ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত চরাঞ্চলবাসী

জাহিদুল হক চন্দন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৩০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:২২, ৩০ অক্টোবর ২০২০
পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত চরাঞ্চলবাসী

আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের জনগণ পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত। চরাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্রতি মাসে স্যাটালাইট প্রোগ্রাম, পাক্ষিক ও মাসিক বৈঠক, বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও চরাঞ্চলের কোনো ইউনিয়নে এ ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে পরিবার পরিকল্পনা সেবায় দায়িত্বরতদের দাবি জনবল সংকটের কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, আজিমনগর ইউনিয়নে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক‌্যাল অফিসার (স্যাকমো) ও একজন ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) কর্মরত রয়েছেন। এ ইউনিয়নে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও ভবনটি খোলা হয় না।

বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, ‘১৪ বছরের মেয়ে জুঁই, ১২ বছরের ছেলে রাকিব, ৬ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ও ১ বছরের জিয়ানকে নিয়ে আমার সংসার।পরিবার পরিকল্পনার কথা মানুষের মুখে শুনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কোনো কর্মী আমাকে কোনো দিন কিছু বলেনি। এছাড়া, কোনো নারী কর্মী আমার স্ত্রীর কাছেও আসেনি।’ 

একই এলাকার কাকলী বেগম বলেন, ‘বছরে দুই একবার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের নারীরা এসে নাম ঠিকানা নিয়ে যান। তবে কোনো সেবা বা পরামর্শ দেন না। আমাদের এখানে কোনো সমস্যা হলে লোকজন কবিরাজের কাছে যায়।’

আজিমনগর এলাকার উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘এ এলাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেড় দুই মাস পর পর ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ নেওয়ার জন্য মসজিদে মাইকিং করে। তবে কখনো পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সেবা পায়নি। চরাঞ্চলে যাদের পোস্টিং তারা কেউ নিয়মিত পরিবার পরিকল্পনার সেবা দেন না। ঠিক মতো সেবা দিলে এই এলাকায় জনসংখ‌্যা এতো বাড়তো না।’ 

এ ইউনিয়নে কর্মরত ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার কাজ কর্মীদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া। নারী কর্মী না থাকার পরও স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে মৌসুমী আক্তার নামে একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) ও মো. বরকত আলী নামে ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফডব্লিউআই)  কর্মরত রয়েছেন।

এ এলাকার বাবুল মিয়া বলেন, ‘শুনেছি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা লোকজন কাজ করে। তবে এ এলাকায় যারা দায়িত্বে আছেন তারা কোনো সেবা দেন না। ফলে যে যার মতো গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।’

এ বিষয়ে মৌসুমী আক্তারের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর মো. বরকত আলী জানান, মাত্র একজনকে সঙ্গে নিয়ে এতো বেশি লোকের সেবা দেওয়া কষ্টসাধ্য। তারপরেও চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই বলে দাবি করেন তিনি। 

সুতালড়ী ইউনিয়নে শাহ আলম নামে একজন ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) ও হাসনা মমতাজ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) থাকলেও সেবা পান না সাধারণ মানুষ ।

লিয়াকত মৃধা নামে একজন বলেন, ‘এ ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনার কোনো অফিস নেই বলে জানি। আর কেউ কাজ করে কি না তাও কেউ বলতে পারবে না। কারণ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের এলাকায় কোনো উঠান বৈঠক হয় না। এছাড়া, মা-বোনদের কাছে কোনো নারী কর্মী পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কখনও আসে না।’ 

হাসনা মমতাজ বলেন, ‘মাত্র ১ মাস আগে সুতালড়ী ইউনিয়নে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও ওষুধ সামগ্রী বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তাই কাজ শুরু করতে পারেনি।’ 

ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর শাহ আলম জানান, জনবল সংকট থাকার পরেও ভিজিটরকে নিয়ে তিনি সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিচ্ছেন। 
চরাঞ্চলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চরাঞ্চলে কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা অফিসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারীরাই নিয়ম মাফিক সেবা দিচ্ছেন না। ফলে এ এলাকার মানুষ পরিবার পরিকল্পনা সস্পর্কে তেমন সচেতন না। দরিদ্র পরিবার হয়েও একাধিক সন্তান হওযায় অনেকেরই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এখানকার লোকজন পরিবার পরিকল্পনার কোনো সেবা পায় না। যারা দায়িত্বে আছেন তারা মাসে মাসে শুধু বেতন তোলেন।’

সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক মো. গোলাম নবী বলেন, ‘চরাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনার সেবা পৌঁছে দিতে জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আর যারা দায়িত্বরত থাকার পরও ঠিক মতো সেবা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর সেবার মান বাড়াতে তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া হবে।’ 

মানিকগঞ্জ/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়