ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

লকডাউনে দর্জিপাড়ায় মাথায় হাত

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ২১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২০:৩২, ২১ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনে দর্জিপাড়ায় মাথায় হাত

হিলি বাজারের ফুটপাতে গালে দিয়ে বসে আছেন দর্জি জয়েন উদ্দিন

রোজার শুরুতেই শুরু হয়েছে  দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন। এই লকডাউনে বন্ধ রয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। বন্ধ রয়েছে ঈদকেন্দ্রিক সব ধরনের বেচাকেনাও। এরই প্রভাব পড়েছে 

দিনাজপুরের হিলির দর্জিপাড়ায়। চলমান লকডাউনে দর্জিপাড়ার কারিগরররা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। তারা বলছেন, এই মহামারি তাদের রুটিরুটি কেড়ে নিয়েছে। ভবিষ‌্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তরা। 

বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে হিলি বাজারসহ বন্দরের বিভিন্ন দর্জির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের কবলে পড়ে বন্ধ রয়েছে ছোট বড় সব ধরনের দর্জির দোকান। কর্মহীন ঘুরে বেড়াচ্ছেন কারিগররা।  

সামনে ঈদ। প্রতি বছর এই দিনগুলোতে ব্যস্ত  সময় পার করেন তারা। কাপড়ের অর্ডার নিতে হিমশিম খেতেন দর্জি দোকানের মাস্টাররা।  রাতদিন দোকান খোলা থাকতো। বাজতো সেলাই মেশিনের শব্দ। বর্তমান চিত্র ভিন্ন। লকডাউনে সবই বন্ধ।

 কৃষকের ধান শুকানোর জাল সেলা করছেন আমিরুল ইসলাম

কিছু কিছু দর্জি দোকান খোলা দেখা গেলেও, হাতে নেই নতুন পোশাক তৈরির অর্ডার। কপালে আর গালে হাত দিয়ে বসে আছেন অনেক কারিগর। চিন্তায় কপালের চামড়া ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে তাদের। সামনে ঈদ, আর ঈদ মানেই আনন্দ। প্রত্যেকের পরিবার-পরিজন পথ চেয়ে থাকে, ঈদের নতুন কাপড় পাবে বলে। কিন্তু এবার নতুন কাপড় দেওয়ার চিন্তা নেই তাদের। তার চেয়ে বড় চিন্তা একমুঠো খাবার জোগাড় নিয়ে। 

কথা হয় হিলি চুড়িপট্টি মোড়ের দর্জি দোকানের কারিগর সাবিনা ইয়ামিনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রমজানের শুরুতে শুরু হয়েছে লকডাউন। প্রতি বছর এইসময় কাপড় বানানোর হিড়িক পড়ে। আর এই লকডাউনে দোকান খুলতে পারছি না। আবার তেমন কোনো  অর্ডারও নেই। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী আর দুটি ছেলে নিয়ে আজ বড় বিপদে আছি। এভাবে চললে না খেয়ে মরতে হবে।’

হিলি বাজারের দর্জি দোকানের কারিগর সুজন মিয়া বলেন, ‘লকডাউনে প্রশাসন দোকান খুলতে দেয় না।  এরপরও  সকাল বেলায় ঝাড়-ঝাটা দেওয়ার জন্য খুলেছি। কোনো অর্ডার নেই। আবার দোকানও খুলে রাখতে পারি না। সামনে ঈদ, কাজ না করলে সংসার চলাবো কী করে?’

চিন্তিত লেপতোষক দোকানের কারিগর সুজন মিয়া।

ফুটপাতের কারিগর আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘পেট তো আর লকডাউন মানে না। সংসারের চাহিদা মেটাতে হবে। তাই প্রতিদিন সকালে লকডাউনেও আমি আমার ভ্রাম্যমাণ সেলাই মেশিন নিয়ে বাজারে বসি। ঈদ সামনে, তবে কোনো অর্ডার নেই। কৃষকরা তাদের ধান শুকানোর জন্য জাল  সেলাই করে নিচ্ছে। সারাদিন মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কামাই হচ্ছে। বাড়িতে বসে থেকে কী লাভ? দিনে ৫০/৬০ টাকা পাচ্ছি, এটাই অনেক।’

কপালে হাত দিয়ে হিলি বাজারে ফুটপাতে সেলাই মেশিন নিয়ে বসে আছেন জয়েন উদ্দিন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দোকান খোলা আর না খোলা এ কী কথা? সকাল থেকে বসে আছি, একটা লুঙ্গি বা জালও পাইনি। লকডাউন সব শেষ করলো। কাজ-কাম না করলে খাবো কী, সংসারে ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।’

/এনই/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়