ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভয়ংকর ভেরদুন যুদ্ধের শত বছর

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩২, ২৯ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভয়ংকর ভেরদুন যুদ্ধের শত বছর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছরে সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত ভেরদুন যুদ্ধ। ১৯১৬ সালের এ যুদ্ধে ফরাসি বাহিনীর কাছে হেরে যায় জার্মান বাহিনী।

 

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যারকেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ভেরদুন যুদ্ধের শত বছর পূর্তিতে নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

 

জার্মানি এই যুদ্ধে হেরে গেলেও তা এখন দুই দেশের সৌহার্দের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ম্যারকেল এবং ওলাঁদ এ দিনে ইউরোপীয় ঐক্যের ওপর আবারো গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

 

ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটানা ১০ মাস ধরে জার্মান ও ফরাসি বাহিনীর মধ্যে এ যুদ্ধ চলে। একটি স্থানে টানা যুদ্ধ চলার দিক থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধ।

 

ম্যারকেল এবং ওলাঁদের ভেরদুনের উত্তরে জার্মানির কনসেনভয় সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের স্মরণানুষ্ঠান শুরু হয়। এখানে ১১ হাজার জার্মান সেনার সমাধি রয়েছে। দুই নেতা সমাধিক্ষেত্রে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় জার্মানি ও ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।

 

এরপর দুই নেতা ভেরদুনে যান। সেখানে তারা বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন।

 

রোববার বিকেলে মূল স্মরণানুষ্ঠান হবে ওসুয়ারিতে। এখানে ১ লাখ ৩০ হাজার অজ্ঞাত সেনার সমাধি রয়েছে। ওসুয়ারিতে রাখবেন ম্যারকেল এবং ওলাঁদ।

 

 

ভেরদুন যুদ্ধের এবারের স্মরণানুষ্ঠান মূলত জার্মানি ও ফ্রান্সের শিশুদের শেখানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে। দুই দেশের ৪ হাজার শিশু এতে অংশ নিয়েছে।

 

ফ্রান্সে স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে ম্যারকেল বলেন, স্মরণানুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়া বলে দিচ্ছে জার্মানি ও ফ্রান্সের বর্তমান সম্পর্ক ভালো।’ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ বলেছেন, ‘ভেরদুন দুঃসময়ের স্মৃতি নয়, বরং আশার স্মৃতি।’

 

তবে ইউরোপের দেশগুলোর নানামুখী সমস্যা যেমন- অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা বলেছেন ম্যারকেল এবং ওলাঁদ। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীদের নিয়ে বিপাকে পড়ার বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেন। তবে ম্যারকেল জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইউরোপ অনেক কিছু করেছে এবং অনেক কিছু অর্জনও করেছে।’

 

ভেরদুন (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬ Ñ ১৫ ডিসেম্বর ১৯১৬)
১। ভেরদুন ফ্রান্সের অধীন একটি স্থান। ভেরদুনের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে জার্মানি ও ফ্রান্সের বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়।

 

২। যুদ্ধ শুরুর ১০ মাস পর ১৯১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয়। জার্মান বাহিনীর দখল করে নেওয়া ভেরদুন যুদ্ধক্ষেত্রের পুরো এলাকা আবারো ফিরে পায় ফ্রান্স।

 

৩। জার্মানির প্রধান সামরিক কর্মকর্তা ও কৌশল প্রণয়নকারী জেনারেল এরিক ভন ফনকেনহায়ান মিত্রপক্ষের কাছে তার অবস্থান তুলে ধরতে এবং ফরাসি জনগণের মর্যাদা পেতে ভেরদুনকে টার্গেট করেন।

 

৪। ভেরদুন যুদ্ধের সঙ্গেই আরেকটি যুদ্ধ জারি রাখে ফনকেনহায়ান। এতে করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে মৈত্রী পোক্ত হয়।

 

 

৫। ছোট অঞ্চল ভেরদুনের দখল নিতে জার্মানি ও ফ্রান্সের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সম্পদ ও প্রাণের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা দুই দেশের কাছে মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়।

 

৬। ফ্রান্সের ১১ লাখ ৪০ হাজার সেনা ৭৫ থেকে ৮৫ ডিভিশনে যুদ্ধে অংশ নেন।

 

৭। জার্মানির ১২ লাখ ৫০ হাজার সেনা ৫০টি ডিভিশনে ভাগ হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন।

 

৮। এ যুদ্ধে ৩ লাখ ৪২ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪২ হাজার ফরাসি সেনা নিহত হন।

 

৯। ভেরদুন যুদ্ধে জার্মানির ২ লাখ ৪১ হাজার থেকে ৪ লাখ ৩৪ হাজার সেনা নিহত হন।

 

১০। এ যুদ্ধের ১০ মাসে ৬০ মিলিয়ন গোলা নিক্ষিপ্ত হয়। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ বিস্ফোরিত হয়নি। যে কারণে ভেরদুন যুদ্ধক্ষেত্রে আজো সেভাবে জনবসতি গড়ে ওঠেনি।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৬/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ