঘরে তোলে ম্যানচেস্টার সিটি। আগের বছর এফএ কাপের ফাইনাল পর্যন্ত গেলেও শিরোপা জয়ের স্বাদটা পাওয়া হয়নি তারা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জমজমাট ফাইনালে গোলে সান্ডারল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা উল্লাসে মেতে ওঠেন তোরে-অ্যাগুয়েরো-নাসরিরা।

 

 

ক্লাব বিশ্বকাপে সেরা রিয়াল : মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে প্রতি বছরই বসে ক্লাব বিশ্বকাপ। ইউরোপের সেরা দল রিয়াল মাদ্রিদ। তাই লস ব্লাঙ্কসরাও আসরটিতে অংশ নেয়। সময়ের সেরা ছন্দে থাকা দলের সামনে অন্য কোনো দলের পাত্তা না পাওয়ারই কথাই। রিয়াল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে, এমনটাই অনুমান করেছিলেন ফুটবলবোদ্ধারা। শেষ পর্যন্ত তাদের অনুমানই বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

 

মরক্কোর মারাকেশ স্টেডিয়ামে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন দল সান লরেঞ্জোর বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে শিরোপা ঘরে তোলে কার্লো আনচেলোত্তির দল। প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল রিয়াল। স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে একটি করে গোল করেন সার্জিও রামোস ও গ্যারেথ বেল।
 

২০১৪ সালে চতুর্থ শিরোপা ঘরো তুলল রিয়াল। ট্রফি চতুষ্ঠয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত কোচ আনচেলত্তির মুখে ছিল সাফল্য-মণ্ডিত এই বছরের স্তুতিগাথা, ‘এই বছরটা দারুণ গেছে। সত্যিই এই বছরটা সারাটা জীবন মনে রাখবেন রিয়াল ভক্তরা। আমরা এখন সত্যিকারের একটি দল। দারুণ একটা পরিবারও বটে।’



 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ ডিসেম্বর ২০১৪/নেছার/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়