ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পরীমনির বিয়ে সমাচার

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরীমনির বিয়ে সমাচার

পরীমনি

জাহাঙ্গীর আলম বকুল : বাংলা চলচ্চিত্রের উঠতি নায়িকা পরীমনি। তিনি পর্দায় অভিনয় করে ‘নায়িকা’ বিশেষণের কতটুকু সার্থকতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, তার বিচারে দর্শকরা বিভক্ত হলেও তার নামের যথার্থতা যে রূপে ধরা পড়েছে, সেই বিষয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করবে না। ছোটবেলার রূপকথার গল্পের পরীর মতো রূপসী তিনি। এই রূপই তাকে পর্দায় প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করছে।

 

এই পরীমনিকে নিয়ে কয়েক দিন ধরে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও কিছু অনলাইন পত্রিকায় ঝড় উঠেছে। এই ঝড় যে পরীমনি নিজে তুলেছেন বা অভিনয় দিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। এই ঝড়-তুফান তোলা বা থামানোর পেছনে তার তেমন কৃতিত্ব ছিল না। কিন্তু ঝড় থামানোর চেষ্টায় ‘অপরিপক্ব’ মন্তব্য (স্ট্যাটাস) করে নিজের অজান্তে ঝড়কে সাইক্লোনে রূপান্তর করেছেন। আবার দুষ্ট লোকেরা এ কথাও বলে- এটা নাকি একটা কৌশল, আলোচিত হওয়ার বা আলোচনায় থাকার। বিশ্বের নামি-দামি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমা ব্যবসা সফল করার জন্য এমন কৌশল নেন। কী জানি, পরীমনির বিয়ের খবর নিয়ে ঝড়-তুফানের পেছনে এ রকম কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না!

 

পরীমনি মডেলিং থেকে ছোট পর্দায়, এরপর রুপালি পর্দায় অভিনয় করছেন। কয়েকটি নাটক এবং সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে হয়তো আরো করবেন। ভবিষ্যতে যে আরো করবেন- এ নিয়েই বেধেছে গন্ডগোল। তিনি যদি আর কখনো অভিনয় না করতেন, তাহলে হয়তো ঝড়-তুফান, গন্ডগোলের প্রয়োজন থাকত না। কেননা তখন তার চিরকুমারী এবং অনন্ত যৌবনা থাকতে হতো না।

 

পরীমনি বিবাহিত কি না, এ নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা আছে। পরীমনিকে বন্ধুর বউ দাবি করে পরীমনির সঙ্গে অচেনা যুবকের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা, সেই দাবি অস্বীকার করে পরীমনির অপরিপক্ব স্ট্যাটাসের গরম আবহাওয়ার মধ্যে আরেক যুবক পরীমনিকে ভাবি দাবি করে বসলেন। ওই যুবক তার ভাইয়ের সঙ্গে ভাবির (পরীমনি) কয়েকটি অন্তরঙ্গ ছবি এবং বিয়ের কাবিননামা হাজির করলেন। এবারও স্ট্যাটাস দিয়ে কারো ভাবি হতে অস্বীকার করলেন পরীমনি। আমরা পাঠকরা অবাক বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখলাম এবং কিছুটা বুঝলামও। সুন্দরী, নায়িকা সকলের ভাবি হয়, নাকি আসলেই কারো ভাবি বা বন্ধুর বউ ছিলেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। সেটা খুঁজে বের করা- আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়।

 

পরীমনি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় তার পেশা। পেশার কারণে তিনি এ দেশের একশ্রেণির মানুষের কাছে পরিচিত। তিনি সুন্দরী এবং পর্দায় অভিনয় করায় বিশেষ করে যুবকদের কাছে বেশি পরিচিত। হয়তো কারো মানসকন্যাও। এটা তার জীবনের একটা দিক। এর বাইরেও তিনি একজন নারী। তিনি কোনো না কোনো সংসারে বসবাস করেন। সুতরাং তার স্বামী, সন্তান, সংসার থাকবে- এটা স্বাভাবিক। বরং না থাকাটা অস্বাভাবিক। তাহলে পরীমনি যদি বিয়ে করেই থাকেন, তাহলে তিনি কি অপরাধ করে ফেলেছেন? বিয়ে করা কি অপরাধ?

 

তার বিয়ের খবর নিয়ে যে পরিমাণ হইচই করা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে পরীমনিদের বিয়ে নিয়ে যুবকদের ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা। তার একান্ত ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। অবস্থা এমন- বিয়ে হয়ে গেলেই তার অবস্থান চ্যুতি ঘটবে। তিনি নায়িকা থেকে খলনায়িকা হয়ে যাবেন। এটা সম্ভবত পরীমনিও বোঝেন, তাই তিনি বিয়ের ঘটনা অস্বীকার করতে লেগে গেলেন। একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে তার নায়িকাচ্যুতি রক্ষা করলেন।

 

পৃথিবীর সকল সুপারস্টারকে নিয়ে মানুষের একধরনের কৌতূহল থাকে। কারণ তারা যে সমাজে বসবাস করেন, সেই সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা সেই সমাজের আইডল। সুতরাং তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও একধরনের কৌতূহল থাকবে, সেটা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কৌতূহলের একটা সীমা থাকতে হবে। মার্জিত একটা অবস্থান ধরে রাখতে হবে। আমাদের মিডিয়াও সেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে কেন জানি বিচ্যুতি ঘটে। একজন স্টারেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে, তাকেই সেই জীবন উপভোগ করার সুযোগ থাকা উচিত।

 

ঢাকাই সিনেমায় এখন যারা অভিনয় করেন, বিশেষ করে নায়িকারা, তারা মনে করেন- যত দিন তারা মিডিয়ায় থাকবেন, তত দিন তাদের বিয়ে করা যাবে না বা করলেও গোপন রাখতে হবে। যদি দর্শক জেনে যায় ওই নায়িকা বিয়ে করে ফেলেছেন, তাহলে তার সিনেমা কেউ দেখবে না। এই আশঙ্কা কতটা সত্য জানি না। তবে পরীমনি যেভাবে বিয়ে ঠেকাতে লেগে গেলেন, তাতে আন্দাজ হয়- আশঙ্কার ভিত্তি আছে। কিন্তু কেন এমন ভিত্তি তৈরি হলো?

 

বিগত বেশ কয়েক বছর কয়েকটি আর্ট ফিল্মি ছাড়া ঢাকাই সিনেমা আমার দেখা হয়নি। এর জন্য আমার মধ্যে অনুতাপ কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু আমার মতো অধিকাংশ যুবককে দেখেছি তারা যে ঢাকাই সিনেমা দেখেন না, এটা একধরনের অহংকারের সঙ্গে অবলীলায় বলেন। কিন্তু ওই যুবক হলিউড বা বলিউডের সিনেমার কথা বলে গর্ব অনুভব করেন। যারা এখনকার বাংলা সিনেমার কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন, সেই তারাই সত্তর বা আশির দশকের সিনেমার কথা গর্বের সঙ্গে বলেন। তাহলে দর্শকদের দোষ দেবেন কীভাবে? আর সম্ভবত এই কারণেই পরীমনিরা অবিবাহিত থাকতে চান।  

 

মুক্তির বহু বছর পরে ‘অবুঝ মন’, ‘ঝড়ের পাখি’ ‘বধূ বিদায়’ বা ‘ময়না মতি’ যখন আমার উপজেলা শহরের সিনেমা হলে চলেছে, বাবা-মাকে মিথ্যা বলে কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেখেছি। সেই সময়ে গ্রামে গ্রামে ভিসিআরে (ওই সময় সিসিআর ছিল) সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখেছি। যুবক-মধ্যবয়সি শত শত মানুষ একসঙ্গে বসে দেখেছে। তখনকার সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের বেশির ভাগই ছিলেন বিবাহিত। বয়স অনুসারে মানানসহ চরিত্রে তারা দীর্ঘদিন অভিনয় করে গেছেন। জনপ্রিয়তা কমেনি। সিনেমা দেখার সময় কখনো মনে প্রশ্ন জাগেনি- কবরী, সুচন্দা, শাবানা, রোজিনা, ববিতারা বিবাহিত না অবিবাহিত। তাহলে এখনকার দর্শকদের মনে প্রশ্ন জাগে কেন? কেন তারা নায়িকাকে অবিবাহিত দেখতে চান?

 

উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা সম্ভবত সর্বকালের রেকর্ড। মৃত্যুর পরও তারা সমান জনপ্রিয়। তারা কেউ অবিবাহিত ছিলেন না। দুজনই বিয়ের পর চলচ্চিত্রে এসেছেন। চলচ্চিত্রে অবিবাহিত চরিত্রের চেয়ে বিবাহিত চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তারপরও লাখ লাখ যুবকের মানসকন্যা হয়েছেন, হয়ে আছেন। কারণ তারা যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, মনে হয়েছে- তিনি তাই। পরীমনিদের কি মনে হয়?

 

সমস্যাটা সম্ভবত এখানে। সুচিত্রা, শাবানা, কবরীদের অবিবাহিতও থাকতে হয়নি, স্বল্পবসনা হয়ে ক্যামেরার সামনেও দাঁড়াতে হয়নি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/সাইফুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়