ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুয়েত প্রবাসীর উপার্জিত অর্থের হিসাব, এক করুণ বাস্তবতা

আ হ জুবেদ, কুয়েত থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৮ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১১:১১, ২৮ জুলাই ২০২৫
কুয়েত প্রবাসীর উপার্জিত অর্থের হিসাব, এক করুণ বাস্তবতা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশির ঘরের ছবিতে দেখা গেছে, প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থের হিসাব কিছু কাগজপত্র আকারে একটি দেয়ালের হ্যাঙ্গারে ঝোলানো রয়েছে। স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সেগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থের রসিদ ছিল। পাশেই ঝোলানো রয়েছে পরিধানের জন্য কয়েকটি সাধারণ পোশাক। এই দৃশ্যটি একজন প্রবাসীর জীবনের এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। যেখানে দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও কষ্টের পর উপার্জিত অর্থ শেষে প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়ায়।

কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দিনের পর দিন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, উন্নত জীবনের আশায় তারা নিজেদের প্রিয়জন ও মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমান প্রবাসে। এখানে এসে তারা দিনরাত পরিশ্রম করেন, অনেক সময় অমানবিক পরিবেশেও কাজ করতে বাধ্য হন। তাদের উপার্জিত প্রতিটি পয়সা আসে কঠোর সংগ্রাম এবং ঘাম ঝরিয়ে।

আরো পড়ুন:

কিন্তু এই বিপুল আত্মত্যাগের শেষ ফল কী? প্রবাসে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ চলে যায় নানান খরচপাতিতে। এর মধ্যে রয়েছে নিজের থাকা-খাওয়া, বাসস্থান ভাড়া, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, যাতায়াত খরচ এবং আরো অনেক আনুষঙ্গিক ব্যয়। এছাড়া, দেশে থাকা পরিবারের খরচ, যেমন– সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, বিয়ে-শাদি, জমি কেনা বা বাড়ি তৈরির মতো বিষয়গুলো তো আছেই। অনেকের ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনের আবদার মেটাতেও অর্থের একটি অংশ চলে যায়।

দীর্ঘদিন এভাবে অর্থ পাঠানোর পর, যখন প্রবাসীরা নিজেদের উপার্জিত অর্থের চূড়ান্ত হিসাব করেন, তখন প্রায়শই দেখা যায় যে, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলে কিছুই নেই। বছরের পর বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর, দিনশেষে তাদের নিজেদের হাতে থাকে প্রায় শূন্য। যে স্বপ্নের বীজ বুনে তাঁরা দেশ ছেড়েছিলেন, সেই স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার আগেই তা খরচের খাতায় মিলিয়ে যায়।

এই চিত্র অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি শুধু আর্থিক শূন্যতা নয়, এটি মানসিক হতাশারও জন্ম দেয়। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো বিদেশে কাটিয়েও যখন একজন প্রবাসী দেখেন যে তার নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়, তখন তা গভীর বেদনার কারণ হয়।

প্রবাসীরা মনে করেন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত প্রবাসীদের এই দুর্দশার দিকে নজর দেওয়া। তাদের উপার্জিত অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি এবং তাদের সঞ্চয়কে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রবাসীরা যেন শুধু দেশের অর্থনীতির চাকাই ঘোরানোর উপাদান না হয়ে, নিজেদের জীবনও সমৃদ্ধ করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। ছবির এই একটি দৃশ্য যেন সেই নীরব আর্তনাদই প্রকাশ করছে, যা লাখ লাখ প্রবাসীর অন্তরে লুকিয়ে আছে।

ঢাকা/হাসান/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়