বিজয় বা স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ড অর্জন নয়: গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “বিজয় বা স্বাধীনতা শুধু একটিমাত্র ভূখণ্ড অর্জন নয় বরং প্রকৃত বিজয় বা স্বাধীনতা হচ্ছে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাসহ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকারের স্বাধীনতা।”
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের ন্যাম ভবনের সামনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় যুব বিভাগ আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী মনোভাব ও তাদের এদেশীয় অ্যাজেন্টদের কারণে আমরা বিজয়ের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারিনি এবং আমাদের স্বাধীনতাও সুরক্ষিত হয়নি।”
“সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, পাকিস্তান বাহিনী সেদিন আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ না ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা জগজিৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ছিলেন অনুপস্থিত। কেন অনুপস্থিত ছিলেন সে প্রশ্নের আজও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্থন ভারতীয় বাহিনীর কাছে বিবেচনায় প্রতিবেশী দেশটি ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে। এর মাধ্যমে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করছে,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “ভারত আমাদের দেশের স্বাধীনতার-সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি না দিয়ে আওয়ামী বাকশালীদের মাধ্যমে দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিল। কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে সে অবস্থার অবসান হয়েছে।”
তিনি ভারতের এমন ন্যাক্কারজনক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদসহ মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
ওসমান হাদির ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওসমান হাদি মৃতুঞ্জয়ী আমাদের জাতীয় বীর। এমন সময় তার ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে, যার মাত্র এক দিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় যে, জাতীয় নির্বাচন বানচাল করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই হাদির ওপর এ ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। মূলত, এ জুলাই যোদ্ধাকেই শুরুতেই টার্গেট করা হয়েছে। কুচক্রিরা আর কাদেরকে টার্গেট করেছে তা আমরা জানি না। তবে তালিকা বেশ দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, জুলাইযোদ্ধাসহ সব প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে সবার জন্য প্রস্তুত করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও ভয়ভীতিহীনভাবেই ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, “শরীফ ওসমান হাদি আধিপত্যবাদী অশক্তির বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। আজ যখন আমরা বিজয় র্যালি করছি, তখন এ জাতীয় বীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিন্তু এক হাদিকে হত্যা করে জনগণের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না বরং হাদিরা বারবারই ফিরে আসবে।”
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় যুব বিভাগের সভাপতি ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। কিন্তু নেতিবাচক ও বিভেদের রাজনীতির কারণে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। নানা ছলছুঁতায় মহলবিশেষ আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়নি। তাই অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে আমাদেরকে বিভেদের রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।”
তিনি দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১৪ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, ঢাকা-১৭ আসনের ডা. এস এম খালিদুজ্জামান, ঢাকা-১৬ আসনের কর্নেল (অব.) আব্দুল বাতেন, ঢাকা-৬ আসনের জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, নাসির উদ্দীন ও জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার নো’মান আহমেদী ও যুব বিভাগের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাঈনুদ্দীন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ