ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সামনে রমজান, ব্যস্ত এখন মুড়ির গ্রাম ‘তিমিরকাঠি’

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১০:৪৩, ১০ এপ্রিল ২০২১
সামনে রমজান, ব্যস্ত এখন মুড়ির গ্রাম ‘তিমিরকাঠি’

সামনে রমজান। রোজা এলে ইফতারে মুড়ির চাহিদার কথা সবারই জানা। আর সে চাহিদার জন্যই প্রতি বছরের মতো এবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মুড়ির গ্রাম বলে খ্যাত ‘তিমিরকাঠি’। 

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার এই গ্রামটি অনেক আগে থেকেই পরিচিতি পেয়েছে ‘মুড়ির গ্রাম’ হিসাবে। সুস্বাদু বলে কদর আছে এ গ্রামের মুড়ির। এজন্য রমজানের আগেই মুড়ি ভেজে পাইকারদের হাতে তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানের মুড়ি ব্যবসায়ীরা ।

তিমিরকাঠি গ্রামের প্রায় শতভাগ পরিবারই মুড়ি ভাজা ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এটাই তাদের মূল উপার্জনের উৎস। আর মুড়ি ভাজা আদি পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা। সারা বছর এ কাজেই তাদের সংসার চলে। বিশেষ করে রমজান মাস এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

এ গ্রামে মুড়ি ভাজার শব্দ চোখে পড়ার মত । শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের সকলেই মুড়ি ভাজার কাজে গৃহস্থালী নারীদের সহায়তা করেন। রমজানের আগেভাগেই মুড়ি ভেজে মজুদ রেখে বাড়তি আয় করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি পরিবারই মুড়ি ভাজা নিয়ে ব্যস্ত। চারদিকে মাটির হাঁড়ি পাতিলের টুং-টাং শব্দ। এ গ্রামের মুড়ি ব্যাবসায়ীরা জানালেন, হাজারো মণ মুড়ি এ গ্রাম থেকে পাইকার ও আড়ৎদারদের সরবরাহ করেন তারা। এ গ্রামের মুড়িতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার হয়না। হাতে ভাজা এ মুড়ি মানুষের কাছেও খুব পছন্দের। বাজারের প্যাকেট জাত মুড়ির চেয়েও কদর বেশি তিমিরকাঠি গ্রামের হাতে ভাজা এ মুড়ির।

স্থানীয়রা জানান, যেসব মুড়ি দেখতে ধবধবে সাদা তা মেশিনে রাসায়নিক কেমিক্যাল ও ইউরিয়া সারে তৈরি। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা সবার কাছেই।

মুড়ি কারিগর মাকসুদা বেগম জানান, মুড়ির জন্য উপযোগী বিশেষ তিনটি প্রজাতির ধান থেকে ভালো মুড়ি হয় । এখানে মোটা, নাখুচী ও সাদা মোটা নামের তিন প্রজাতির ধানের ব্যাপক চাষাবাদ ও ফলন হয়। পূর্বে এক মাত্র বউরি ধানের মুড়ির প্রচলন থাকলেও এখন তার চেয়েও সরস ধান হিসেবে নাখুচী ধানের মুড়ির কদর বেড়েছে। এছাড়াও দিনাজপুর থেকে ভারতের নলটি চাল কিনে এনেও মুড়ি ভাজেন তারা। তিন যুগ ধরে এ গ্রামের পরিবারগুলো মুড়িভাজার পেশায় জড়িত।

জানা গেছে, দৈনিক গড়ে ১০০ কেজি মুড়ি ভাজতে পারলে খরচ বাদ দিয়ে ৭/৮শ টাকা লাভ হয়। তবে নিজেরা ধান কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে মুড়ি ভেজে শহরে নিয়ে বিক্রি করলে দ্বিগুণ লাভ হয়।

স্থানীয় আড়ৎদাররা এ গ্রাম থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, বরিশাল, চট্রগ্রাম, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কাউখালী, পটুয়াখালী, মির্জাগঞ্জ, মহিপুর, কুয়াকাটা, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রপ্তানি করেন বলে জানান।

মুড়ির আড়ৎদার মো. গিয়াস উদ্দিন খাঁন জানান, এখানকার উৎপাদিত মুড়ি দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। তাই রমজান এলে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এই মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার মুড়ি বিক্রি হবে এখান থেকে।

ঝালকাঠি বিসিক এর উপব্যবস্থাপক মো. শাফাউল করীম জানান, তিমিরকাঠি গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ি দেশব্যাপী সমাদৃত। রমজান মাস এলেই আগে থেকে মুড়ি ভাজতে শুরু করেন ওখানকার লোকজন। রমজান মাসকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটান মুড়ি ভাজার কারিগররা। তাদেরকে বিসিক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে স্বল্প শর্তে ঋণ দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে।

ঝালকাঠি/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়