ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

‘দায়িত্ব পালনেই আমাদের ঈদ আনন্দ’

সাহাব উদ্দিন, ফেনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১১, ১০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৪:৪৩, ১০ এপ্রিল ২০২৪
‘দায়িত্ব পালনেই আমাদের ঈদ আনন্দ’

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মোড় শাখার এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড শাহাবউদ্দিন

সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা শাহাবউদ্দিন গত ৫ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মোড় শাখার এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করছেন। এই সময়ে মাত্র একটি রোজার ঈদ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে করার সযোগ হয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সময় রোজা রেখে অনেকদূর হেঁটে এসে বুথে কাজ করেছি। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে। সবার ঈদ আনন্দের কথা ভেবে গত কয়েক বছর ধরে ঈদ এভাবেই কাটছে। বাড়িতে দুই ছেলে ও স্ত্রী আছে। চাইলেও তাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে পারি না। কারণে দায়িত্ব পালনই আমাদের ঈদ আনন্দ।’

গত সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে ফেনী শহরের বিভিন্ন এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিতরা নিজেদের ঈদ উদযাপনের কথা এভাবেই ব্যক্ত করেন।

বাগেরহাট থেকে ফেনীতে এসে সিটি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন মমিনুল ইসলাম। গত সাত বছর ধরে এ কাজ করেই পরিবারের ভরণপোষণ করছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে এটিএস বুথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের সুযোগ হয় না তার। এ নিয়ে শুরুর দিকে আক্ষেপ থাকলেও এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত নাসির উদ্দিন নামের অপর এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, মানুষজন নিজ প্রয়োজনে টাকা তোলেন এটিএম বুথে এসে। প্রতিদিন চোখের সামনে হাজার হাজার টাকা গ্রাহকদের তুলতে দেখি। আমার কাজ এখানে বুথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাধ্যের মধ্যেই সবকিছু করতে হয়। সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করি। তেরো হাজার টাকা বেতন পাই। এবারও টাকা পেয়ে চাঁদপুর থাকা পরিবারকে ঈদের কেনাকাটার জন্য পাঠিয়েছি। ঈদে যেতে না পারলেও পরবর্তী ছুটি পেলে বাড়ি যাব। ঈদ আনন্দ এখানে ডিউটি পালনেই।

শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজ করছেন মাহবুবুল হক। পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করলেও ঈদ পালনের সুযোগ হয় না। ইচ্ছে থাকলেও পেটের দায়ে বাড়ি যেতে পারি না। ঈদের দিনেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিউটি করতে হবে। পরিবারের ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়িতে বেতনের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে ৬ বছর এভাবেই যাচ্ছে। শুরুতে খারাপ লাগলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি।’ 

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এই বুথে আমরা তিনজন কাজ করি। যেকোনো একজন ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ ছিল। সেখান থেকে একজন চলে যাওয়ায় আমার যাওয়া হয়নি। ঈদের পরে যাব। তবে বাড়িতে বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। যেতে পারলে ভালো লাগতো। এখানেই আমাদের ঈদ আনন্দ।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ব্যাংকের বুথে কাজ করলেও তাদের কোম্পানির মাধ্যমে অফিস নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমাদের সঙ্গে তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। সেজন্য তাদের ছুটির বিষয়ে আমাদেরও কিছু করার সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহযোগিতা করি। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। 

সাহাব/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়