ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

দাম নেই, মাঠে পচছে পৌনে ২ লাখ টন তরমুজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১১ মে ২০২২   আপডেট: ১৯:৫৪, ১২ মে ২০২২
দাম নেই, মাঠে পচছে পৌনে ২ লাখ টন তরমুজ

দাম না পাওয়ায় হতাশ খুলনা জেলার তরমুজ চাষিরা

গত বছর তরমুজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর খুলনার অনেক কৃষকই বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ দরপতনে ক্ষতিতে পড়েছেন তারা। ফলে মাঠেই পচে যাচ্ছে রসালো ফল তরমুজ। দরপতনের কারণে তরমুজ নিয়ে স্বপ্ন দেখা চাষিদের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ। বেশির ভাগ চাষি এখনো খরচের টাকা তুলতে না পারায় নিজেদের ভষিষ্যৎ ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, ভালো দাম না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত জেলার ৪০ শতাংশ জমির তরমুজ মাঠেই পড়ে আছে।

জানা গেছে, ক্ষেতে তরমুজ কিনতে ব্যবসায়ীরা না আসায় বাধ্য হয়ে গ্রীষ্মকালীন এ ফলটি নিয়ে ঢাকায় ও খুলনায় ছুটছেন কৃষকরা। কিন্তু সেখানেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না তারা। 

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, ২০২১ সালে এ জেলায় ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। লাভজনক হওয়ায় এ বছর ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছর খুলনা জেলায় প্রায় সোয়া চার লাখ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাকোপে ৭ হাজার ৬২৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৩ হাজার ৬০০, পাইকগাছায় ১ হাজার ৫১০, কয়রায় ৮৯৫, ডুমুরিয়ায় ৩৫০, রূপসায় ৫, তেরখাদায় ৩ ও ফুলতলা উপজেলায় ১ এবং খুলনা মেট্রো থানায় ১ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। ভালো দাম না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ জমির অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার টন তরমুজ মাঠেই পড়ে আছে।

দাকোপের আনন্দনগর এলাকার কৃষক বাবুল শেখ বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে তরমুজ উৎপাদনে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এখন তরমুজের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এক মাস আগেও তরমুজর দাম ছিল রমরমা। এখন দাম না পাওয়ায় তরমুজ মাঠেই ফেলে রাখতে হচ্ছে।’

একই এলাকার চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মাঠে গাছ নেই। কিন্তু বড় বড় তরমুজ পড়ে আছে। আগে বিঘাপ্রতি লাখ টাকা লাভ হলেও এখন দামই পাওয়া যাচ্ছে না। আনন্দনগর, ছোট চালনা, পানখলী, মৌখালী, তীলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে তরমুজ নষ্ট হচ্ছে। ব্যাপারী না আসায় কৃষকরাই তরমুজ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন। কিন্তু মোকামে দাম মিলছে না।

আনন্দনগর গ্রামের তরমুজ চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, ১০ বিঘা তরমুজ কেটে বসে আছি। কোথায় যাবো, কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এখন হতাশ হয়ে পড়েছি। ঢাকা নিয়ে যেতে ২৫-৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ। তরমুজের কোনো দাম নেই। যা খরচ করেছি তার চার ভাগের একভাগও দাম পাচ্ছি না।

বানিশান্তা এলাকার কৃষক উৎপল সানা বলেন, তরমুজ উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে ব্যবসায়ীরা এখন ২০ হাজার টাকাও দাম বলেন না। খুলনা শহরে নিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না। মোকামেও প্রত্যাশিত দাম মিলছে না।

কৃষক দেবাশীষ বাইন বলেন, গত বছর লাভ দেখে এ বছর ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু এবার ৭ বিঘার তরমুজ বেচে খরচ ওঠেনি। আরও চার বিঘা জমির তরমুজ মাঠেই পড়ে আছে।

বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুরের কায়েমখোলা গ্রামের চাষি মো. আসাদ গাজী বলেন, গত বছর তিন বিঘায় চাষ করে চার লাখ টাকা লাভ হওয়ায় এবার সাড়ে চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। সব মিলিয়ে সাড়ে চার বিঘায় খরচ হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। খেতে তরমুজ বিক্রি করতে না পারায় খুলনার আড়তে তরমুজ নিয়ে এসেছি। দেড় বিঘার তরমুজ মোকামে আনতে আবার খরচ হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। সেই তরমুজ গত দুই দিনে বিক্রি করতে পারিনি আমি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রমজানের শুরুতে তরমুজ লাভজনক ছিল। ঈদের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তাই কৃষকরা হতাশ হচ্ছেন।

নূরুজ্জামান/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়