ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪  
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি

আত্রাইয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেন

নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদে কর্মরত কামাল হোসেন ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীবকে বাবা এবং চাচি সানোয়ারা খাতুনকে মা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শেষে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলা করেছে। জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা ও মায়ের পরিবর্তে কামাল হোসেন তার চাচা ও চাচির নামই ব্যবহার করেন। এ পরিচয়ে তিনি কোটা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হন।

আরো পড়ুন:

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কামাল হোসেনের জন্মদাতা বাবা আবুল কাশেম ও গর্ভধারিণী মা মোছা. হাবীয়া খাতুন। তার সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সমস্ত কাগজপত্রে বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীব এবং মায়ের নাম সানোয়ারা খাতুন লিখেছেন।

কামাল হোসেনের প্রতারণার বিষয়টি গ্রামের সবাই জানেন। তিনি ও তাদের পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পাননি। 

স্থানীয় বাবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য চাচাকে বাবা বানানো হয়। কয়েক বছর আগে জমি-সংক্রান্ত একটি ঝামেলার কারণে কামাল হোসেনের জালিয়াতির বিষয় ফাঁস হয়ে যায়। এলাকার মানুষ জানতে পারে, কামাল হোসেন মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এরপর থেকে বিষয়টি গ্রামের আলোচনার সৃষ্টি করে।

কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াকালীন বাবার নাম হিসেবে জন্মদাতা আবুল কাশেমের নাম ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে একই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে তিনি তার আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে বাবা ও মা সাজিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন এবং এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন।

কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মিন্টু। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন একটি গণমাধ্যমকে মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, কামাল হোসেনের জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে বাবা ও মায়ের নামের স্থলে চাচা ও চাচির নামই উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি এ পরিচয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি গ্রহণ করেছেন। আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, কামাল হোসেনের দুদকে মামলা হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দোষী হলে তিনি শাস্তি পাবেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কামাল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। কামাল হোসেনের জন্মদাতা আবুল কাশেমের ও আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়