‘পরিচয়’ যাচাইয়ের ওপর ফি আরোপ হচ্ছে (পর্ব-২)
জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করার ক্ষেত্রে ফি আরোপ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিপরিষদের সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং পরিষেবার মান উন্নয়নের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হলে এনআইডি প্রমাণ করতে ইচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে এখন থেকে আইসিটি বিভাগকে ৫ টাকা দিতে হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, পরিচয় প্রমাণ করার ক্ষেত্রে জন্য চার ধরনের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসিক ৫ টাকা, অটোফিল ১০ টাকা, ফেসিয়াল রিকগনিশন ১৫ টাকা এবং বায়োমেট্রিক প্রমাণের জন্য ২০ টাকা ফি দিতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে ১৫ মার্চ একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। ওই সভায় পরিষেবা চার্জ এবং পরিষেবা নির্দেশিকা ওয়েবসাইট যাচাই করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চার্জ আরোপের বিষয়টি স্বীকার করে আইসিটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি সারা বিশ্বের সরকারের জন্য রাজস্ব আহরনের একটি অন্যতম উৎস। সেবার মান উন্নয়নের পশাপাশি রাজস্ব আহরনের জন্যও এই পরিসেবা ব্যবহার হবে।
তিনি বলেন, এনআইডির আওতা বাড়ানোর জন্য সরকার সারা দেশে ১২ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা ভাবছে।
আইসিটি বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন এনআইডি কার্ডের যাচাইকরণ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। কারণ কয়েক কোটি মানুষ সারা দেশে টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করার চেষ্টা করে।
কারিগরি ত্রুটি এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে অনেকেই সুরক্ষা অ্যাপে তাদের নাম নিবন্ধন করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এ ধরনের ত্রুটি দূর করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফি আরোপের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে আদায় করা রাজস্ব তিনভাগে ভাগ হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার (ডাটা মালিক), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ডিজিকম গ্লোবাল সার্ভিসেস। ফি বন্টনের হার হবে ১:১:৩। কর বহির্ভূত রাজস্ব হিসেবে সরকারের অংশ সরকারি তহবিলে জমা হবে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে আইসিটি বিভাগ পরিচালিত পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ডিজিকম গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিষেবা চার্জ বা পরিষেবা মূল্য আরোপের হার চূড়ান্ত করে।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অ্যাপসটিতে এমন একটি ব্যবস্থা থাকবে যা একটি এনআইডি কার্ড এবং অন্যান্য পরিষেবা যাচাই করার আগে পেমেন্টের মাধ্যমে পরিষেবা চার্জ আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। প্রযোজ্য চার্জ পরিশোধের পরই একজন সেবা প্রত্যাশীকে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।’
অ্যাপ ‘পরিচয়’ বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসের সাথে সংযুক্ত গেটওয়ে সার্ভারের মাধ্যমে এনআইডি কার্ড প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। গেটওয়েটি এখন জাল আইডি প্রতিরোধ করছে এবং নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করছে। এটি সেই কাজগুলোকে ত্বরান্বিত করবে যেখানে এনআইডির সঙ্গে নিবন্ধন প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী সংস্থা, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোসহ ১৭০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ‘পরিচয়’ প্ল্যাটফর্মের সার্ভিস ব্যবহার করছে এবং খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিপণন সংস্থা, ব্যাংক ও বিমা সংস্থাসহ ৭২টি প্রতিষ্ঠান এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ‘পরিচয়’ প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার-এর জাতীয় ই-সার্ভিস বাস-এর সঙ্গে সংযুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় সরকারের ই-সেবা দেওয়ার সময় সেবাগ্রহীতার পরিচয় নিশ্চিত করা এবং নাগরিকের তথ্য-উপাত্ত দেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে রাকা সম্ভব হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত নিবন্ধন আবেদনগুলো থেকে এ পর্যন্ত ১২ কোটির বেশি নাগরিকের পরিচয় যাচাই সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিচয় প্ল্যাটফর্মটি বর্তমানে এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন সনদ, মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাইসহ ৫-৬ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিচ্ছে।
/হাসনাত/এসবি/