ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সপ্তাহ পেরুলেও সাজার নথি পায়নি রানার পরিবার, আপিলে বিলম্ব

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১১ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ২১:০২, ১১ মার্চ ২০২৪
সপ্তাহ পেরুলেও সাজার নথি পায়নি রানার পরিবার, আপিলে বিলম্ব

দৈনিক দেশ রূপান্তরের শেরপুরের নকলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে সাত দিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হলেও আজ সোমবার (১১ মার্চ) ও  তার সাজার নথি মেলেনি। যার ফলে এখনও পর্যন্ত আপিল করতে পারেনি রানার পরিবার। 

নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন রানা। গত ৫ মার্চ আবেদনের রিসিভ কপি চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে বিশৃঙ্খলা, কাগজপত্র তছনছ ও নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রানাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ।

আরো পড়ুন:

এ ঘটনায় আপিলের উদ্দেশে সাজার আদেশের অনুলিপি পেতে শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৯টায় শেরপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসেন রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার। এ সময় রানার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য সঙ্গে ছিলেন। তবে দিনভর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ধর্না দিয়েও আদেশের অনুলিপি পাননি তিনি। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি (জেলা প্রশাসক) সাংবাদিকদের বলেন, নকলা ইউএনও কে সাজার আদেশের অনুলিপি দেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউএনও বলেন, সাজার নথি পাঠানো হয়েছে। এ খবর শুনে আইনজীবী ও রানার পরিবারের সদস্যরা আপিলের প্রস্তুতি শুরু করেন। তবে, সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও নথি আসেনি। 

এ বিষয়ে জানতে রোববার (১০ মার্চ) পৌনে ২টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আইনের বিধান অনুযায়ী তিনি (রানা) সব রকমের আইনি সুবিধা পাবেন। আপিলের জন্য সাজার নথি কেন দেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন তথ্য কমিশনার বিষয়টি অনুসন্ধানে এসেছেন। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’

এ বিষয়ে ঘটনার তদন্তে আসা তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুককে নথি না পাবার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘মামলার সাজার নথির সঙ্গে আমাদের অনুসন্ধানের সম্পর্ক নেই।’

সাজার নথি পেতে রানার পরিবারের পক্ষে করা আবেদনের কপি ঘষা-মাজা করে নথি পাওয়ার তারিখ পিছিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তাদের দাবি, গত ৭ মার্চ রানার পরিবারের পক্ষে তার স্ত্রী নকলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ বরাবর নথি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণ করে নথির কপি প্রদানের তারিখ লেখা হয় ১০ মার্চ। পরে তা ঘষা-মাজা করে ১০ মার্চকে ২০ মার্চ করা হয়। এতেই ১০ দিন পিছিয়ে যায় নথির কপি প্রাপ্তির তারিখ। এই পরিস্থিতিতে নথির অনুলিপি না পেয়ে হতাশ হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ফিরে যান রানার স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ওই ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে রোববার (১০ মার্চ) শেরপুর জেলা কারাগারে প্রায় ২ ঘণ্টা ব্যাপি দেয়া রানার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন তথ্য কমিশনার মো. শহিদুল আলম ঝিনুক। এরপর তিনি দুপুরে রানার বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী বন্যা আক্তার ও ছেলে মাহিমের সঙ্গে দেখা করে বক্তব্য নেন। এ সময় তার স্ত্রীর কাছ থেকে তথ্য আধিকার আইনে সাংবাদিক রানার করা আবেদনের দুটি কপি সংগ্রহ করেন।

পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ইউএনও’র কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর গোপনীয় সহকারী (সিএ) শিলা আক্তারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা কথা বলার পর ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ও সাজা প্রদানকারী কর্মকর্তা নকলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফের সঙ্গে কথা বলে মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করেন।

তথ্য কমিশনারের আগমনের খবর পেয়ে আগে থেকে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অফিসের কাজ ফেলে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সন্ধ্যায় তথ্য কমিশনার ইউএনও’র কক্ষ থেকে বের হলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান সমবেত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ঘিরে ধরে কথা বলতে চান। কিন্তু তথ্য কমিশনার তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

এ ব্যাপারে রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দোষ স্বীকার করেননি। এরপরও অন্যায়ভাবে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এখন আপিলের জন্য রায়ের নথি প্রয়োজন। নথি চেয়ে আবেদন করলেও নথি না দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের কি রায়ের কপি পাওয়ার অধিকার নেই? আমি আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছি। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমিটি না থাকায় ভারপ্রাপ্ত কমিটির কমান্ডের দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও। তিনি মদদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশকে মাঠে নামিয়ে মুল ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছেন।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নকলা ইউএনওর কার্যালয়ে সাংবাদিকরা বসে থেকেও সিএ শিলা আক্তার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনকে তাদের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
 

তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়