ঢাকা     বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

অবহেলিত শহিদ শামছুল হকের পরিবার, খোঁজ নেয় না কেউই

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩১ মার্চ ২০২৪  
অবহেলিত শহিদ শামছুল হকের পরিবার, খোঁজ নেয় না কেউই

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হলেও আজও অবহেলার মধ্যেই রয়ে গেছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের ফুলপুকুরিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শামছুল হকের (শামছুল হুদা) পরিবারের সদস্যরা।

দেশকে স্বাধীন করার জন্য শহিদ শামছুল হক নিজের জীবনকে উৎসর্গ করলেও তার পরিবারের সদস্যরা পাচ্ছেন না নূন্যতম সম্মানটুকু। বলতে গেলে কেউই তাদের খোঁজ রাখেন না। এমনকি বিভিন্ন জাতীয় দিসবগুলোতেও শহিদ শামছুল হকের পরিবারের সদস্যরা থাকেন উপেক্ষিত।

সবশেষ গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহিদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হলেও শহিদ শামছুল হকের পরিবারকে নূন্যতম সম্মানটুকু দেওয়া হয়নি। এমনকি শহিদ পরিবারটির কাউকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়নি। এ ঘটনায় ওই শহিদ পরিবার এবং তাদের স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শহিদ শামছুল হক ওরফে সামছুল হুদা উপজেলার ফুলপুকুরিয়া গ্রামের মীর বাড়ির প্রয়াত বন্দে আলী মীরের সন্তান। চার ভাইবোনের মধ্যে শহিদ শামছুল হক ছিলেন সবার বড়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। সে সময় দেশের মায়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়; এর আগে এটি জেলার লাকসাম উপজেলার অন্তর্গত ছিলো। লাকসাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান বলেন, শামছুল হক ভাই ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহিদ হয়েছেন তিনি। তার মরদেহ কসবায় গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। এখনো সেখানে তার নাম রয়েছে। দেশকে স্বাধীন করার জন্য শহিদ শামছুল হক নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার বিষয়টি নতুন প্রজন্মকে জানানো উচিত। এক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভূমিকা জরুরি। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেই শহিদ পরিবারটি অবহেলায় থাকা দুঃখজনক ব্যাপার।

শহিদ শামছুল হক ওরফে সামছুল হুদার ছোট বোন সৈয়দা সায়েরা খাতুন বলেন, আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার সময় আমার ভাই ছিলেন পরিপূর্ণ যুবক। ওই সময় তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের প্রধান অবলম্বন। ভাইয়ের উপার্জিত আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। ভাই শহিদ হওয়ার পর আমার বাবার পরিবারের অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। আমার ভাইয়ের কোন সন্তান নেই। স্ত্রীর পরবর্তীতে অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে।

দুঃখ প্রকাশ করে সৈয়দা সায়েরা খাতুন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর হতে চললো; কিন্তু আজও আমরা নূন্যতম সম্মানটুকু পাই না। এটা আমাদেরকে অনেক কষ্ট দেয়। যাদের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে; তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ কেউ রাখে না। তাহলে আমার ভাই কাদের জন্য জীবন দিলো?

শহিদ শামছুল হকের ছোট ভাই আলী আকবর মীর বলেন, আমাদের খবর কেউ নেয় না। ২০২১ সালে আমাদের বাড়ির সামনে আমার ভাইয়ের স্মৃতি হিসেবে একটি কবর নির্মাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ঠিকাদার আর শ্রমিকরা সেটি নির্মাণ করে চলে গেছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাউকে আজ পর্যন্ত দেখিনি।

শহিদ শামছুল হকের একমাত্র ভাতিজা আবদুর রহমান বলেন, আমি শহিদ পরিবারের সন্তান; এই পরিচয়ে আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেউ শহিদ পরিবার হিসেবে আমাদের খোঁজ নেয়নি। এমনকি স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসগুলোতেও আমাদের পরিবারের কাউকে স্মরণ করা হয় না। গত ২৬ মার্চ শহিদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সংবর্ধনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন; আমরাতো আমন্ত্রণ পাইনি। তাহলে কাকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো? আমার জানা মতে পুরো উপজেলায় মাত্র চারটি শহিদ পরিবার রয়েছে; তা-ও আমরা উপেক্ষিত।
তিনি আরও বলেন, শুধু এ বছর নয় প্রতি বছরই এমন ঘটনাই ঘটছে। আমাদের খোঁজ কেউ রাখে না। যার কারণে দেশের জন্য শহিদ শামছুল হকের ত্যাগের কথাও নতুন প্রজন্ম জানে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা বলেন, মনোহরগঞ্জ উপজেলার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল আজিজ সাহেব দেখেন। দাওয়াতে কোন সমস্যা হয়েছে কি-না, বিষয়টি আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হতে পারবো। এছাড়াও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের পরিবারের লোকজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ বলেন, শহিদ শামসুল হকের কোন ওয়ারিশ আছে কি-না বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই। যদি কোন ওয়ারিশ থাকে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তাহলে আমরা পরবর্তী সকল আয়োজনে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবো।

রুবেল/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়