ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কক্সবাজারে ৯ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড, তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১১:৪১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কক্সবাজারে ৯ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড, তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল

২০১৫ সালে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৬৭ মিলিমিটার। ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে গত তিন দিনে সমুদ্র শহরে ৬৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পর্যটন শহরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে, গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে জেলার শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ শহরের কয়েকটি সড়ক ও ৫০টির বেশি উপসড়ক। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোন কলাতলীর সব সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা ও মার্কেট পানিতে তলিয়ে গেছে। কলাতলী সড়কের দুই পাশের পাঁচ শতাধিক হোটেলে যাতায়াতের ২০টি উপসড়কও ডুবেছে। এতে কয়েক হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষে সময় কাটাচ্ছেন।

এছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাচা মিয়ার ঘোনা, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা ও পাহাড়তলী এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, টানা বৃষ্টিতে হোটেল-মোটেল জোন পানিতে সয়লাব হয়েছে। লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী সড়ক, সকল উপসড়ক, সৈকতের ছাতা মার্কেট, বার্মিজ মার্কেট, শুটকি মার্কেটসহ সবখানে পানি ঢুকেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরও ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ অচল হয়ে যাবেন।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমা সরওয়ার টিপু বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে পাহাড়তলীর তিনটি সড়ক ডুবে কয়েকশ ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে তিনটি সেতু।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতে টেকনাফ ও উখিয়ার অন্তত ৮০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের ১০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এতে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা সাইফুল বশর বলেন, টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের ভেতর হাঁটু সমান পানি। এতে বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি কষ্ট হচ্ছে।

টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়ক ও উপসড়ক তলিয়ে গেলেও কক্সবাজার থেকে দূরপাল্লার যান ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল বারি ইবনে জলিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, কক্সবাজারে অতিবৃষ্টি হলেও রেলপথে কোনো সমস্যা হয়নি। পর্যটন শহর থেকে সব ধরনের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে বিমান ওঠা-নামায় একটু দেরি হচ্ছে। তবে বিমান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ২০১৫ সালে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৬৭ মিলিমিটার। কিন্তু গত তিন দিনে সমুদ্র শহরে ৬৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর ৩৭৮ মিলিমিটার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২২৫ মিলিমিটার ও ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

কেআই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়